ঢাকা ০৫:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
গোলাম আজম ও নিজামীকে দেশপ্রেমিক বলায় পাবনায় প্রতিবাদ মিরপুরের বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল, ঘাতকদের বিচারের দাবি জগন্নাথ হলের সড়কে ছাত্রদের আঁকা গোলাম আজমদের ছবি মুছে দিল প্রশাসন নির্বাচন বয়কট করছে না আওয়ামী লীগ সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী ঘাঁটিতে হামলা: নিহত ৬ বাংলাদেশি বিএনপি থেকে তিন দফা বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামানকে দলে নিল জামায়াত তিন দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার জরুরি বৈঠক: ‘ষড়যন্ত্রকারীরা প্রশিক্ষিত শুটার নামিয়েছে মাঠে’ ওসমান হাদির গ্রামের বাড়িতে চুরির ঘটনা হাদিকে গুলি: প্রধান সন্দেহভাজনের ছবি প্রকাশ, ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার রিকশায় থাকা হাদিকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে গুলি

সুরমা-কুশিয়ারায় বাড়ছে পানি, আপাতত বন্যার আশঙ্কা নেই

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ১২:৩৩:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
  • / 312
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সুনামগঞ্জ এবং ভারতের চেরাপুঞ্জিতে সাম্প্রতিক কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতের ফলে হাওর ও নদ-নদীতে স্বাভাবিকভাবে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও সুরমা ও কুশিয়ারা নদীসহ বেশ কয়েকটি নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে, তবে তা এখনো বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। ফলে আপাতত বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নানা তথ্য এবং পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতার কারণে সুনামগঞ্জের নদীতীরবর্তী ও হাওরাঞ্চলের মানুষ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের কৃষক ফরিদ আলী বলেন, “হাওরে ধান কাটা শেষ। এখন পানি এলেও সমস্যা নেই। কিন্তু যদি বন্যা হয়, তাহলে কষ্ট বাড়বে। ঘরে ধান তোলা হয়েছে, ঘরও ঠিক করা দরকার ছিল—কিন্তু বৃষ্টির কারণে কিছুই করতে পারছি না। পানি শুনলেই এখন ভয় লাগে।”

সুরমা নদীর তীরবর্তী বড়পাড়ার গৃহবধূ সুরেজান বিবি বলেন, “আমার ঘর নদীর একেবারে পাশে। প্রতিবছর বন্যায় পানি উঠে পড়ে। এবারও পানি বাড়ছে দেখে ভয় লাগছে। যে পরিমাণ বৃষ্টি শুরু হয়েছে, রাতে চিন্তায় ঘুম আসে না।”

তবে অনেকে মনে করছেন, এই পানি হাওরের জন্য আশীর্বাদ। কারণ বৃষ্টির পানিতে হাওরের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। শান্তিগঞ্জ উপজেলার ডুংরিয়া গ্রামের মৎস্যজীবী মুসা মিয়া বলেন, “বর্ষায় ধীরে ধীরে পানি বাড়লে আমরা মাছ ধরার জাল ও ফাঁদ তৈরি করি। এই সময়ের মাছ বিক্রি করে সংসার চালাই, অনেকে দেনা-পাওনাও মিটাই। এখন হাওরে কৈ, টেংরা, শিং, চিংড়িসহ অনেক দেশি মাছ উঠছে—যেগুলো বাজারে ভালো দামে বিক্রি হয়। তাই আমরা চাই পানি আসুক, তবে যেন তা বন্যায় পরিণত না হয়।”

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ গ্রামের ইদ্রিস মিয়া বলেন, “ফেসবুকে শুধু পানির খবরই দেখি। কিন্তু হাওরে যে পানি ঢুকছে, তা খুবই স্বাভাবিক। বরং এই পানিতেই মাছ পাব, জীবিকা চলবে।”

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, “চেরাপুঞ্জি ও সুনামগঞ্জে যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তা বর্ষাকালের স্বাভাবিক ব্যাপার। এতে নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে ঠিকই, তবে এখনো বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। হাওরে পানি ধারণের পর্যাপ্ত জায়গা আছে, হাওর পুরোপুরি ভরতে আরও ১০ থেকে ১২ দিন লাগবে।”

তিনি আরও জানান, “আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী আগামী তিন দিনের মধ্যে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব বন্যার তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, তা সঠিক নয়। আমরা নিয়মিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি, এবং পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে আগেই সতর্কতা জারি করা হবে।”

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সুরমা-কুশিয়ারায় বাড়ছে পানি, আপাতত বন্যার আশঙ্কা নেই

আপডেট সময় : ১২:৩৩:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

সুনামগঞ্জ এবং ভারতের চেরাপুঞ্জিতে সাম্প্রতিক কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতের ফলে হাওর ও নদ-নদীতে স্বাভাবিকভাবে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও সুরমা ও কুশিয়ারা নদীসহ বেশ কয়েকটি নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে, তবে তা এখনো বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। ফলে আপাতত বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া নানা তথ্য এবং পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতার কারণে সুনামগঞ্জের নদীতীরবর্তী ও হাওরাঞ্চলের মানুষ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের কৃষক ফরিদ আলী বলেন, “হাওরে ধান কাটা শেষ। এখন পানি এলেও সমস্যা নেই। কিন্তু যদি বন্যা হয়, তাহলে কষ্ট বাড়বে। ঘরে ধান তোলা হয়েছে, ঘরও ঠিক করা দরকার ছিল—কিন্তু বৃষ্টির কারণে কিছুই করতে পারছি না। পানি শুনলেই এখন ভয় লাগে।”

সুরমা নদীর তীরবর্তী বড়পাড়ার গৃহবধূ সুরেজান বিবি বলেন, “আমার ঘর নদীর একেবারে পাশে। প্রতিবছর বন্যায় পানি উঠে পড়ে। এবারও পানি বাড়ছে দেখে ভয় লাগছে। যে পরিমাণ বৃষ্টি শুরু হয়েছে, রাতে চিন্তায় ঘুম আসে না।”

তবে অনেকে মনে করছেন, এই পানি হাওরের জন্য আশীর্বাদ। কারণ বৃষ্টির পানিতে হাওরের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। শান্তিগঞ্জ উপজেলার ডুংরিয়া গ্রামের মৎস্যজীবী মুসা মিয়া বলেন, “বর্ষায় ধীরে ধীরে পানি বাড়লে আমরা মাছ ধরার জাল ও ফাঁদ তৈরি করি। এই সময়ের মাছ বিক্রি করে সংসার চালাই, অনেকে দেনা-পাওনাও মিটাই। এখন হাওরে কৈ, টেংরা, শিং, চিংড়িসহ অনেক দেশি মাছ উঠছে—যেগুলো বাজারে ভালো দামে বিক্রি হয়। তাই আমরা চাই পানি আসুক, তবে যেন তা বন্যায় পরিণত না হয়।”

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ গ্রামের ইদ্রিস মিয়া বলেন, “ফেসবুকে শুধু পানির খবরই দেখি। কিন্তু হাওরে যে পানি ঢুকছে, তা খুবই স্বাভাবিক। বরং এই পানিতেই মাছ পাব, জীবিকা চলবে।”

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, “চেরাপুঞ্জি ও সুনামগঞ্জে যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তা বর্ষাকালের স্বাভাবিক ব্যাপার। এতে নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে ঠিকই, তবে এখনো বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। হাওরে পানি ধারণের পর্যাপ্ত জায়গা আছে, হাওর পুরোপুরি ভরতে আরও ১০ থেকে ১২ দিন লাগবে।”

তিনি আরও জানান, “আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী আগামী তিন দিনের মধ্যে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব বন্যার তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, তা সঠিক নয়। আমরা নিয়মিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি, এবং পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে আগেই সতর্কতা জারি করা হবে।”