ঢাকা ০২:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

ইসরায়েলের হামলা কি ইরানে ক্ষমতার পরিবর্তন আনবে?

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১১:৩৯:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
  • / 294
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি এক ধারাবাহিকতার অংশ। যার সূচনা হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, গাজা থেকে হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের মধ্য দিয়ে।

তার পর থেকে একের পর এক ঘটনার মাধ্যমে তেহরান ক্রমশ দুর্বল হয়েছে—বিশেষ করে সামরিক দিক থেকে—আর ইসরায়েল হয়ে উঠেছে আরও শক্তিশালী। এসব ঘটনা না ঘটলে ইরানে শুক্রবারের সরাসরি হামলাটি সম্ভব হতো না।

প্রথম উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান। এই অভিযান ছিল রক্তক্ষয়ী ও ব্যয়বহুল—ফিলিস্তিনিদের জন্য বিশেষভাবে। তবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এটি হামাসকে এতটাই নিঃশেষ করে দেয় যে, সংগঠনটি আর ইসরায়েলি নাগরিকদের জন্য বড় কোনো তাৎক্ষণিক হুমকি ছিল না।

হামাস ছিল তথাকথিত ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বা প্রতিরোধ জোটের অংশ—মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত একটি জোট, যেটি গত এক দশকে তেহরান গড়ে তোলে।

এই জোটের উদ্দেশ্য ছিল গোটা অঞ্চলে ইরানের প্রভাব বিস্তার এবং ইসরায়েলকে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে হামলা চালানো থেকে বিরত রাখা। তাই হামাসের পতন এই জোটের জন্য ছিল একটি বড় ধাক্কা।

এরপর ২০২৪ সালের এপ্রিলে ইসরায়েল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত ইরানি দূতাবাস চত্বরে বিমান হামলা চালায়, যাতে সাতজন নিহত হন। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান প্রথমবারের মতো সরাসরি ইসরায়েলে ড্রোন হামলা চালালেও তা ছিল কার্যত নিষ্প্রভ।

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা পরোক্ষ সংঘাত—প্রক্সি যুদ্ধ, গুপ্তহত্যা ও সীমান্তের বাইরে হামলার পর্যায় থেকে সরাসরি ও প্রকাশ্য সংঘাতে রূপ নেয়।

হামাস দুর্বল হয়ে পড়লে ইসরায়েলের দৃষ্টি যায় হিজবুল্লাহর দিকে—লেবাননভিত্তিক ইরান-সমর্থিত ও ‘প্রতিরোধ জোট’-এর সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ হিসেবে পরিচিত এই গোষ্ঠীটির দিকে।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েল হিজবুল্লাহর পুরো নেতৃত্বকে হত্যার দাবি করে এবং তাদের ক্ষেপণাস্ত্র মজুদের বড় অংশ ধ্বংস করে। দক্ষিণ লেবাননের হিজবুল্লাহ-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী সহজেই প্রবেশ করে, তেমন কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই। এমনকি হিজবুল্লাহ-সমর্থকরাও একে বড় পরাজয় হিসেবে মেনে নেয়।

পরবর্তীতে ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরেকটি ব্যর্থ বিমান হামলা চালায়। তার পাল্টা জবাবে ইসরায়েল ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য অংশ গুঁড়িয়ে দেয়, যার ফলে শুক্রবারের বড় হামলার পথ সুগম হয়।

এই প্রক্রিয়ার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল ছিল হিজবুল্লাহর আকস্মিক দুর্বলতা, যার ফলে তারা সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের সরকারকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়—যা ছিল তেহরানের আরেক গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। বিদ্রোহীরা সিরিয়ায় বড় ধরনের আক্রমণ চালায় এবং ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আসাদ সরকারের পতন ঘটে। এর মধ্য দিয়ে তেহরান-দামেস্ক সম্পর্কের অবসান ঘটে।

এর ফলে প্রতিরোধ জোট আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। সিরিয়ায় ইরানি প্রভাব হ্রাস পায় এবং ইসরায়েলের জন্য ইরানের অভ্যন্তরে দুর্বল লক্ষ্যে হামলা চালানো সহজ হয়।

সিরিয়া ও ইরাকে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারা বুঝে ফেলে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুখে হুমকি দেওয়া আর বাস্তব হামলার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ফলে তারা হামলা থেকে বিরত থাকে।

ফলে প্রতিরোধ জোটের একমাত্র সক্রিয় অংশ হিসেবে রয়ে যায় ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। তারা লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে এবং তেল আবিব লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে, তবে এসব আক্রমণ ইসরায়েলকে কৌশলগতভাবে তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সেই সিদ্ধান্ত—নিরাপত্তা ইস্যু প্রক্সি গোষ্ঠীদের হাতে ছেড়ে দেওয়া—এখন বড় ভুল হিসেবেই প্রতিভাত হচ্ছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে বহুদিনের পরিকল্পনা অনুযায়ী বড় আকারের হামলার প্রস্তুতি নিতে থাকেন।

তবে এপ্রিলের মধ্যে সেই হামলা চালানো সম্ভব হয়নি। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নতুন চুক্তির জন্য ৬০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন। ইসরায়েল দাবি করেছিল, ইরান তখন প্রায় পরমাণু অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। সেই সময়সীমা শেষ হয় গত সপ্তাহেই।

নেতানিয়াহু শুক্রবার ইরানিদের উদ্দেশে বলেন, তিনি আশা করেন, ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযান তাদের ‘স্বাধীনতা অর্জনের পথ’ সুগম করবে।

ইসরায়েল যদিও চায় না যে, ইরান আবার ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের আগে যেমন ছিল—যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র—তেমন হয়ে উঠুক; তবু ইসরায়েলি পরিকল্পনাকারীরা যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, তা বর্তমান ইসলামী শাসনব্যবস্থার মূলে আঘাত হানতে পারে।

কারণ, এখনো ইরানের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে রয়েছেন সেই প্রজন্মের মানুষ, যারা শাহর পতনের পরপরই বা তার আগে থেকেই রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন।

শুক্রবারের প্রথম দফার হামলায় যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের অনেকে ছিলেন উচ্চপর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তা। তারা ছিলেন ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) প্রাথমিক সদস্য, যা ১৯৮০ সালে গঠিত হয় ইসলামী শাসনব্যবস্থাকে রক্ষার জন্য। পরে এটি বিপ্লবের মতাদর্শিক শক্তিতে পরিণত হয়।

নিহতদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন ইরান-ইরাক যুদ্ধ (১৯৮০–৮১) এর অভিজ্ঞ যোদ্ধা, যা অনেক ঐতিহাসিকের মতে, বর্তমান ইরানি শাসনব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করে।

প্রথম দফার হামলায় নিহতদের মধ্যে অন্তত একজন ছিলেন পারমাণবিক বিজ্ঞানী, যিনি একসময় আইআরজিসির সদস্য ছিলেন। খামেনির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা আলি শামখানি এই হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিলেন। তিনি ১৯৭০-এর দশকে গোপন ইসলামী কর্মী হিসেবে সক্রিয় ছিলেন এবং পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন। খামেনি নিজে ১৯৮৯ সালে ক্ষমতায় এলেও তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল ১৯৬০-এর দশকে।

এই যুদ্ধের ধোঁয়া সরলে ইরান যে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত হবে, সেই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তবে যেটি অনেক বেশি সম্ভাব্য, তা হলো—যাঁরা শাহর পতনের পর বিপ্লবী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করে আসছেন, তাঁদের ক্ষমতা ভয়াবহ রকম, এমনকি চূড়ান্তভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ইসরায়েলের হামলা কি ইরানে ক্ষমতার পরিবর্তন আনবে?

আপডেট সময় : ১১:৩৯:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি এক ধারাবাহিকতার অংশ। যার সূচনা হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, গাজা থেকে হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের মধ্য দিয়ে।

তার পর থেকে একের পর এক ঘটনার মাধ্যমে তেহরান ক্রমশ দুর্বল হয়েছে—বিশেষ করে সামরিক দিক থেকে—আর ইসরায়েল হয়ে উঠেছে আরও শক্তিশালী। এসব ঘটনা না ঘটলে ইরানে শুক্রবারের সরাসরি হামলাটি সম্ভব হতো না।

প্রথম উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান। এই অভিযান ছিল রক্তক্ষয়ী ও ব্যয়বহুল—ফিলিস্তিনিদের জন্য বিশেষভাবে। তবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এটি হামাসকে এতটাই নিঃশেষ করে দেয় যে, সংগঠনটি আর ইসরায়েলি নাগরিকদের জন্য বড় কোনো তাৎক্ষণিক হুমকি ছিল না।

হামাস ছিল তথাকথিত ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বা প্রতিরোধ জোটের অংশ—মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী নিয়ে গঠিত একটি জোট, যেটি গত এক দশকে তেহরান গড়ে তোলে।

এই জোটের উদ্দেশ্য ছিল গোটা অঞ্চলে ইরানের প্রভাব বিস্তার এবং ইসরায়েলকে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে হামলা চালানো থেকে বিরত রাখা। তাই হামাসের পতন এই জোটের জন্য ছিল একটি বড় ধাক্কা।

এরপর ২০২৪ সালের এপ্রিলে ইসরায়েল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত ইরানি দূতাবাস চত্বরে বিমান হামলা চালায়, যাতে সাতজন নিহত হন। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান প্রথমবারের মতো সরাসরি ইসরায়েলে ড্রোন হামলা চালালেও তা ছিল কার্যত নিষ্প্রভ।

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা পরোক্ষ সংঘাত—প্রক্সি যুদ্ধ, গুপ্তহত্যা ও সীমান্তের বাইরে হামলার পর্যায় থেকে সরাসরি ও প্রকাশ্য সংঘাতে রূপ নেয়।

হামাস দুর্বল হয়ে পড়লে ইসরায়েলের দৃষ্টি যায় হিজবুল্লাহর দিকে—লেবাননভিত্তিক ইরান-সমর্থিত ও ‘প্রতিরোধ জোট’-এর সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ হিসেবে পরিচিত এই গোষ্ঠীটির দিকে।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েল হিজবুল্লাহর পুরো নেতৃত্বকে হত্যার দাবি করে এবং তাদের ক্ষেপণাস্ত্র মজুদের বড় অংশ ধ্বংস করে। দক্ষিণ লেবাননের হিজবুল্লাহ-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী সহজেই প্রবেশ করে, তেমন কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই। এমনকি হিজবুল্লাহ-সমর্থকরাও একে বড় পরাজয় হিসেবে মেনে নেয়।

পরবর্তীতে ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরেকটি ব্যর্থ বিমান হামলা চালায়। তার পাল্টা জবাবে ইসরায়েল ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য অংশ গুঁড়িয়ে দেয়, যার ফলে শুক্রবারের বড় হামলার পথ সুগম হয়।

এই প্রক্রিয়ার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল ছিল হিজবুল্লাহর আকস্মিক দুর্বলতা, যার ফলে তারা সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের সরকারকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়—যা ছিল তেহরানের আরেক গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। বিদ্রোহীরা সিরিয়ায় বড় ধরনের আক্রমণ চালায় এবং ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আসাদ সরকারের পতন ঘটে। এর মধ্য দিয়ে তেহরান-দামেস্ক সম্পর্কের অবসান ঘটে।

এর ফলে প্রতিরোধ জোট আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। সিরিয়ায় ইরানি প্রভাব হ্রাস পায় এবং ইসরায়েলের জন্য ইরানের অভ্যন্তরে দুর্বল লক্ষ্যে হামলা চালানো সহজ হয়।

সিরিয়া ও ইরাকে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারা বুঝে ফেলে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুখে হুমকি দেওয়া আর বাস্তব হামলার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ফলে তারা হামলা থেকে বিরত থাকে।

ফলে প্রতিরোধ জোটের একমাত্র সক্রিয় অংশ হিসেবে রয়ে যায় ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। তারা লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে এবং তেল আবিব লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে, তবে এসব আক্রমণ ইসরায়েলকে কৌশলগতভাবে তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারেনি।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সেই সিদ্ধান্ত—নিরাপত্তা ইস্যু প্রক্সি গোষ্ঠীদের হাতে ছেড়ে দেওয়া—এখন বড় ভুল হিসেবেই প্রতিভাত হচ্ছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে বহুদিনের পরিকল্পনা অনুযায়ী বড় আকারের হামলার প্রস্তুতি নিতে থাকেন।

তবে এপ্রিলের মধ্যে সেই হামলা চালানো সম্ভব হয়নি। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নতুন চুক্তির জন্য ৬০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন। ইসরায়েল দাবি করেছিল, ইরান তখন প্রায় পরমাণু অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। সেই সময়সীমা শেষ হয় গত সপ্তাহেই।

নেতানিয়াহু শুক্রবার ইরানিদের উদ্দেশে বলেন, তিনি আশা করেন, ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযান তাদের ‘স্বাধীনতা অর্জনের পথ’ সুগম করবে।

ইসরায়েল যদিও চায় না যে, ইরান আবার ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের আগে যেমন ছিল—যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র—তেমন হয়ে উঠুক; তবু ইসরায়েলি পরিকল্পনাকারীরা যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, তা বর্তমান ইসলামী শাসনব্যবস্থার মূলে আঘাত হানতে পারে।

কারণ, এখনো ইরানের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে রয়েছেন সেই প্রজন্মের মানুষ, যারা শাহর পতনের পরপরই বা তার আগে থেকেই রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন।

শুক্রবারের প্রথম দফার হামলায় যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের অনেকে ছিলেন উচ্চপর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তা। তারা ছিলেন ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) প্রাথমিক সদস্য, যা ১৯৮০ সালে গঠিত হয় ইসলামী শাসনব্যবস্থাকে রক্ষার জন্য। পরে এটি বিপ্লবের মতাদর্শিক শক্তিতে পরিণত হয়।

নিহতদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন ইরান-ইরাক যুদ্ধ (১৯৮০–৮১) এর অভিজ্ঞ যোদ্ধা, যা অনেক ঐতিহাসিকের মতে, বর্তমান ইরানি শাসনব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করে।

প্রথম দফার হামলায় নিহতদের মধ্যে অন্তত একজন ছিলেন পারমাণবিক বিজ্ঞানী, যিনি একসময় আইআরজিসির সদস্য ছিলেন। খামেনির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা আলি শামখানি এই হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিলেন। তিনি ১৯৭০-এর দশকে গোপন ইসলামী কর্মী হিসেবে সক্রিয় ছিলেন এবং পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন। খামেনি নিজে ১৯৮৯ সালে ক্ষমতায় এলেও তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল ১৯৬০-এর দশকে।

এই যুদ্ধের ধোঁয়া সরলে ইরান যে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত হবে, সেই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তবে যেটি অনেক বেশি সম্ভাব্য, তা হলো—যাঁরা শাহর পতনের পর বিপ্লবী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করে আসছেন, তাঁদের ক্ষমতা ভয়াবহ রকম, এমনকি চূড়ান্তভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।