ঢাকা ১১:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

বসুন্ধরা চেয়ারম্যানপুত্রদের সম্পত্তির খোঁজে যুক্তরাজ্যে দুদকের চিঠি

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৭:১৬:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
  • / 262
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের দুই ছেলে—গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান (সানভীর) ও ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহানের যুক্তরাজ্যে পাচার করা সম্পদের তথ্য সে দেশে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।

সোমবার (১৫ জুন ২০২৫) রাজধানীতে দুদক কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “আজ আমরা আরও কয়েকটি সম্পত্তির তথ্য যুক্তরাজ্যে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে রয়েছে আকবর সোবহান সাহেবের দুই ছেলে, সাফিয়াত ও সাফওয়ানের কিছু সম্পত্তির তথ্য।”

আহমেদ আকবর সোবহান, তার স্ত্রী ও সন্তানদের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি, জমি দখল, ঋণের অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ স্থানান্তরসহ মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে অনুসন্ধান করছে দুদক। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের তলবও করা হয়েছে।

এ ছাড়া সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি ও এনআরবিসি কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আদনান ইমামের কিছু সম্পত্তির তথ্যও লন্ডনে পাঠানো হয়েছে বলে জানান দুদক চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি, এসব প্রচেষ্টার সুফল আমরা অচিরেই পাব।”

দুদকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) সম্প্রতি সাইফুজ্জামান জাবেদের বিদেশি সম্পদ জব্দের সিদ্ধান্ত জানায়।

এর আগে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান ও তার চাচাতো ভাই আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের যুক্তরাজ্যে থাকা সম্পদও জব্দ করে এনসিএ।

বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে গতি আনতেই সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে লন্ডন সফর করেন দুদক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। সোমবারের ব্রিফিংয়ে সেই সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন আবদুল মোমেন।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও আমি আমাদের নির্ধারিত কর্মসূচিতে লন্ডন যাই। সে সময় প্রধান উপদেষ্টাও সেখানে ছিলেন, ফলে সফর একসাথে হয়েছে। তবে আমাদের প্রোগ্রাম ছিল আলাদা। আমরা আগেই পরিকল্পনা করেছিলাম যে, এনসিএ ও আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন সংস্থার (ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন কোঅর্ডিনেশন সেন্টার) সঙ্গে বৈঠক করব।

“বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ও সম্পদের একটি প্রাথমিক তালিকা এবং আদালতের আদেশ যুক্ত করে আমরা সেগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জমা দিয়েছি। এনসিএ অত্যন্ত কার্যকরভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছে। সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদের পাচারকৃত অর্থে কেনা সম্পদ তারা জব্দ করেছে। আমরা তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের লন্ডনে থাকার সময়ই সম্পদ জব্দের আদেশ হয়। আমরা জাবেদ সাহেবের ৫৮০টি বাড়ির খোঁজ পেয়েছি, যার মধ্যে ৩৪৩টি যুক্তরাজ্যে, ২২৮টি সংযুক্ত আরব আমিরাতে এবং ৯টি যুক্তরাষ্ট্রে। শুধু যুক্তরাজ্যের ৩৪৩টি বাড়ির আনুমানিক মূল্য ৭৩.১৫ মিলিয়ন পাউন্ড, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০২৫ কোটি টাকা। এনসিএ ইতোমধ্যে এই সম্পদ ফ্রিজ করেছে।”

“এছাড়া প্রায় ২৫ লাখ ডলারের সমপরিমাণ ব্যাংক আমানতও (প্রায় ৩৫ কোটি টাকা) ফ্রিজ করা হয়েছে। অন্য দেশগুলোতেও সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে, সেখানে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”

যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ একাধিক দেশে ‘মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট’ পাঠানো হয়েছে বলে জানান দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, “সৌভাগ্যক্রমে যুক্তরাজ্য আমাদের অনুরোধে দ্রুত সাড়া দিয়েছে।”

লন্ডন সফরে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন সংস্থাগুলোর সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কাঠামো তৈরির চেষ্টার কথাও তুলে ধরেন মোমেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এখনো এই ধরনের অনুসন্ধানে পুরোপুরি অভিজ্ঞ নয়। এনসিএ আমাদের প্রশিক্ষণ দিতে রাজি হয়েছে এবং ইতোমধ্যে একজন বিদেশি প্রশিক্ষক কাজ শুরু করেছেন।”

তিনি জানান, “বাংলাদেশ ব্যাংকও এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে। গভর্নর নিজেই লন্ডনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।”

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “একটি সূক্ষ্ম বিষয় হচ্ছে—জব্দ করা সম্পদ ফেরত আনতে হলে আমাদের দাবি সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শুধু আমাদের আদালতের আদেশ যথেষ্ট নয়, যুক্তরাজ্যের আদালতেরও সম্মতি লাগবে।”

তিনি আরও বলেন, “জাবেদ সাহেব ছাড়াও আমরা আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছি। শেষ পর্যন্ত মামলাগুলো দুদক থেকেই পরিচালিত হবে। বিএফআইইউ’র সঙ্গেও সমন্বয় করে আমরা কাজ করছি।”

যারা পাচারকারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অর্থ ফেরত আনার কথা বলেন, সে বিষয়ে তিনি বলেন, “দুদকের মামলাগুলো কম্পাউন্ডেবল নয়, তাই কোনো আপস বা সমঝোতার সুযোগ নেই। সেগুলো ফৌজদারি মামলা।”

দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, “পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া সহজ নয়। এখন পর্যন্ত যতটুকু ফিরিয়ে আনা গেছে, সেটির তুলনায় ব্যয়ও কম নয়। যদি আইনগতভাবে প্রমাণ করা যায়, তাহলে কিছু অর্থ ফেরত পাওয়া সম্ভব।”

তিনি বলেন, “আমরা আগের সরকারের সময়ও ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদের বিরুদ্ধেও যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসে, আমরা তদন্ত করব। রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে কাউকে অভিযুক্ত করা হবে না।”

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “প্রমাণ ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। আদালতের রায় বিদেশে পাঠালেই হবে না। কিভাবে অর্থ পাচার হয়েছে, কোন ব্যাংকে গেছে বা কোন সম্পদে রূপান্তর হয়েছে—সব বিস্তারিত জানাতে হবে।”

তিনি আরও জানান, “কিছু সম্পদ কেম্যান আইল্যান্ডেও গেছে, যা আমরা এখনও অনুসরণ করতে পারিনি।”

ভারতে অবস্থান করা আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যয়ের উৎস সম্পর্কে প্রশ্নে তিনি বলেন, “২০১১ সালে ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে, সেটি কাজে লাগিয়ে অপরাধীদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে।”

আওয়ামী লীগ সরকারের তিনজন মন্ত্রীর লন্ডনে অবস্থান এবং তাদের বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মোমেন বলেন, “আমরা সরকারি পর্যায়ে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে তদন্ত করছি। কারণ অনেক সময় এটা মানি লন্ডারিংয়ে সহায়ক হয়।”

দুদকসহ চারটি সংস্থা পাচার হওয়া অর্থ নিয়ে কাজ করছে, এতে সমন্বয়হীনতা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা দুদকের দৃষ্টিকোণ থেকে তেমন সমন্বয়হীনতা দেখছি না, তবে সমন্বয় থাকা প্রয়োজন।”

তিনি আরও বলেন, “অনেকেই বিদেশ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে দেশে সম্পত্তি বিক্রি করছেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।”

“অভিযোগ যাচাইয়ে রাজনৈতিক পক্ষপাত থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে। আমরা চাই সব পক্ষের সহযোগিতা, তথ্যদাতারাও আমাদের অংশীদার। যদি শেখ হাসিনা বা তার পরিবারের বিরুদ্ধেও প্রমাণসহ অভিযোগ আসে, আমরা সেটি বিবেচনা করব। সীমাবদ্ধতা থাকলেও আমরা থেমে থাকব না।”

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বসুন্ধরা চেয়ারম্যানপুত্রদের সম্পত্তির খোঁজে যুক্তরাজ্যে দুদকের চিঠি

আপডেট সময় : ০৭:১৬:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের দুই ছেলে—গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান (সানভীর) ও ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহানের যুক্তরাজ্যে পাচার করা সম্পদের তথ্য সে দেশে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।

সোমবার (১৫ জুন ২০২৫) রাজধানীতে দুদক কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, “আজ আমরা আরও কয়েকটি সম্পত্তির তথ্য যুক্তরাজ্যে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে রয়েছে আকবর সোবহান সাহেবের দুই ছেলে, সাফিয়াত ও সাফওয়ানের কিছু সম্পত্তির তথ্য।”

আহমেদ আকবর সোবহান, তার স্ত্রী ও সন্তানদের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি, জমি দখল, ঋণের অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ স্থানান্তরসহ মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে অনুসন্ধান করছে দুদক। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের তলবও করা হয়েছে।

এ ছাড়া সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি ও এনআরবিসি কমার্শিয়াল ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আদনান ইমামের কিছু সম্পত্তির তথ্যও লন্ডনে পাঠানো হয়েছে বলে জানান দুদক চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি, এসব প্রচেষ্টার সুফল আমরা অচিরেই পাব।”

দুদকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) সম্প্রতি সাইফুজ্জামান জাবেদের বিদেশি সম্পদ জব্দের সিদ্ধান্ত জানায়।

এর আগে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান এফ রহমান ও তার চাচাতো ভাই আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের যুক্তরাজ্যে থাকা সম্পদও জব্দ করে এনসিএ।

বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে গতি আনতেই সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে লন্ডন সফর করেন দুদক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। সোমবারের ব্রিফিংয়ে সেই সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন আবদুল মোমেন।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও আমি আমাদের নির্ধারিত কর্মসূচিতে লন্ডন যাই। সে সময় প্রধান উপদেষ্টাও সেখানে ছিলেন, ফলে সফর একসাথে হয়েছে। তবে আমাদের প্রোগ্রাম ছিল আলাদা। আমরা আগেই পরিকল্পনা করেছিলাম যে, এনসিএ ও আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন সংস্থার (ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন কোঅর্ডিনেশন সেন্টার) সঙ্গে বৈঠক করব।

“বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ও সম্পদের একটি প্রাথমিক তালিকা এবং আদালতের আদেশ যুক্ত করে আমরা সেগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জমা দিয়েছি। এনসিএ অত্যন্ত কার্যকরভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছে। সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদের পাচারকৃত অর্থে কেনা সম্পদ তারা জব্দ করেছে। আমরা তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের লন্ডনে থাকার সময়ই সম্পদ জব্দের আদেশ হয়। আমরা জাবেদ সাহেবের ৫৮০টি বাড়ির খোঁজ পেয়েছি, যার মধ্যে ৩৪৩টি যুক্তরাজ্যে, ২২৮টি সংযুক্ত আরব আমিরাতে এবং ৯টি যুক্তরাষ্ট্রে। শুধু যুক্তরাজ্যের ৩৪৩টি বাড়ির আনুমানিক মূল্য ৭৩.১৫ মিলিয়ন পাউন্ড, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০২৫ কোটি টাকা। এনসিএ ইতোমধ্যে এই সম্পদ ফ্রিজ করেছে।”

“এছাড়া প্রায় ২৫ লাখ ডলারের সমপরিমাণ ব্যাংক আমানতও (প্রায় ৩৫ কোটি টাকা) ফ্রিজ করা হয়েছে। অন্য দেশগুলোতেও সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়া গেছে, সেখানে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”

যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ একাধিক দেশে ‘মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট’ পাঠানো হয়েছে বলে জানান দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, “সৌভাগ্যক্রমে যুক্তরাজ্য আমাদের অনুরোধে দ্রুত সাড়া দিয়েছে।”

লন্ডন সফরে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন সংস্থাগুলোর সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কাঠামো তৈরির চেষ্টার কথাও তুলে ধরেন মোমেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এখনো এই ধরনের অনুসন্ধানে পুরোপুরি অভিজ্ঞ নয়। এনসিএ আমাদের প্রশিক্ষণ দিতে রাজি হয়েছে এবং ইতোমধ্যে একজন বিদেশি প্রশিক্ষক কাজ শুরু করেছেন।”

তিনি জানান, “বাংলাদেশ ব্যাংকও এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে। গভর্নর নিজেই লন্ডনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।”

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “একটি সূক্ষ্ম বিষয় হচ্ছে—জব্দ করা সম্পদ ফেরত আনতে হলে আমাদের দাবি সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শুধু আমাদের আদালতের আদেশ যথেষ্ট নয়, যুক্তরাজ্যের আদালতেরও সম্মতি লাগবে।”

তিনি আরও বলেন, “জাবেদ সাহেব ছাড়াও আমরা আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছি। শেষ পর্যন্ত মামলাগুলো দুদক থেকেই পরিচালিত হবে। বিএফআইইউ’র সঙ্গেও সমন্বয় করে আমরা কাজ করছি।”

যারা পাচারকারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অর্থ ফেরত আনার কথা বলেন, সে বিষয়ে তিনি বলেন, “দুদকের মামলাগুলো কম্পাউন্ডেবল নয়, তাই কোনো আপস বা সমঝোতার সুযোগ নেই। সেগুলো ফৌজদারি মামলা।”

দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, “পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া সহজ নয়। এখন পর্যন্ত যতটুকু ফিরিয়ে আনা গেছে, সেটির তুলনায় ব্যয়ও কম নয়। যদি আইনগতভাবে প্রমাণ করা যায়, তাহলে কিছু অর্থ ফেরত পাওয়া সম্ভব।”

তিনি বলেন, “আমরা আগের সরকারের সময়ও ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদের বিরুদ্ধেও যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসে, আমরা তদন্ত করব। রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে কাউকে অভিযুক্ত করা হবে না।”

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “প্রমাণ ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। আদালতের রায় বিদেশে পাঠালেই হবে না। কিভাবে অর্থ পাচার হয়েছে, কোন ব্যাংকে গেছে বা কোন সম্পদে রূপান্তর হয়েছে—সব বিস্তারিত জানাতে হবে।”

তিনি আরও জানান, “কিছু সম্পদ কেম্যান আইল্যান্ডেও গেছে, যা আমরা এখনও অনুসরণ করতে পারিনি।”

ভারতে অবস্থান করা আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যয়ের উৎস সম্পর্কে প্রশ্নে তিনি বলেন, “২০১১ সালে ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে, সেটি কাজে লাগিয়ে অপরাধীদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে।”

আওয়ামী লীগ সরকারের তিনজন মন্ত্রীর লন্ডনে অবস্থান এবং তাদের বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মোমেন বলেন, “আমরা সরকারি পর্যায়ে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে তদন্ত করছি। কারণ অনেক সময় এটা মানি লন্ডারিংয়ে সহায়ক হয়।”

দুদকসহ চারটি সংস্থা পাচার হওয়া অর্থ নিয়ে কাজ করছে, এতে সমন্বয়হীনতা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা দুদকের দৃষ্টিকোণ থেকে তেমন সমন্বয়হীনতা দেখছি না, তবে সমন্বয় থাকা প্রয়োজন।”

তিনি আরও বলেন, “অনেকেই বিদেশ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে দেশে সম্পত্তি বিক্রি করছেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।”

“অভিযোগ যাচাইয়ে রাজনৈতিক পক্ষপাত থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে। আমরা চাই সব পক্ষের সহযোগিতা, তথ্যদাতারাও আমাদের অংশীদার। যদি শেখ হাসিনা বা তার পরিবারের বিরুদ্ধেও প্রমাণসহ অভিযোগ আসে, আমরা সেটি বিবেচনা করব। সীমাবদ্ধতা থাকলেও আমরা থেমে থাকব না।”