ঢাকা ১২:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

যুদ্ধের সময় রাতেই কেন হামলা হয়?

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৯:৩৪:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫
  • / 303
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইরানের রাজধানী তেহরান যখন গভীর নিদ্রায়, ঠিক তখনই হঠাৎ আকাশজুড়ে শুরু হয় গর্জন। ইসরায়েলের হামলা নামে দেশটির পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর। জবাবে পাল্টা আঘাত হানে তেহরান, লক্ষ্যবস্তু হয় ইসরায়েল। একই রকম দৃশ্য অতীতে দেখা গেছে ভারত, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়ার উপকূল কিংবা ইরাকের সামরিক ঘাঁটিতে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—রাতেই কেন এসব হামলা চালানো হয়?

বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতে পাল্টা হামলার পেছনে রয়েছে একাধিক সামরিক, প্রযুক্তিগত ও রাজনৈতিক কৌশল।

রাতের অন্ধকার যুদ্ধের ঢাল

রাতের অন্ধকার স্বাভাবিকভাবেই একটি নিরাপদ আবরণ তৈরি করে যা আক্রমণকারী বাহিনীর জন্য কৌশলগত সুবিধা তৈরি করে দেয়। এই সময় রাডার ও দৃষ্টিনির্ভর নজরদারি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। যদিও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সচল থাকে, তবু রাতে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ তুলনামূলকভাবে কঠিন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, রাতের সময় মানুষ ঘুমিয়ে থাকায় আকস্মিক বিস্ফোরণ বা শব্দে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে।

প্রযুক্তিনির্ভর আধিপত্য

উন্নত দেশগুলো রাতের লড়াইয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেক বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে। ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান কিংবা সৌদি আরব—সবাই প্রযুক্তিগতভাবে যথেষ্ট দক্ষ। এর ফলে তারা দিনের আলোর ঝুঁকি এড়িয়ে রাতে সফলভাবে আক্রমণ চালাতে পারে।

  • নাইট ভিশন গগলস ও থার্মাল সেন্সর: অন্ধকারেও শত্রুর অবস্থান নির্ণয়ে সহায়তা করে।

  • ইলেকট্রনিক জ্যামার: শত্রুপক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।

  • স্যাটেলাইট ও ড্রোন নজরদারি: যা ২৪ ঘণ্টাই সক্রিয় থেকে অবস্থান নিশ্চিত করে।

মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব

রাতের হামলা মানেই ঘুমন্ত মানুষের মাঝে আতঙ্কের বিস্তার। এতে শুধু প্রাণহানি নয়, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয় পরিবার, শিশু ও সাধারণ জনগণ। একটি ‘অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্রের’ অনুভূতি তৈরি হয় যা আতঙ্কের চেয়েও গভীর। মাঝরাতে হামলার ফলে প্রতিপক্ষের সেনাবাহিনী সংগঠিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে না। এই ভয়কে কাজে লাগিয়ে অনেক সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও হাসিল করা হয়।

মিডিয়া ব্যবস্থাপনা ও বার্তা পৌঁছানো

রাতের আক্রমণ মানেই সকালে ‘ব্রেকিং নিউজ’। এটি একটি কূটনৈতিক ও গণমাধ্যম-কেন্দ্রিক কৌশলও বটে। আক্রমণকারী রাষ্ট্র চাইলে নিজের ভাষ্য আগে প্রচার করতে পারে, ভোরবেলা সংবাদমাধ্যমে বার্তা দিয়ে হামলাকে ‘ন্যায়সঙ্গত প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে তুলে ধরতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার গতিবিধিও এতে বোঝা যায়, প্রয়োজন হলে হামলা মাঝপথে থামিয়ে দেওয়ারও সুযোগ থাকে। ইরান ও ইসরায়েল সম্প্রতি এই কৌশল একাধিকবার প্রয়োগ করেছে।

রাজনৈতিক ইঙ্গিত

সবসময় রাতের হামলা শুধুই সামরিক কৌশল নয়, কখনও কখনও তা একটি রাজনৈতিক বার্তাও বহন করে। অনেক সময় সরকার চায় হামলার সময়টি এমন হোক, যখন জনমত তাদের পক্ষে রয়েছে।

যেমন ইরান একাধিকবার রাতের হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের ‘ভেতরের দুর্বলতা’ সামনে আনতে চেয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েল রাতের আক্রমণের মাধ্যমে বার্তা দিতে চেয়েছে, “আমরা ঘুমাই না, আমরা প্রতিক্রিয়াশীল নই, আমরা সদা প্রস্তুত।”

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

যুদ্ধের সময় রাতেই কেন হামলা হয়?

আপডেট সময় : ০৯:৩৪:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫

ইরানের রাজধানী তেহরান যখন গভীর নিদ্রায়, ঠিক তখনই হঠাৎ আকাশজুড়ে শুরু হয় গর্জন। ইসরায়েলের হামলা নামে দেশটির পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর। জবাবে পাল্টা আঘাত হানে তেহরান, লক্ষ্যবস্তু হয় ইসরায়েল। একই রকম দৃশ্য অতীতে দেখা গেছে ভারত, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়ার উপকূল কিংবা ইরাকের সামরিক ঘাঁটিতে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—রাতেই কেন এসব হামলা চালানো হয়?

বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতে পাল্টা হামলার পেছনে রয়েছে একাধিক সামরিক, প্রযুক্তিগত ও রাজনৈতিক কৌশল।

রাতের অন্ধকার যুদ্ধের ঢাল

রাতের অন্ধকার স্বাভাবিকভাবেই একটি নিরাপদ আবরণ তৈরি করে যা আক্রমণকারী বাহিনীর জন্য কৌশলগত সুবিধা তৈরি করে দেয়। এই সময় রাডার ও দৃষ্টিনির্ভর নজরদারি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। যদিও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সচল থাকে, তবু রাতে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ তুলনামূলকভাবে কঠিন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, রাতের সময় মানুষ ঘুমিয়ে থাকায় আকস্মিক বিস্ফোরণ বা শব্দে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে।

প্রযুক্তিনির্ভর আধিপত্য

উন্নত দেশগুলো রাতের লড়াইয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেক বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে। ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান কিংবা সৌদি আরব—সবাই প্রযুক্তিগতভাবে যথেষ্ট দক্ষ। এর ফলে তারা দিনের আলোর ঝুঁকি এড়িয়ে রাতে সফলভাবে আক্রমণ চালাতে পারে।

  • নাইট ভিশন গগলস ও থার্মাল সেন্সর: অন্ধকারেও শত্রুর অবস্থান নির্ণয়ে সহায়তা করে।

  • ইলেকট্রনিক জ্যামার: শত্রুপক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।

  • স্যাটেলাইট ও ড্রোন নজরদারি: যা ২৪ ঘণ্টাই সক্রিয় থেকে অবস্থান নিশ্চিত করে।

মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব

রাতের হামলা মানেই ঘুমন্ত মানুষের মাঝে আতঙ্কের বিস্তার। এতে শুধু প্রাণহানি নয়, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয় পরিবার, শিশু ও সাধারণ জনগণ। একটি ‘অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্রের’ অনুভূতি তৈরি হয় যা আতঙ্কের চেয়েও গভীর। মাঝরাতে হামলার ফলে প্রতিপক্ষের সেনাবাহিনী সংগঠিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে না। এই ভয়কে কাজে লাগিয়ে অনেক সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও হাসিল করা হয়।

মিডিয়া ব্যবস্থাপনা ও বার্তা পৌঁছানো

রাতের আক্রমণ মানেই সকালে ‘ব্রেকিং নিউজ’। এটি একটি কূটনৈতিক ও গণমাধ্যম-কেন্দ্রিক কৌশলও বটে। আক্রমণকারী রাষ্ট্র চাইলে নিজের ভাষ্য আগে প্রচার করতে পারে, ভোরবেলা সংবাদমাধ্যমে বার্তা দিয়ে হামলাকে ‘ন্যায়সঙ্গত প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে তুলে ধরতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার গতিবিধিও এতে বোঝা যায়, প্রয়োজন হলে হামলা মাঝপথে থামিয়ে দেওয়ারও সুযোগ থাকে। ইরান ও ইসরায়েল সম্প্রতি এই কৌশল একাধিকবার প্রয়োগ করেছে।

রাজনৈতিক ইঙ্গিত

সবসময় রাতের হামলা শুধুই সামরিক কৌশল নয়, কখনও কখনও তা একটি রাজনৈতিক বার্তাও বহন করে। অনেক সময় সরকার চায় হামলার সময়টি এমন হোক, যখন জনমত তাদের পক্ষে রয়েছে।

যেমন ইরান একাধিকবার রাতের হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের ‘ভেতরের দুর্বলতা’ সামনে আনতে চেয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েল রাতের আক্রমণের মাধ্যমে বার্তা দিতে চেয়েছে, “আমরা ঘুমাই না, আমরা প্রতিক্রিয়াশীল নই, আমরা সদা প্রস্তুত।”