সৌদি আরবের বাসায় ২ বাংলাদেশি ভাইয়ের লাশ, পরিবারের দাবি ‘হ/ত্যা’
- আপডেট সময় : ১০:৫৪:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
- / 373

সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের একটি ফ্ল্যাট থেকে দুই বাংলাদেশি তরুণের লাশ উদ্ধার করেছে স্থানীয় পুলিশ। বুধবার (২১ মে ২০২৫) ওই শহরের একটি বাসা থেকে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহতরা হলেন কামরুজ্জামান কাকন (২৬) ও কামরুল ইসলাম সাগর (২২)। তারা গাজীপুরের উত্তর ভুরুলিয়ার আদর্শপাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. মোশারফ হোসেন লম্বরির ছেলে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, কামরুজ্জামান কাকন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করার পর চাকরির খোঁজে ছিলেন।
ঢাকার নয়া পল্টনের সামিয়া ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক বাহার উদ্দিন ২১ লাখ টাকার চুক্তিতে কাকনকে জব ভিসায় কানাডা পাঠানোর প্রস্তাব দেন মোশারফ হোসেনকে। মোশারফ ৩ লাখ টাকা দেওয়ার পরও কাকনকে কানাডা পাঠানো হয়নি। এরপর বাহার উদ্দিন ছোট ছেলে কামরুল ইসলাম সাগরকে ভালো বেতনে সৌদি আরব পাঠানোর প্রস্তাব দেন এবং এর জন্য ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেন। গত অক্টোবরে সাগর সৌদি আরবে যান। তবে সেখানে পৌঁছানোর পর কাজ না দিয়ে তাকে দাম্মামের একটি ঘরে আটকে রেখে আরও ৪ লাখ টাকা দাবি করা হয় বলে পরিবারের অভিযোগ।
সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবে মোশারফ হোসেন সেই অর্থও পরিশোধ করেন। কিন্তু তাতেও সন্তোষজনক চাকরি না দিয়ে সাগরকে ‘হান্গার এস্টেশন’ নামে একটি খাবার সরবরাহ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এদিকে, বড় ছেলেকে কানাডা পাঠাতে দেওয়া ৩ লাখ টাকা ফেরত চাইলে বাহার উদ্দিন দুই ভাইকে মদিনা ইউনিভার্সিটিতে উচ্চ বেতনের চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব দেন। এরপর নতুন করে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে গত ৪ ডিসেম্বর কাকনকে সৌদি আরবে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে পৌঁছে দুই ভাইকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়।
ঘটনার পর মোশারফ হোসেনকে নিয়ে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরবে যাওয়ার প্রস্তাব দেন বাহার উদ্দিন। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তারা সৌদি আরবে যান।
মোশারফ হোসেন জানান, ছেলেদের কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, খাবার সরবরাহের কাজ দেওয়া হয়েছে, ঠিকমতো খাবারও দেওয়া হয় না, রাখা হয়েছে একটি ছোট ঘরে।
২২ ডিসেম্বর মোশারফ দেশে ফিরলেও বাহার ছেলেদের কাগজপত্র ঠিক করার কথা বলে সৌদিতে থেকে যান।
মোশারফের ভাষ্য, দেশে ফেরার সময় বাহার তাকে একটি পলিথিন মোড়ানো ব্যাগ দিয়ে ঢাকায় পৌঁছে দিতে বলেন। তিনি ব্যাগের ভিতরের বিষয়বস্তু দেখেননি।
পরে সৌদি বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের তল্লাশিতে একটি ছোট থলে পাওয়া যায়, যা তারা রেখে দেয় এবং তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন বাহারও দেশে ফিরে এসে সেই থলেটি ফেরত চান।
মোশারফ বলেন, “আমি জানালে যে ইমিগ্রেশন পুলিশ থলেটি রেখে দিয়েছে, তখন সে দাবি করে থলেটিতে ১৩ লাখ টাকার সোনা ছিল এবং টাকা ফেরত দিতে চাপ দিতে থাকে। এমনকি হুমকিও দেয় যে, টাকা না দিলে সৌদিতে থাকা আমার ছেলেদের ক্ষতি করবে।”
তিনি জানান, এরপর নগরীর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সর্বশেষ ৯ মে ঢাকা থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে একদল দুর্বৃত্ত অস্ত্র নিয়ে তাকে খুঁজতে আসে। তাকে না পেয়ে তার বৃদ্ধ বাবা আবুল কাশেম লম্বরিকে তুলে নিয়ে যায় এবং দুই ছেলেকে হ/ত্যার হুমকি দেয়। পরে ৯৯৯-এ ফোন করলে সদর থানা পুলিশ আবুল কাশেমকে উদ্ধার করে।
মোশারফ হোসেন বলেন, “আমার দুই ছেলেই ছিল ভবিষ্যতের ভরসা। তাদের বিদেশ পাঠানোর স্বপ্নই এখন আমাদের পরিবারের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
তিনি আরও জানান, বুধবার রাত ১২টার পর এক বাংলাদেশি ফোন করে দুই ছেলের মরদেহ উদ্ধারের খবর দেন। পরে সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে দুই ভাই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন।
“দুপুরের পর ফ্ল্যাটের দরজার নিচ দিয়ে রক্ত বের হতে দেখে মালিক পুলিশে খবর দেন। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ মঞ্জু নামের এক বাংলাদেশিকে শনাক্ত করেছে।”
মোশারফ হোসেনের দাবি, তার দুই ছেলেকে হ/ত্যায় বাহার উদ্দিনই মূল পরিকল্পনাকারী এবং এই মঞ্জুকেই দিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তিনি সন্তানদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।


















