মাগুরায় শি/শু ধ/র্ষ/ণে/র ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে সারাদেশ
- আপডেট সময় : ১২:২৩:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মার্চ ২০২৫
- / 258

মাগুরায় আট বছরের শিশুকে ধর্ষণসহ সারা দেশে নারীর প্রতি উপর্যোপরি সহিংসতার ঘটনায় প্রতিবাদে ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা দেশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে তীব্র প্রতিবাদ। আজ রবিবার (৯ মার্চ ২০২৫) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে ‘তুমি কে আমি কে-আছিয়া আছিয়া’ স্লোগানে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সকালে শিশুটিকে সিএমএমইচ এ দেখেতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নারী হয়রানি ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার (৮ মার্চ) মধ্যরাতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গঠন করা হয়েছে ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ। ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে এ ঘটনায় জড়িতদের প্রকাশ্যে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
গত বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) মাগুরা শহরে ঘটনাটি ঘটে। বোনের শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা চালানো হয়। শিশুটির অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর মেডিকেল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। শুক্রবার (৭ মার্চ) তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। শনিবার বিকেল ৫টার দিকে তাকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়েছে।
মধ্যরাতে হল থেকে বেরিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
শিশুটির এমন অবস্থার প্রতিবাদে মধ্যরাতে রাস্তায় নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে আলটিমেটাম দেন তারা। এসময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে রোববার (৯ মার্চ) রাতে ফের রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করবেন তারা। শনিবার (৮ মার্চ) দিনগত রাত আড়াইটার দিকে ছাত্রীদের পক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা এ ঘোষণা দেন। এরপর তারা দুই ঘণ্টার বেশি সময় বিক্ষোভ সমাবেশ করে রাজু ভাস্কর্য ছেড়ে আবাসিক হলে ফিরে যান।
উমামা ফাতেমা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নারীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। পুলিশ-সেনাবাহিনীসহ কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। মাগুরায় আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের মতো অমানবিক ও নৃশংস ঘটনার পরও এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধর্ষককে আদালতে উপস্থাপন করেনি। বাধ্য হয়ে আমরা মধ্যরাতে রাস্তায় নেমে এসেছি।
উমামা ফাতেমা আরও বলেন, আমাদের স্পষ্ট ঘোষণা, মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকসহ জড়িতদের অবিলম্বে আদালতে হাজির করতে হবে। আমরা ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিচ্ছি।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘ধর্ষকের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘এক দুই তিন চার, জাহাঙ্গীর গদি ছাড়’, ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চাই’, ‘জাহাঙ্গীর করে কী, খাই দাই ঘুমায় নাকি’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। ধর্ষণ, যৌন হয়রানি ও নারী নিপীড়নের ঘটনার দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ’ গঠন করা হয়।
ধর্ষকদের বিচার দাবিতে মধ্যরাতে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীদের বিচারের দাবিতে মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার দিনগত রাত ৩টার দিকে তারা এ বিক্ষোভ করেন। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের জব্বারের মোড় থেকে মিছিল শুরু করে উপাচার্যের বাসভবন, কৃষি কন্যা হল ও কে আর মার্কেট প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যালিপ্যাডে এসে শেষ করেন। এতে প্রায় আড়াইশ শিক্ষার্থী অংশ নেন। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, নো মোর রেপিস্ট’, ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধইরা ধইরা বিচার কর’, ‘আমার বোনের কান্না আর না, আর না’, ‘আমার বোন ধর্ষিত কেন? ইন্টারিম জবাব চাই’, ‘ফাঁসি ফাঁসি, ফাঁসি চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘ধর্ষকের শাস্তি মৃত্যু, মৃত্য’, ‘ধর্ষকের ঠিকানা, এই বাংলাদেশে হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। মেজবাউল হক নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মাগুরায় আট বছরের শিশু বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে বোনের শ্বশুরের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়। এ ধরনের বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা-মধ্যযুগীয় কায়দায় একজন শিশুকে ধর্ষণ করা কল্পনাতীত।’
দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশুসহ ক্রমাগত ধর্ষণের বিচারের দাবিতে মধ্যরাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। শনিবার দিনগত রাত আড়াইটায় এই অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এর আগে ২টায় বিভিন্ন হল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে একটি মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীহলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এসে প্রায় ৩০ মিনিট অবরোধ করে রাখেন তারা। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘ধর্ষকদের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘হলে হলে খবর দে, ধর্ষকদের কবর দে’, ‘চব্বিশ এর বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও। ধর্ষক ও নিপীড়কদের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করে নারীসহ জনসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় ক্যাম্পাসের জোহা চত্বর থেকে শুরু হয়ে পশ্চিমপাড়া ছাত্রীদের হল প্রদক্ষিণ করে ফের জোহা চত্বরে এসে বিক্ষোভে মিলিত হন। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারীদের ওপর হওয়া দমন নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী নিশা আক্তার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করা হচ্ছে অথচ এ দেশে কি না নারীরা অরক্ষিত। যেখানে আট বছরের শিশুকে ধর্ষণ করা হচ্ছে এবং ধর্ষকের কোনো শাস্তি হচ্ছে না। রাতে আমরা টিউশন করে ফিরতে গেলে রিকশাওয়ালা আমাদের দেখে ইভটিজিং করে, বাসে আমরা হয়রানির শিকার হই, আমরা আসলে কোথাও নিরাপদ না। আমরা চাই নারীরা জেগে উঠুক এবং আমাদের ভাইয়েরা আমাদের সাহায্য করবে যাতে আমরা অনিরাপদ বোধ না করি এবং আমরা চাই ধর্ষকের একমাত্র শাস্তি হোক মৃত্যুদণ্ড।’
মামলার এজাহারে যা বলা হয়েছে
মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা করেছেন শিশুটির মা। মামলার এজাহারে তিনি অভিযোগ করেন, মেয়ের স্বামীর সহায়তায় তাঁর বাবা (শ্বশুর) শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি মেয়ের শাশুড়ি ও ভাশুর জানতেন। তাঁরা ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা চালান।
আজ শনিবার সকালে বড় বোন ও বাবাকে দিয়ে মাগুরা সদর থানায় এজাহার পাঠান শিশুটির মা। সেই অনুযায়ী বেলা তিনটার দিকে মামলা রেকর্ড হয়। মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৪)–এর ক/৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ করা হয়। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটি ঢাকায় চিকিৎসাধীন। মায়ের পাঠানো এজাহার অনুযায়ী মামলা হয়েছে। আগে থেকে হেফাজতে থাকা চার আসামিকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হচ্ছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, চার মাস আগে মাগুরা পৌর এলাকার এক তরুণের সঙ্গে শিশুটির বড় বোনের বিয়ে হয়। ওই বাড়িতে বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুর থাকতেন। বিয়ের পর থেকে বড় মেয়েকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন তাঁর শ্বশুর। বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যরা জানতেন। এ নিয়ে ঝগড়াও হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ১ মার্চ বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায় আট বছরের শিশুটি।
এজাহারে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাদী উল্লেখ করেন, গত বুধবার (৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে বড় বোন ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে একই কক্ষে ঘুমায় শিশুটি। দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বড় বোন ঘুম থেকে জেগে দেখেন, ছোট বোন পাশে নেই, মেঝেতে পড়ে আছে। তখন শিশুটি বড় বোনকে জানায়, তার যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। কিন্তু বড় বোন মনে করে, শিশুটি ঘুমের মধ্যে আবোলতাবোল বকছে। এরপর সকাল ছয়টার দিকে শিশুটি আবার বোনকে যৌনাঙ্গে জ্বালাপোড়ার কথা বলে। কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে বোনকে জানায়, রাতে দুলাভাই (বোনের স্বামী) দরজা খুলে দিলে তাঁর বাবা (শ্বশুর) তার মুখ চেপে ধরে তাঁর কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করেন। সে চিৎকার করতে গেলে তার গলা চেপে ধরা হয়। পরে তাকে আবার বোনের কক্ষের মেঝেতে ফেলে রেখে যায়।
এজাহারে আরও বলা হয়, ঘটনা জানার পর শিশুটির বড় বোন তাঁর মাকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানাতে গেলে তাঁর স্বামী মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে তাঁকে মারধর করেন। এ কথা কাউকে বললে শিশুটিকে হত্যার হুমকি দেন এবং তাদের দুই বোনকে আলাদা দুটি কক্ষে আটকে রাখেন। সকালে এক নারী প্রতিবেশী বাড়িতে এলে বোনের ভাশুর দরজা খুলে দেন। তখন শিশুটির মাথায় পানি দিয়ে সুস্থ করানোর চেষ্টা করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিশুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে বোনের শাশুড়ি অন্য প্রতিবেশীদের সহায়তায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে মেয়েটিকে জিনে ধরেছে বলে চিকিৎসকদের জানান। তবে চিকিৎসক ও অন্যরা বিষয়টি টের পেলে শাশুড়ি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। পরে বাদী হাসপাতালে যান।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, এ ঘটনায় গ্রেপ্তার শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি ও ভাশুর—কেউই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেননি। তাঁরা অসংলগ্ন ও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ায় ভুক্তভোগীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
শিশুটির বড় বোন সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০ দিনের মতো আগে আমার সঙ্গে একটা ঘটনা ঘটে। সেদিন সন্ধ্যায় বাড়িতে কেউ ছিল না। আমি ঘরে আলো জ্বালিয়ে টয়লেটে যাই। টয়লেট থেকে ফিরে দেখি ঘরে আলো বন্ধ। হঠাৎ একজন আমার পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আমি উচ্চতা ও অন্যান্য বিষয় দেখে বুঝতে পারি, সে আমার শ্বশুর। বিষয়টি আমার স্বামীকে জানালে সে উল্টো আমাকে আজেবাজে কথা বলে। আমি আমার বাড়িতেও এ কথা জানাই। বাড়িতে গিয়ে আর শ্বশুরবাড়ি ফিরতে চাইনি। কিন্তু বাড়ি থেকে আমাকে বুঝিয়ে আবার পাঠানো হয়। আমার ভেতর সব সময় ভয় কাজ করত, যদি ওই ঘটনার চেয়ে খারাপ কিছু ঘটে। এ কারণে আমার সঙ্গে আমার ছোট বোনকে পাঠায়।’ তিনি আরও বলেন, তিনি এলাকার লোকজনের কাছে শুনেছেন, এর আগেও দুইটা মেয়ের সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল তাঁর শ্বশুর।
পুলিশ ও শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, শিশুটির বাড়ি জেলার শ্রীপুর উপজেলায়। কয়েক দিন আগে বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে যান। ওই দিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গতকাল শুক্রবার রাতে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। আজ বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) পাঠানো হয়েছে।
সিএমএইচে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নারী হয়রানি ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। এপর্যন্ত নারীর প্রতি যত সহিংসতা হয়েছে সেগুলোর তালিকা করে দ্রুত তদন্ত সম্পন্নপূর্বক আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দিয়েছি।
রোববার (৯ মার্চ) সকালে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে দেখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় উপদেষ্টা শিশুটির চিকিৎসার খোঁজখবর নেন ও সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
ধর্ষণের শিকার শিশুটির সব ছবি অপসারণ করতে হাইকোর্টের নির্দেশ
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির সব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিটিআরসি কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিকভাবে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
সোমবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ স্ব-প্রণোদিতভাবে এই আদেশ দেন।


















