ঢাকা ০৪:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
আরও পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা ইসলামে পারিবারিক নির্যাতনের কোনো স্থান নেই-শায়খ আব্দুল কাইয়ুম লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না

বিএনপির তারুণ্যের শোডাউন, নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই হতে হবে : তারেক

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০১:৫২:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
  • / 218
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে মন্তব্য করে আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। এজন্য দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার (২৮ মে ২০২৫) ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির তিন সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিচ্ছিলেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, “আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মনে হয় এরই ভেতরে টালবাহানা শুরু হয়েছে বা চলছে। কথিত অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কারের অভিনব শর্তের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যত। এরই ভেতরে জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, সংস্কার নিয়ে সময়ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে ও বাইরে কারও কারও মনে হয় কিছু ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।”

সমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, “গণতন্ত্রকামী ও গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিপক্ষ বানাবেন না। আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চাইলে পদত্যাগ করে এসে নির্বাচন করুন। নির্বাচনে জনগণের রায় পেলে সরকারের দায়িত্ব পালন করুন।”

নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান পুঁজি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তাই তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে ও আমাদের পরামর্শ থাকবে- জনগণের বিশ্বাস ও ভালোবাসা নষ্ট হয় অন্তবর্তী সরকারের এমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না।”

তারেক রহমান আরও বলেন, ‘‘একই সাথে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই- গণতন্ত্রকামী জনগণ এবং গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে দয়া করে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। যদি আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চায় তাহলে সরকার থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে আসুন। নির্বাচন করুন। যদি ভবিষ্যতে নির্বাচনে জনগণের রায় পান তাহলে আবার সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করুন।”

তিনি বলেন, তিন কোটি ভোটার নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়নি। সংস্কার ইস্যুর পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের দৃশ্যমান প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।

তারেক রহমান বলেন, “অতীতে বিভিন্ন সময় এই বাংলাদেশে তত্ত্ববাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেছে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি- তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যে সফলভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছে। সুতরাং অতীতে বাংলাদেশেই রেকর্ড আছে তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা সম্ভব। কিন্তু কিন্তু আজ আমরা দেখছি ১০ মাস পার হয়ে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করছে না।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের সরাসরি ভোটে, জনগণের কাছ জবাবদিহিমূলক, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি সরকার দ্রুত দেখতে চাই।”

এসময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দৃঢ়কণ্ঠে তিনি বলেন, “আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। আবারও আমরা বলতে চাই, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “কারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, কারা আপনাদের প্রতিনিধি হবে- জাতীয় নির্বাচনে আপনারাই ভোট দিয়ে আপনাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন।”

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনকালে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচন নিয়েই দেশে-বিদেশে প্রশ্ন উঠেছিল। তার মধ্যে দুটি নির্বাচনে অধিকাংশ দলই বর্জন করে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। সেই সরকারের বছর না গড়াতেই নির্বাচন নিয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বরাবরই বলে আসছেন, রাষ্ট্র কাঠামোয় ন্যূনতম সংস্কার হলে আগামী ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন হতে পারে, ব্যাপক সংস্কার হলে তা পিছিয়ে আগামী বছরের জুনে যেতে পারে।

বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইলেও এক্ষেত্রে জামায়াত ইসলামী সরকারকে আরও সময় দিতে চায়। সংস্কারের ওপর জোর দেওয়া অভ্যুত্থানকারীদের গড়া দল এনসিপি চায় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন।

সম্প্রতি বিএনপি উপদেষ্টা পরিষদ থেকে অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এর পাল্টায় এনসিপি তিন উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সালেহ উদ্দিন আহমদ ও আসিফ নজরুলকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

সমাবেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা দেখেছি- তারা কীভাবে আদালতকে অবজ্ঞা করেছে, আদালতের রায়কে অবজ্ঞা করেছে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, পলাতক স্বৈরাচারের পরে যেই সরকারের কাছে দেশের মানুষ আশা করেছিল যে, আইনের প্রতি সম্মান থাকবে। আমরা দেখেছি- আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে, যারা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছে, সেই স্বৈরাচারের যে একই ঘটনা সেটির পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে পাচ্ছি।”

এ সময় প্রশ্ন রেখে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় না, যারা আদালতের নির্দেশকে অবজ্ঞা করে তাদের কাছ থেকে আমরা কতটুকু সংস্কার আশা করতে পারি?

তিনি বলেন, “ইশরাকের ক্ষমতা গ্রহণে বা শপথ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে আজ আমরা আবারও স্বৈরাচারী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাচ্ছি।”

গত বৃহস্পতিবার বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের রোডম্যাপ ঘোষণা না হলে তারা সরকারকে আর সহযোগিতা করবে না। তার একদিন আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও সেনানিবাসে এক সভায় ডিসেম্বরে নির্বাচনের ওপর জোর দেন। এদিকে অভ্যুত্থানকারীদের গড়া দল এনসিপি সংস্কার ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের আগে নির্বাচনের পক্ষপাতি নয়।

রাজনৈতিক অঙ্গনে মতভেদের মধ্যে ড. ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার রাতে তার সঙ্গে দেখা করে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানান, সার্বিক পরিস্থিতিতে অসন্তুষ্ট ড. ইউনূস পদত্যাগের কথা ভাবছেন। এরপর থেকে সারাদেশে মানুষের মধ্যে চলছে নানা ধরনের আলোচনা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও দেখা দেয়।

তবে শনিবার ড. ইউনূসের নেতৃত্বে এক বৈঠকের পর উপদেষ্টা পরিষদের জ্যেষ্ঠতম সদস্য ওয়াহিদউদ্দি মাহমুদ সেই গুঞ্জন উড়িয়ে দেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ড. ইউনুস প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকছেন।

জাপান সফররত প্রধান উপদেষ্টা বুধবারও ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

সভার সভাপতিত্ব করেন যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না। সঞ্চালনায় ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন।

বাসস জানিয়েছে, তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঢাকা, ফরিদপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের সমন্বয়ে ‘তারুণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’-এ যোগ দিতে সমাবেশ স্থলে যোগ দেন হাজার-হাজার নেতাকর্মী।

সমাবেশস্থলসহ আশপাশ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পল্টন মোড় থেকে কাকরাইল, শান্তিনগর থেকে কাকরাইল, মালিবাগ মোড়, রমনা থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে হাজার-হাজার নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছেন। সমাবেশস্থল ছাপিয়ে আশেপাশের পাইওনিয়ার রোড, কালভার্ড রোড, ফকিরাপুল রোড, পুলিশ হাসপাতালের সামনের সড়ক, পুরানা পল্টন ও বিজয়নগরের বিভিন্ন অলি গলি ও রাস্তাতেও নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা যায়।

সমাবেশে অনেকেই হাতে দলীয় পতাকা, দলীয় নেতাদের ছবি, ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে হাজির হন। কারো-কারো মাথায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা দেখা যায়। কেউ কেউ নেচে-গেয়ে নানান স্লোগান দিচ্ছেন। তারা সবুজ, হলুদ ও লাল রঙের ক্যাপ ও টি শার্ট পরে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। সমাবেশে বিএনপির পুরুষ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের অনেক নারী নেতাকর্মীদেরও দেখা যায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বিএনপির তারুণ্যের শোডাউন, নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই হতে হবে : তারেক

আপডেট সময় : ০১:৫২:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে মন্তব্য করে আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। এজন্য দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

বুধবার (২৮ মে ২০২৫) ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির তিন সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘তারুণ্যের সমাবেশে’ লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিচ্ছিলেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, “আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মনে হয় এরই ভেতরে টালবাহানা শুরু হয়েছে বা চলছে। কথিত অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কারের অভিনব শর্তের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যত। এরই ভেতরে জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, সংস্কার নিয়ে সময়ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে ও বাইরে কারও কারও মনে হয় কিছু ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।”

সমাবেশে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, “গণতন্ত্রকামী ও গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিপক্ষ বানাবেন না। আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চাইলে পদত্যাগ করে এসে নির্বাচন করুন। নির্বাচনে জনগণের রায় পেলে সরকারের দায়িত্ব পালন করুন।”

নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান পুঁজি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তাই তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে ও আমাদের পরামর্শ থাকবে- জনগণের বিশ্বাস ও ভালোবাসা নষ্ট হয় অন্তবর্তী সরকারের এমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না।”

তারেক রহমান আরও বলেন, ‘‘একই সাথে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই- গণতন্ত্রকামী জনগণ এবং গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে দয়া করে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। যদি আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চায় তাহলে সরকার থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে আসুন। নির্বাচন করুন। যদি ভবিষ্যতে নির্বাচনে জনগণের রায় পান তাহলে আবার সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করুন।”

তিনি বলেন, তিন কোটি ভোটার নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়নি। সংস্কার ইস্যুর পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের দৃশ্যমান প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।

তারেক রহমান বলেন, “অতীতে বিভিন্ন সময় এই বাংলাদেশে তত্ত্ববাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেছে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি- তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যে সফলভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছে। সুতরাং অতীতে বাংলাদেশেই রেকর্ড আছে তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা সম্ভব। কিন্তু কিন্তু আজ আমরা দেখছি ১০ মাস পার হয়ে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করছে না।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের সরাসরি ভোটে, জনগণের কাছ জবাবদিহিমূলক, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি সরকার দ্রুত দেখতে চাই।”

এসময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দৃঢ়কণ্ঠে তিনি বলেন, “আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। আবারও আমরা বলতে চাই, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দলীয় নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “কারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, কারা আপনাদের প্রতিনিধি হবে- জাতীয় নির্বাচনে আপনারাই ভোট দিয়ে আপনাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন।”

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনকালে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচন নিয়েই দেশে-বিদেশে প্রশ্ন উঠেছিল। তার মধ্যে দুটি নির্বাচনে অধিকাংশ দলই বর্জন করে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। সেই সরকারের বছর না গড়াতেই নির্বাচন নিয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বরাবরই বলে আসছেন, রাষ্ট্র কাঠামোয় ন্যূনতম সংস্কার হলে আগামী ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন হতে পারে, ব্যাপক সংস্কার হলে তা পিছিয়ে আগামী বছরের জুনে যেতে পারে।

বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইলেও এক্ষেত্রে জামায়াত ইসলামী সরকারকে আরও সময় দিতে চায়। সংস্কারের ওপর জোর দেওয়া অভ্যুত্থানকারীদের গড়া দল এনসিপি চায় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন।

সম্প্রতি বিএনপি উপদেষ্টা পরিষদ থেকে অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এর পাল্টায় এনসিপি তিন উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সালেহ উদ্দিন আহমদ ও আসিফ নজরুলকে বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

সমাবেশে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা দেখেছি- তারা কীভাবে আদালতকে অবজ্ঞা করেছে, আদালতের রায়কে অবজ্ঞা করেছে। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, পলাতক স্বৈরাচারের পরে যেই সরকারের কাছে দেশের মানুষ আশা করেছিল যে, আইনের প্রতি সম্মান থাকবে। আমরা দেখেছি- আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে, যারা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছে, সেই স্বৈরাচারের যে একই ঘটনা সেটির পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে পাচ্ছি।”

এ সময় প্রশ্ন রেখে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় না, যারা আদালতের নির্দেশকে অবজ্ঞা করে তাদের কাছ থেকে আমরা কতটুকু সংস্কার আশা করতে পারি?

তিনি বলেন, “ইশরাকের ক্ষমতা গ্রহণে বা শপথ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে আজ আমরা আবারও স্বৈরাচারী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাচ্ছি।”

গত বৃহস্পতিবার বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের রোডম্যাপ ঘোষণা না হলে তারা সরকারকে আর সহযোগিতা করবে না। তার একদিন আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও সেনানিবাসে এক সভায় ডিসেম্বরে নির্বাচনের ওপর জোর দেন। এদিকে অভ্যুত্থানকারীদের গড়া দল এনসিপি সংস্কার ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের আগে নির্বাচনের পক্ষপাতি নয়।

রাজনৈতিক অঙ্গনে মতভেদের মধ্যে ড. ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার রাতে তার সঙ্গে দেখা করে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানান, সার্বিক পরিস্থিতিতে অসন্তুষ্ট ড. ইউনূস পদত্যাগের কথা ভাবছেন। এরপর থেকে সারাদেশে মানুষের মধ্যে চলছে নানা ধরনের আলোচনা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও দেখা দেয়।

তবে শনিবার ড. ইউনূসের নেতৃত্বে এক বৈঠকের পর উপদেষ্টা পরিষদের জ্যেষ্ঠতম সদস্য ওয়াহিদউদ্দি মাহমুদ সেই গুঞ্জন উড়িয়ে দেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ড. ইউনুস প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকছেন।

জাপান সফররত প্রধান উপদেষ্টা বুধবারও ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

সভার সভাপতিত্ব করেন যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না। সঞ্চালনায় ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন।

বাসস জানিয়েছে, তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঢাকা, ফরিদপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের সমন্বয়ে ‘তারুণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’-এ যোগ দিতে সমাবেশ স্থলে যোগ দেন হাজার-হাজার নেতাকর্মী।

সমাবেশস্থলসহ আশপাশ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পল্টন মোড় থেকে কাকরাইল, শান্তিনগর থেকে কাকরাইল, মালিবাগ মোড়, রমনা থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে হাজার-হাজার নেতাকর্মীরা জড়ো হয়েছেন। সমাবেশস্থল ছাপিয়ে আশেপাশের পাইওনিয়ার রোড, কালভার্ড রোড, ফকিরাপুল রোড, পুলিশ হাসপাতালের সামনের সড়ক, পুরানা পল্টন ও বিজয়নগরের বিভিন্ন অলি গলি ও রাস্তাতেও নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা যায়।

সমাবেশে অনেকেই হাতে দলীয় পতাকা, দলীয় নেতাদের ছবি, ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে হাজির হন। কারো-কারো মাথায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা দেখা যায়। কেউ কেউ নেচে-গেয়ে নানান স্লোগান দিচ্ছেন। তারা সবুজ, হলুদ ও লাল রঙের ক্যাপ ও টি শার্ট পরে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। সমাবেশে বিএনপির পুরুষ নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের অনেক নারী নেতাকর্মীদেরও দেখা যায়।