নাইকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ সব আসামি খালাস
- আপডেট সময় : ০৩:০৬:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / 280

সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আট জনের বিরুদ্ধে আঠার বছর আগে দায়ের করা নাইকো দুর্নীতি মামলার সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। বুধবার (১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক রবিউল আলমের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
খালেদা জিয়া বর্তমানে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে রয়েছেন। তিনি যখন ২০০১-২০০৬ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সে সময় দুর্নীতির অভিযোগ এনে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় এ মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
খালাস পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুখ্যসচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল করপোরেশনের চেয়ারম্যান সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানি, যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য আজকের তারিখ ঘোষণা করেন আদালত। এরআগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। মামলাটি ৬৮ সাক্ষীর মধ্যে ৩৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত।
মামলার পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের নাইকো মামলায় জড়ানো হয়েছিল।’
রায় ঘোষণা করতে সকাল ১১টা ২৪ মিনিটের দিকে এজলাসে ওঠেন বিচারক। এসময় তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন হতে পারে— সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে কীভাবে আসামির আত্মপক্ষ শুনানি করা হচ্ছে। ডিএলআর-এর ১৭ থেকে ২১ পর্যন্ত এই বিষয়ে বলা আছে। কোনও আসামি আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরায় থাকলে তার অনুপস্থিতিতে আত্মপক্ষ শুনানি করা যায়। আবার রায়ও দেওয়া যায়। সেই অনুযায়ী রায় দেওয়া হচ্ছে।’
পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ‘একই ধরনের মামলা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও ছিল। সেই মামলা চলেনি, তবুও এ মামলার ফুল ট্রায়াল হয়েছে। আসামি সেলিম ভূঁইয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। এরআগে তিনি চার দিনের রিমান্ডে ছিলেন। তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করা হয়। পরে অবশ্য তা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়। সেখানেও বলেছেন, তাকে শারীরিক, মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।’
মামলাটি তেজগাঁও থানার হলেও আসামি সেলিম ভূঁইয়াকে গুলশান থানায় রাখা হয়েছিল উল্লেখ করে বিচারক আরও বলেন, সেখানে নির্যাতনের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষকে ডিনাই করছে। তাদের এটা জানাও নাই। রেকর্ডে দেখা গেছে, তাকে যে রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, বর্হিবিভাগের টিকিটও আছে। তাকে বাইরে থেকে ওষুধও কিনে দেওয়া হয়, এর রশিদও আছে।
তিনি বলেন, সেলিম ভূঁইয়াকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী নেওয়া হয়েছে। সে কারণে এই ১৬৪-কে (জবানবন্দি) ট্রু বলার সুযোগ নেই। এর উদ্দেশ্য হলো— গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, কাশেম শরীফসহ অন্যদের মামলাটিতে জড়ানোর জন্যই কিন্তু জোর করে এই ১৬৪ গ্রহণ করা হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে এবং হয়রানি করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের জড়িত করা হয়েছে।’ পরে আদালত তাদের খালাসের রায় দেন।
এদিন মামলার প্রধান আসামি খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে থাকায় আদালতে হাজির হতে পারেননি। তারপক্ষে আইনজীবী হাজিরা দেন। জামিনে থাকা অপর আসামিরা আদালতে হাজির হন।
সব আসামি খালাস পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে ‘অস্বচ্ছ’ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর ১১ জনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম। পরের বছর ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। সেখানে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।
ওই ১১ জনের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান মারা যাওয়ায় মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তিন ডজনের বেশি মামলা করা হয়েছিল।
এর মধ্যে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার ১০ বছরের এবং জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় ৭ বছরেরর সাজার রায় হয়। ওই দুই মামলার রায়ে তাকে কারাগারেও যেতে হয়েছিল। ২০২০ সালের মার্চে সাজা স্থগিত করে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। গতবছর অগাস্টে আওয়ামী লীগের সরকারপতনের পর ওই দুই মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ করে তাকে পুরোপুরি মুক্তি দেন রাষ্ট্রপতি।
তবে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার জন্য সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আইনি লড়াই চালিয়ে যান। আপিল বিভাগ জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় এবং হাই কোর্ট জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাকে খালাস দেয়।
ওই দুটি মামলা ছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে মন্তব্য এবং ভুয়া জন্মদিন উদযাপনের অভিযোগে আওয়ামী লীগের আমলে দায়ের হওয়া মানহানির পাঁচ মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।


















