ঢাকা ০৫:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

বানু মুশতাক পেলেন বুকার পুরস্কার

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১২:৪৮:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
  • / 551
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চলতি বছরের আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার পেয়েছেন ভারতীয় লেখক, আইনজীবী ও অধিকারকর্মী বানু মুশতাক। তাঁর লেখা ছোটগল্পের সংকলন হার্ট ল্যাম্প–এর জন্য গতকাল মঙ্গলবার তাঁকে এ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, লন্ডনের টেট মডার্ন গ্যালারিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বানু মুশতাক এ পুরস্কার গ্রহণ করেন। পুরস্কার গ্রহণ করে তিনি বলেন, “এ সম্মান আমি ব্যক্তি হিসেবে নয়, বরং এমন এক কণ্ঠস্বর হিসেবে গ্রহণ করছি, যা আরও বহু কণ্ঠের সঙ্গে মিলিত হয়ে উচ্চারিত হয়েছে।”

৭৭ বছর বয়সী বানু মুশতাক লেখালেখি করেন কান্নাড়া ভাষায়। এই ভাষার কোনো লেখক হিসেবে তিনিই প্রথম আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার অর্জন করলেন। ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কর্ণাটক রাজ্যের বাসিন্দা বানু মুশতাক নারী অধিকার রক্ষা ও বৈষম্যবিরোধী আইনি লড়াইয়ে সুপরিচিত।

হার্ট ল্যাম্প–এর ইংরেজি অনুবাদ করেছেন দীপা ভাস্তি। গল্প নির্বাচনেও তিনি লেখককে সহযোগিতা করেছেন। সংকলনে অন্তর্ভুক্ত ১২টি গল্প ১৯৯০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫০ হাজার পাউন্ড (প্রায় ৬৭ হাজার ডলার) অর্থমূল্যের এ পুরস্কার বানু মুশতাক অনুবাদক দীপা ভাস্তির সঙ্গে সমানভাবে ভাগ করে নেবেন।

বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি ম্যাক্স পোর্টার বইটিকে ইংরেজি পাঠকদের জন্য “সত্যিকারের নতুন কিছু” বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “এটি এক বিপ্লবাত্মক অনুবাদ, যা ভাষার গতি ও ধারা বদলে দেয়, ইংরেজির বিভিন্ন রূপে নতুন মাত্রা ও স্পর্শ যুক্ত করে। এটি অনুবাদের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে এবং বিস্তৃত করে।”

জুরি বোর্ডের অন্য সদস্যদের মতে, বইয়ের গল্পগুলো দক্ষিণ ভারতের মুসলিম সমাজের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার বাস্তবচিত্র তুলে ধরে। বিশেষ করে নারী ও কিশোরীদের অভিজ্ঞতা এতে গুরুত্ব পেয়েছে।

পুরস্কার গ্রহণের সময় বানু মুশতাক বলেন, “আমার গল্পগুলোর কেন্দ্রে রয়েছেন নারীরা। ধর্ম, সমাজ ও রাজনীতি কীভাবে তাঁদের কাছ থেকে নিঃশর্ত আনুগত্য দাবি করে এবং এর ফলে তাঁরা কীভাবে নিষ্ঠুরতার শিকার হন—সেসবই আমি গল্পে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।”

দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকের বাসিন্দা এই লেখিকা একই সঙ্গে একজন আইনজীবী ও অ্যাক্টিভিস্ট। মিজ মুশতাক কর্নাটকের একটি ছোট শহরের মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় বড় হয়েছেন। অন্য প্রতিবেশীদের মতোই তিনি স্কুলে উর্দুতে কুরআন পড়তে শিখেছিলেন। কিন্তু তার সরকারি কর্মচারী বাবা চাইতেন তাকে উচ্চশিক্ষিত করে তুলতে। তাই আট বছর বয়সে মিজ মুশতাককে ভর্তি করা হয় কন্নড় মাধ্যম স্কুলে। তার বয়সী অন্য মেয়েদের যখন বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, তারা সন্তানের জন্ম দিচ্ছে, তখন মিজ মুশতাকস্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হচ্ছেন।

নিজের পছন্দ করা পুরুষটিকেই তিনি ২৬ বছর বয়সে বিয়ে করেন। বিয়ের বছর খানেক পরে তার প্রথম ছোট গল্প ছাপা হয় একটি স্থানীয় পত্রিকায়। ভালবেসে বিয়ে করলেও শ্বশুরবাড়িতে তাকে বোরখা পড়তে বাধ্য করা হত, ঘরের কাজ করতে বলা হত।

জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে মিজ মুশতাক একবার নিজের গায়ে পেট্রল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তার নিজের কথায়, “আমার স্বামী কিছু একটা আন্দাজ করে জড়িয়ে ধরেন, দেশলাইয়ের বাক্সটা নিয়ে নেন। আমাদের সন্তানকে পায়ের কাছে রেখে কাতর ভাবে বলেছিলেন, আমাদের ছেড়ে যেও না।“

মিজ মুশতাকের লেখার ব্যাপারে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্র একবার লিখেছিল, ”মূলধারা ভারতীয় সাহিত্যে মুসলমান নারীদের আসলে একটা রূপক হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে – যারা হয় নিঃশব্দে সহ্য করে যায় অথবা ব্যঙ্গ শুনতে হয়। মিজ মুশতাকের লেখা এই দুই ধরনের চরিত্রকেই বর্জন করে। তার চরিত্রগুলি মানিয়ে চলে, কখনও আলোচনা করে এগোতে চায়, কখনও আবার বিদ্রোহ করে বসে। তবে সেগুলো এমন চরিত্র না, যারা সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়ে উঠতে পারে,” লিখেছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

লেখালেখির জন্য বানু মুশতাকের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি হয়েছিল এবং একবার এক ব্যক্তি চাকু দিয়ে আক্রমণও করেছিল। তবে তার স্বামী তখন তাকে বাঁচান। “ধর্মের পুরুষতান্ত্রিক ব্যাখ্যাকে আমি এক নাগাড়ে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এসেছি। এগুলোই আমার লেখার মূল বিষয়,” দ্য উইক পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন মিজ মুশতাক।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বানু মুশতাক পেলেন বুকার পুরস্কার

আপডেট সময় : ১২:৪৮:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

চলতি বছরের আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার পেয়েছেন ভারতীয় লেখক, আইনজীবী ও অধিকারকর্মী বানু মুশতাক। তাঁর লেখা ছোটগল্পের সংকলন হার্ট ল্যাম্প–এর জন্য গতকাল মঙ্গলবার তাঁকে এ মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, লন্ডনের টেট মডার্ন গ্যালারিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বানু মুশতাক এ পুরস্কার গ্রহণ করেন। পুরস্কার গ্রহণ করে তিনি বলেন, “এ সম্মান আমি ব্যক্তি হিসেবে নয়, বরং এমন এক কণ্ঠস্বর হিসেবে গ্রহণ করছি, যা আরও বহু কণ্ঠের সঙ্গে মিলিত হয়ে উচ্চারিত হয়েছে।”

৭৭ বছর বয়সী বানু মুশতাক লেখালেখি করেন কান্নাড়া ভাষায়। এই ভাষার কোনো লেখক হিসেবে তিনিই প্রথম আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কার অর্জন করলেন। ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কর্ণাটক রাজ্যের বাসিন্দা বানু মুশতাক নারী অধিকার রক্ষা ও বৈষম্যবিরোধী আইনি লড়াইয়ে সুপরিচিত।

হার্ট ল্যাম্প–এর ইংরেজি অনুবাদ করেছেন দীপা ভাস্তি। গল্প নির্বাচনেও তিনি লেখককে সহযোগিতা করেছেন। সংকলনে অন্তর্ভুক্ত ১২টি গল্প ১৯৯০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫০ হাজার পাউন্ড (প্রায় ৬৭ হাজার ডলার) অর্থমূল্যের এ পুরস্কার বানু মুশতাক অনুবাদক দীপা ভাস্তির সঙ্গে সমানভাবে ভাগ করে নেবেন।

বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি ম্যাক্স পোর্টার বইটিকে ইংরেজি পাঠকদের জন্য “সত্যিকারের নতুন কিছু” বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “এটি এক বিপ্লবাত্মক অনুবাদ, যা ভাষার গতি ও ধারা বদলে দেয়, ইংরেজির বিভিন্ন রূপে নতুন মাত্রা ও স্পর্শ যুক্ত করে। এটি অনুবাদের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে এবং বিস্তৃত করে।”

জুরি বোর্ডের অন্য সদস্যদের মতে, বইয়ের গল্পগুলো দক্ষিণ ভারতের মুসলিম সমাজের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার বাস্তবচিত্র তুলে ধরে। বিশেষ করে নারী ও কিশোরীদের অভিজ্ঞতা এতে গুরুত্ব পেয়েছে।

পুরস্কার গ্রহণের সময় বানু মুশতাক বলেন, “আমার গল্পগুলোর কেন্দ্রে রয়েছেন নারীরা। ধর্ম, সমাজ ও রাজনীতি কীভাবে তাঁদের কাছ থেকে নিঃশর্ত আনুগত্য দাবি করে এবং এর ফলে তাঁরা কীভাবে নিষ্ঠুরতার শিকার হন—সেসবই আমি গল্পে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।”

দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকের বাসিন্দা এই লেখিকা একই সঙ্গে একজন আইনজীবী ও অ্যাক্টিভিস্ট। মিজ মুশতাক কর্নাটকের একটি ছোট শহরের মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় বড় হয়েছেন। অন্য প্রতিবেশীদের মতোই তিনি স্কুলে উর্দুতে কুরআন পড়তে শিখেছিলেন। কিন্তু তার সরকারি কর্মচারী বাবা চাইতেন তাকে উচ্চশিক্ষিত করে তুলতে। তাই আট বছর বয়সে মিজ মুশতাককে ভর্তি করা হয় কন্নড় মাধ্যম স্কুলে। তার বয়সী অন্য মেয়েদের যখন বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, তারা সন্তানের জন্ম দিচ্ছে, তখন মিজ মুশতাকস্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হচ্ছেন।

নিজের পছন্দ করা পুরুষটিকেই তিনি ২৬ বছর বয়সে বিয়ে করেন। বিয়ের বছর খানেক পরে তার প্রথম ছোট গল্প ছাপা হয় একটি স্থানীয় পত্রিকায়। ভালবেসে বিয়ে করলেও শ্বশুরবাড়িতে তাকে বোরখা পড়তে বাধ্য করা হত, ঘরের কাজ করতে বলা হত।

জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে মিজ মুশতাক একবার নিজের গায়ে পেট্রল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তার নিজের কথায়, “আমার স্বামী কিছু একটা আন্দাজ করে জড়িয়ে ধরেন, দেশলাইয়ের বাক্সটা নিয়ে নেন। আমাদের সন্তানকে পায়ের কাছে রেখে কাতর ভাবে বলেছিলেন, আমাদের ছেড়ে যেও না।“

মিজ মুশতাকের লেখার ব্যাপারে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্র একবার লিখেছিল, ”মূলধারা ভারতীয় সাহিত্যে মুসলমান নারীদের আসলে একটা রূপক হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে – যারা হয় নিঃশব্দে সহ্য করে যায় অথবা ব্যঙ্গ শুনতে হয়। মিজ মুশতাকের লেখা এই দুই ধরনের চরিত্রকেই বর্জন করে। তার চরিত্রগুলি মানিয়ে চলে, কখনও আলোচনা করে এগোতে চায়, কখনও আবার বিদ্রোহ করে বসে। তবে সেগুলো এমন চরিত্র না, যারা সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়ে উঠতে পারে,” লিখেছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

লেখালেখির জন্য বানু মুশতাকের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি হয়েছিল এবং একবার এক ব্যক্তি চাকু দিয়ে আক্রমণও করেছিল। তবে তার স্বামী তখন তাকে বাঁচান। “ধর্মের পুরুষতান্ত্রিক ব্যাখ্যাকে আমি এক নাগাড়ে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এসেছি। এগুলোই আমার লেখার মূল বিষয়,” দ্য উইক পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন মিজ মুশতাক।