ঢাকা ০৬:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

ভারত-পাকিস্তানে যুদ্ধের দামামা: বাংলাদেশে কী করবে?

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৯:৪৭:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
  • / 354
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দক্ষিণ এশিয়ায় ফের উত্তেজনার ঝড়—এই অঞ্চলের দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। যদিও বাংলাদেশ সরাসরি এ সংঘাতে জড়িত নয়, তবুও পারিপার্শ্বিক প্রভাব থেকে পুরোপুরি নিরাপদ থাকা কঠিন। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দুই দেশকে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

সরকারের এই অবস্থানকে সমর্থন জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক স্থিতি বিনষ্ট হলে তার প্রভাব পড়বে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার ওপর। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে এমন কিছু থেকে বিরত থাকতে হবে, যা যুদ্ধপন্থী অবস্থান হিসেবে প্রতিভাত হতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, যদিও সর্বাত্মক যুদ্ধের সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না, তথাপি দুই দেশই শেষ পর্যন্ত সংঘর্ষ থেকে সরে আসবে—এমন সম্ভাবনাও রয়েছে।

কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নিতে ভারত বুধবার (৭ মে ২০২৫) প্রথম প্রহরে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর জবাবে পাকিস্তান ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গোলাবর্ষণ করে।

পাকিস্তানের তথ্যমতে, ভারতীয় হামলায় তাদের অন্তত ৩১ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তানি হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন, এমন তথ্য দিয়েছে ভারতের পুলিশ।

এ ছাড়া পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ভারতের অন্তত ছয়টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। যদিও রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে তিনটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য আসেনি।

যুদ্ধ পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ায় জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পরমাণু অস্ত্রধারী দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশের সরকারও।

একই দিন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান পরিস্থিতি বাংলাদেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং উভয় দেশকে শান্তি ও সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে আমরা আশা করি, কূটনৈতিক উপায়ে উত্তেজনা নিরসন হবে এবং অঞ্চলটির মানুষের কল্যাণের কথা মাথায় রেখেই শান্তি বজায় থাকবে।”

এ পরিস্থিতিতে দেশের সীমান্তে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় জঙ্গি বা সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশ রোধে অতিরিক্ত নজরদারির নির্দেশ দিয়েছেন বাহিনী প্রধান বাহারুল আলম।

এ ছাড়া, চলমান অস্থিরতা কাজে লাগিয়ে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সীমান্ত এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে—এমন আশঙ্কায় সীমান্ত নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

বাংলাদেশের উপর প্রভাব

ভারতের মধ্যরাতের হামলার পর সকালেই এর প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে। যুদ্ধের আতঙ্কে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই কম দামে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন, ফলে সূচক দ্রুত নিম্নমুখী হয়। দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক কমে প্রায় ১৫০ পয়েন্ট।

যুদ্ধ শুরু হলে তা বাংলাদেশের পুঁজিবাজার থেকে শুরু করে অর্থনীতির অন্যান্য খাতে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।

এদিন ভারত থেকে বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্তে ঠেলে দেয় ১২৫ জনকে, যাদেরকে বিজিবি আটক করে যাচাই-বাছাই করছে। একই সময়ে ঢাকামুখী তিনটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটকে রুট পরিবর্তন করতে হয়। ফ্লাইটগুলো কুয়েত ও তুরস্ক থেকে আসছিল।

তুরস্ক থেকে ছেড়ে আসা টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে ওমানের মাসকাটে অবতরণ করে। কুয়েত থেকে আসা জাজিরা এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট দুবাইয়ে নেওয়া হয় এবং আরেকটি ফিরে যায় কুয়েতেই।

নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা বলছেন, দুটি বড় প্রতিবেশী দেশের মধ্যে যুদ্ধ হলে অন্য দেশগুলোর উপরও বাণিজ্য, যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। দক্ষিণ এশিয়ার সাংস্কৃতিক সংযোগের কারণে সেই প্রভাব বাংলাদেশে বেশি অনুভূত হতে পারে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক শাফকাত মুনীর বলেন, “আমাদের সরাসরি ক্ষতির আশঙ্কা কম হলেও, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হলে তা আমাদের অর্থনীতিসহ অন্যান্য খাতেও আঘাত হানবে।”

তিনি আরও বলেন, “আকাশপথে ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় বিকল্প রুট ব্যবহারে খরচ বাড়ছে, ভারতীয় বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় এর প্রভাব ইতোমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে।”

বাংলাদেশ-ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত এবং ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সংঘাতের ব্যাপক প্রভাব অনিবার্য বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমদ বলেন, “বাংলাদেশ চায় না ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাক। এমনিতেই বৈশ্বিক অস্থিরতা চলছে, এর মাঝে এ সংঘাত আরও স্থিতিহীনতা তৈরি করবে। এর প্রভাব ব্যবসা-বাণিজ্য, যাতায়াত ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগেও পড়বে।”

করণীয়

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে উত্তেজনা প্রশমনে সক্রিয় কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া এবং দ্বিপাক্ষিকভাবে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখা।

বিআইপিএসএসের ফেলো শাফকাত মুনীর বলেন, “বাংলাদেশের দায়িত্ব এখন পরিস্থিতিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং উভয় দেশকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে আহ্বান জানানো। এ ছাড়া দায়িত্বশীল বক্তব্য দেওয়া জরুরি।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, “সম্প্রতি কিছু দায়িত্বহীন মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। এ ধরনের বক্তব্য ভবিষ্যতে যেন না আসে, সেটাই প্রত্যাশা।”

বিআইআইএসএসের সাবেক চেয়ারম্যান মুন্সি ফয়েজ বলেন, “যেহেতু ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে, তাই বাংলাদেশকে এমন কিছু বলা বা করা উচিত নয় যাতে ভারতকে অপ্রসন্ন করে।”

তিনি বলেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো রাখতেই হবে। এমন আচরণ করা উচিত নয়, যা ভারতের পক্ষ থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।”

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ভারত-পাকিস্তানে যুদ্ধের দামামা: বাংলাদেশে কী করবে?

আপডেট সময় : ০৯:৪৭:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫

দক্ষিণ এশিয়ায় ফের উত্তেজনার ঝড়—এই অঞ্চলের দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। যদিও বাংলাদেশ সরাসরি এ সংঘাতে জড়িত নয়, তবুও পারিপার্শ্বিক প্রভাব থেকে পুরোপুরি নিরাপদ থাকা কঠিন। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী দুই দেশকে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

সরকারের এই অবস্থানকে সমর্থন জানিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক স্থিতি বিনষ্ট হলে তার প্রভাব পড়বে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার ওপর। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে এমন কিছু থেকে বিরত থাকতে হবে, যা যুদ্ধপন্থী অবস্থান হিসেবে প্রতিভাত হতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, যদিও সর্বাত্মক যুদ্ধের সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না, তথাপি দুই দেশই শেষ পর্যন্ত সংঘর্ষ থেকে সরে আসবে—এমন সম্ভাবনাও রয়েছে।

কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নিতে ভারত বুধবার (৭ মে ২০২৫) প্রথম প্রহরে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর জবাবে পাকিস্তান ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গোলাবর্ষণ করে।

পাকিস্তানের তথ্যমতে, ভারতীয় হামলায় তাদের অন্তত ৩১ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাকিস্তানি হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন, এমন তথ্য দিয়েছে ভারতের পুলিশ।

এ ছাড়া পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ভারতের অন্তত ছয়টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। যদিও রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে তিনটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য আসেনি।

যুদ্ধ পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ায় জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পরমাণু অস্ত্রধারী দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশের সরকারও।

একই দিন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান পরিস্থিতি বাংলাদেশ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং উভয় দেশকে শান্তি ও সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি।”

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে আমরা আশা করি, কূটনৈতিক উপায়ে উত্তেজনা নিরসন হবে এবং অঞ্চলটির মানুষের কল্যাণের কথা মাথায় রেখেই শান্তি বজায় থাকবে।”

এ পরিস্থিতিতে দেশের সীমান্তে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় জঙ্গি বা সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশ রোধে অতিরিক্ত নজরদারির নির্দেশ দিয়েছেন বাহিনী প্রধান বাহারুল আলম।

এ ছাড়া, চলমান অস্থিরতা কাজে লাগিয়ে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সীমান্ত এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে—এমন আশঙ্কায় সীমান্ত নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

বাংলাদেশের উপর প্রভাব

ভারতের মধ্যরাতের হামলার পর সকালেই এর প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে। যুদ্ধের আতঙ্কে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই কম দামে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন, ফলে সূচক দ্রুত নিম্নমুখী হয়। দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক কমে প্রায় ১৫০ পয়েন্ট।

যুদ্ধ শুরু হলে তা বাংলাদেশের পুঁজিবাজার থেকে শুরু করে অর্থনীতির অন্যান্য খাতে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।

এদিন ভারত থেকে বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্তে ঠেলে দেয় ১২৫ জনকে, যাদেরকে বিজিবি আটক করে যাচাই-বাছাই করছে। একই সময়ে ঢাকামুখী তিনটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটকে রুট পরিবর্তন করতে হয়। ফ্লাইটগুলো কুয়েত ও তুরস্ক থেকে আসছিল।

তুরস্ক থেকে ছেড়ে আসা টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে ওমানের মাসকাটে অবতরণ করে। কুয়েত থেকে আসা জাজিরা এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট দুবাইয়ে নেওয়া হয় এবং আরেকটি ফিরে যায় কুয়েতেই।

নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা বলছেন, দুটি বড় প্রতিবেশী দেশের মধ্যে যুদ্ধ হলে অন্য দেশগুলোর উপরও বাণিজ্য, যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। দক্ষিণ এশিয়ার সাংস্কৃতিক সংযোগের কারণে সেই প্রভাব বাংলাদেশে বেশি অনুভূত হতে পারে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক শাফকাত মুনীর বলেন, “আমাদের সরাসরি ক্ষতির আশঙ্কা কম হলেও, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হলে তা আমাদের অর্থনীতিসহ অন্যান্য খাতেও আঘাত হানবে।”

তিনি আরও বলেন, “আকাশপথে ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় বিকল্প রুট ব্যবহারে খরচ বাড়ছে, ভারতীয় বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় এর প্রভাব ইতোমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে।”

বাংলাদেশ-ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত এবং ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সংঘাতের ব্যাপক প্রভাব অনিবার্য বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমদ বলেন, “বাংলাদেশ চায় না ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাক। এমনিতেই বৈশ্বিক অস্থিরতা চলছে, এর মাঝে এ সংঘাত আরও স্থিতিহীনতা তৈরি করবে। এর প্রভাব ব্যবসা-বাণিজ্য, যাতায়াত ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগেও পড়বে।”

করণীয়

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের উচিত হবে উত্তেজনা প্রশমনে সক্রিয় কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া এবং দ্বিপাক্ষিকভাবে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখা।

বিআইপিএসএসের ফেলো শাফকাত মুনীর বলেন, “বাংলাদেশের দায়িত্ব এখন পরিস্থিতিকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং উভয় দেশকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে আহ্বান জানানো। এ ছাড়া দায়িত্বশীল বক্তব্য দেওয়া জরুরি।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, “সম্প্রতি কিছু দায়িত্বহীন মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। এ ধরনের বক্তব্য ভবিষ্যতে যেন না আসে, সেটাই প্রত্যাশা।”

বিআইআইএসএসের সাবেক চেয়ারম্যান মুন্সি ফয়েজ বলেন, “যেহেতু ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে, তাই বাংলাদেশকে এমন কিছু বলা বা করা উচিত নয় যাতে ভারতকে অপ্রসন্ন করে।”

তিনি বলেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো রাখতেই হবে। এমন আচরণ করা উচিত নয়, যা ভারতের পক্ষ থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।”