বিসিবি সভাপতি ফারুককে ‘অপসারণ’, টিকলেন না ১০ মাসও
- আপডেট সময় : ১২:৩৩:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
- / 354

বোর্ডের অর্থ দুর্বল ব্যাংকে স্থানান্তর, বিপিএলে ফ্রাঞ্চাইজি ও টেন্ডারবাজি নিয়ে বিতর্কের মধ্যে ১০ মাস যেতে না যেতেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-বিসিবি সভাপতির পদ হারাতে হলো ফারুক আহমেদকে। বৃহস্পতিবার (২৯ মে ২০২৫) রাতে তাকে অপসারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) যুগ্মসচিব আমিনুল ইসলামের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিবৃতিতে ফারুকের মনোনয়ন বাতিলের ব্যাপারে বলা হয়, “৮ জন পরিচালক অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করায় এবং বিপিএল সংক্রান্তে গঠিত সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার প্রয়োজনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ২১ আগস্ট বিসিবির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন ফারুক, যিনি এক সময় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর ক্রিকেট বোর্ডে নতুন যুগের সূচনার অঙ্গীকার করেছিলেন তিনি। কিন্তু একের পর এক বিতর্ক, অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে থাকে তার বিরুদ্ধে।
ফলে অক্টোবরে বিসিবির নির্বাচনের আগেই শেষ হয়ে গেল ফারুক অধ্যায়। পদত্যাগের পর তাকে ফোন দেওয়া হলে, তিনি কথা বলার অবস্থায় নেই বলে জানিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে, তিনি পরে জানাবেন বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করেন।
৮ পরিচালকের অনাস্থা
বুধবার সভাপতি ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপন করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন আট পরিচালক। এই পরিচালকদের মধ্যে প্রথম নামটিই হলো, ফারুক আহমেদের সঙ্গে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে কাউন্সিলরশিপ নিয়ে আসা নাজমুল আবেদিন ফাহিম। বাকি সাতজন হলেন, মোহাম্মদ সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরী, মাহবুবউল আলম, মোহাম্মদ মঞ্জুর আলম, ফাহিম সিনহা, ইফতেখার রহমান মিঠু, কাজী ইনাম আহমেদ ও সালাউদ্দিন চৌধুরী।
শুধুমাত্র একজন পরিচালক ফারুকের পক্ষে ছিলেন। তিনি হলেন আকরাম খান। তিন পৃষ্ঠার চিঠিতে নিজেদের অনাস্থা ও ফারুকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেছেন পরিচালকরা।
পদত্যাগের পরামর্শ
পরিচালকদের অনাস্থা জ্ঞাপনের দিনই বিসিবিপ্রধানকে পদত্যাগের কথা জানিয়ে দেয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। বুধবার রাতে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার বাসভবনে ডাকা হয় ফারুক আহমেদকে। সেখানে সব ব্যর্থতা আর বিতর্ক তুলে ধরে পদত্যাগের জন্য বলা হয়। মন্ত্রণালয় ও এনএসসি থেকে জানিয়ে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়—ফারুককে ক্রিকেট বোর্ডের শীর্ষ পদে চাননা তারা।
পদত্যাগের পরামর্শে ফারুকের ‘না’
ক্রীড়া উপদেষ্টার পদত্যাগের পরামর্শে আপত্তি জানান ফারুক। ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে বোর্ড থেকে সরে যেতে নারাজ ছিলেন তিনি। দুইপক্ষের বনিবনা হওয়ার পর বুধবার রাতে অমিমাংসিত থেকে যায় বৈঠক। ফারুক আহমেদ মন্ত্রণালয় থেকে দুই-একদিন সময় চান। পরিবার ও কাছের মানুষদের সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবেন বলে জানান সাবেক এই ক্রিকেটার।
গল্পের অন্য মোড়
বৈঠকের ২৪ ঘণ্টা না যেতেই ফারুকের আপত্তির ব্যাপার আরও স্পষ্ট হয়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পদত্যাগ না করতে চাওয়া ও আইনি সাহায্য নেওয়ার কথা জানান তিনি। যার ফলশ্রুতিতে এনএসসি থেকেই আসে মনোনায়ন বাতিলের খবর।
ব্যর্থতা আর বিতর্কে শেষ হলো ফারুক অধ্যায়
গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাউন্সিলরশিপ নিয়ে বিসিবিতে আসেন ফারুক আহমেদ। পূর্বের বোর্ডপ্রাধান নাজমুল হোসেন পাপনের অনুপস্থিতিতে ফারুককে বিসিবিপ্রধান হিসেবে মনোনীত করে পর্যালোচনা পর্ষদ। সব নিয়মনীতি মেনেই সেবার সভাপতির চেয়ার বসেন ফারুক আহমেদ।
কিন্তু দায়িত্ব নেবার পর থেকে একে একে নানা বিতর্কে জড়িয়েছে ফারুকের নাম। বিশেষ করে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) আয়োজনকে কেন্দ্র করেই ঝামেলার শুরু। এরপর বিসিবির ফান্ড ট্রান্সফার থেকে টেন্ডারবাজিসহ বোর্ডে নানা অসঙ্গতি নিয়েও প্রশ্ন ওঠে ফারুকের বিরুদ্ধে। তাছাড়া সব পরিচালকদের অভিযোগ ছিল, সব বিভাগে ফারুকের অযথা হস্থক্ষেপ নিয়ে। ফারুকের অধীনে মাঠের ক্রিকেটেও যাচ্ছেতাই অবস্থা। সব মিলিয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় নাখোশ বিসিবিপ্রধানের ওপর। ফলে ১০ মাসের মধ্যেই শেষ হলো ফারুক অধ্যায়।
সভাপতি হিসেবে নতুন নাম
এদিকে ক্রিকেট বোর্ডে নতুন সভাপতি হওয়ার জন্য আরেক সাবেক ক্রিকেটার আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে প্রস্তাব দিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। সেই প্রস্তাবে সাড়াও দিয়েছেন আমিনুল। এনএসসি থেকে মনোনায়ন পেয়ে বোর্ডে আসতে পারেন অস্ট্রেলিয়ায় বাস করা আমিনুল ইসলাম।
৬ এপ্রিল আমিনুল ইসলাম অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফেরার পরপরই তার সভাপতি হওয়ার গুঞ্জন জোরালোভাবে শুরু হয়। তবে তিনি দেশে পরিবার নিয়ে এসেছেন ব্যক্তিগত কাজে। সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে তাকে বিসিবি প্রধান হিসেবে আসার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। আমিনুলও সেই প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে আমিনুল বলেছেন, “হ্যাঁ (ক্রীড়া পরিষদ থেকে আমাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে)। উনাদের কথা দেওয়ার আগে আমি যেখানে চাকরি করি সেখানে মানে আইসিসির (আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল) সঙ্গে কথা বলার ব্যাপার ছিল। আমি বলেছি, আইসিসির কোনো আপত্তি নেই।”
“আমি অল্প সময়ের জন্য আসব, তারপর হয়তো আইসিসিতেই ফিরে যাব। এটি কোনো ছুটি না, আমি তো তখন আর বেতন নেব না আইসিসি থেকে। বেতন পরিত্যাগ করব। দেশকে সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত”, যোগ করেন আমিনুল।
যে উপায়ে আসবেন নতুন সভাপতি
আমিনুল ইসলামকে বোর্ড সভাপতি নির্বাচিত করার আগে কাউন্সিলরশিপ দিতে হবে। যেহেতু ফারুক আহমেদের কাউন্সিলরশিপ বাতিল সেহেতু এনএসি থেকে নতুন কাউন্সিলরশিপ নিয়ে বিসিবি পরিচালক হিসেবে আসবেন আমিনুল। এরপর বাকি ৯জন পরিচালকের মাধ্যমে পর্যলোচনা পরিষদের ভোট পেয়ে বিসিবির নতুন সভাপতির চেয়ারে বসবেন দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান।


















