ঢাকা ০৯:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক
সংস্কার করবেন আপনারা, রাজনীতিকদের প্রধান উপদেষ্টা

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৫:৫৪:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / 273
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ছয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে করেছে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) বিকাল তিনটায় বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এটি কমিশনের প্রথম বৈঠক।

বৈঠকে ২৬টি রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রায় ১০০ জন রাজনীতিবিদ উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ১০ জন রাজনীতিবিদ তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন। বিএনপির পক্ষে বক্তব্য রাখেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর জামায়াতে ইসলামী থেকে বক্তব্য রাখছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস তার বক্তব্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে মন্তব্য করে বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছয় মাস শেষ হল, আমাদের প্রথম পর্ব শেষ আজকে। আমরা দ্বিতীয় পর্বে প্রবেশ করলাম। প্রথমটা ছিল প্রস্তুতি পর্ব, সেই প্রস্তুতি পর্বের অনেক কিছু আপনাদের কাছে জানা। তার মধ্যে একটা বড় বিষয় ছিল এই স্বপ্নের পিছনে যে আত্মত্যাগ, আমরা যেন এমন একটা দেশ করতে পারি, যেটা সুশৃঙ্খলভাবে চলবে।”
তিনি বলেন, “যে আইনি কাঠামোর মাধ্যেমে যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকার সুযোগ পেয়েছিল, সেই কাঠামো থেকে যেন আমরা পূর্ণরূপে বের হয়ে আসতে পারি।” দেশকে একটা তামাশায় পরিণত করে ফেলা হয়েছিল মন্তব্য করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আইন বলে কিছু নাই। এই নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য কী আইন কানুন লাগবে, কীভাবে আমরা অগ্রসর হব, সেই প্রশ্ন মাথায় রেখে আমরা কিছু সংস্কার করা শুরু করেছিলাম, অর্থাৎ সংস্কার করতে হবে।”
সংস্কারগুলো যেন এমনভাবে হয় যেন আগামী প্রজন্ম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সেই প্রত্যাশা তুলে ধরে তিনি বলেন, “উনারা (সংস্কার কমিশন) যে সমস্ত জিনিস প্রস্তাব করেছেন সেগুলো উনাদের অভিজ্ঞতা এবং উনাদের পাণ্ডিত্য এবং আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। এখন আমাদের কাজ তাদের প্রস্তাবের কতটুকু গ্রহণ করবো কীভাবে অগ্রসর হবো।”
রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশ্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আপনাদের অভিজ্ঞতা, আপনারা যেহেতু বড় বড় রাজনৈতিক দলের নেতা, আপনাদেরই… আপনাদেরকেই প্রতিনিয়ত এই আইনগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। সেজন্য আপনাদের আলোচনা করার জন্য দেওয়া হবে।” আলোচনার মাধ্যমে সুন্দর রাষ্ট্র গঠন করার বিষয়ে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “কাউকে চাপিয়ে দেওয়ার জন্য না, একটা ঐক্যমতের মাধ্যমে হবে। সুযোগটা আমরা সবাই জানি, এটাকে গ্রহণ করতে হবে, কাজে লাগাতে হবে। এটা প্রচন্ড সুযোগ, এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারি।”
সুযোগ কাজে লাগালে একটা সুন্দর দেশ পাওয়া যাবে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে আমরা কেবল মাত্র সুপারিশগুলো নিয়ে এসেছি। এক সঙ্গে আলোচনা করব, কমিশনের যারা আছেন তারা আপনাদের সঙ্গে বসবেন ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য, চাপিয়ে দেওয়ার জন্য না। চাপানোর ক্ষমতা আমাদের নাই। আমরা শুধু আপনাদের বোঝানোর জন্য, কেন করা হয়েছিল, কী কারণে করা হয়েছিল সেটা উপস্থাপন করা।”
সংস্কারের পুরো সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে উপস্থাপনের বিষয়টি তুলে ধরে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “এটা আমার কাজ না, এটা আপনাদের কাজ, যেহেতু আপনারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন। আপনাদের বলতে হবে সমাজের কোন জায়গায় কী করতে হবে, কীভাবে করতে হবে। আমরা শুধু সাচিবিক কাজগুলো আপনাদের করে দিলাম।”
রাজনৈতিক দল, জনগণ ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব- সব মিলে পৃথিবীজুড়ে বড় রকমের সমর্থন আছে দাবি করে তিনি বলেন, “যে কারণে অপর পক্ষ সুবিধা করতে পারছে না। পদে পদে ব্যহত হচ্ছে। শেষমেশ ট্রাম্পের হাতেই আবার… চালাতে গিয়ে চালাতে পারল না। যত ছোট রাষ্ট্র, বড় রাষ্ট্র, ধনী রাষ্ট্র, মাঝারি রাষ্ট্র সবাই আমাদের সমর্থন দিয়েছে। কারো কোনো রকমের দ্বিধা নাই কোন প্রশ্ন নাই। প্রথমেই যখন কথা বলে তখন বলে কি লাগবে বলো আমরা আছি।”
এমন সমর্থনের ভেতর দিয়ে যদি নতুন বাংলাদেশ গড়া না যায় তাহলে তা কপালের দোষ মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, “আমরা এই সুযোগ ছাড়তে চাই না। আন্তর্জাতিক মহলেও আমাদের জিজ্ঞাস করে তোমাদের অর্থনৈতিকভাবে আমরা সাহায্য করতে পারব, কিন্তু সংস্কারের কাজ তোমরা নিজেরাই করতে পার। না হলে এই যে আত্মত্যাগ তা টিকিয়ে রাখা যাবে না, আবার নতুন করে কেউ লণ্ডভণ্ড করে দিবে।”

বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এলডিপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), নাগরিক ঐক্য, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিশ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম, হেফাজতে ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।

আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারির নেতৃত্বে জাতীয় নাগরিক কমিটি, হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও এই বৈঠকে অংশ নেয়।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর বিভিন্ন সুপারিশ বিবেচনা ও জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তির সঙ্গে এই বেঠক করে ঐকমত্য কমিশন। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ছয় কমিশনের পুরো প্রতিবেদন নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটির সঙ্গেও কথা বলবে ঐকমত্য কমিশন।

কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর কথার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে কতটুকু সংস্কার দ্রুত করতে হবে, কতটুকু পরে করা যাবে। ঐকমত্যের ভিত্তিতেই জুলাই সনদ প্রণয়ন করবে সরকার। এ জাতীয় সনদের ভিত্তিতে হবে নির্বাচন।

বৈঠক শুরুর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আশা করছি, ছয়টা কমিশন যে রিপোর্টগুলো দিয়েছে সেগুলো নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পলিটিক্যাল পার্টির এই কমিশনের আলাপ হবে। আলাপে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত হবে, রাজনৈতিক দলগুলো তাতে স্বাক্ষর করবে জানিয়ে তিনি বলেন, সেটাই হবে ‘জুলাই চার্টার’। সেই জুলাই চার্টারের ওপর নির্ভর করে আমাদের নির্বাচনের তারিখটা হবে।”

২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে রাষ্ট্র সংস্কার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেন অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনগুলোর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ৮ ফেব্রুয়ারি। পরে ১২ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক
সংস্কার করবেন আপনারা, রাজনীতিকদের প্রধান উপদেষ্টা

আপডেট সময় : ০৫:৫৪:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ছয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে করেছে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’। শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) বিকাল তিনটায় বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এটি কমিশনের প্রথম বৈঠক।

বৈঠকে ২৬টি রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রায় ১০০ জন রাজনীতিবিদ উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ১০ জন রাজনীতিবিদ তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন। বিএনপির পক্ষে বক্তব্য রাখেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর জামায়াতে ইসলামী থেকে বক্তব্য রাখছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস তার বক্তব্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে মন্তব্য করে বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছয় মাস শেষ হল, আমাদের প্রথম পর্ব শেষ আজকে। আমরা দ্বিতীয় পর্বে প্রবেশ করলাম। প্রথমটা ছিল প্রস্তুতি পর্ব, সেই প্রস্তুতি পর্বের অনেক কিছু আপনাদের কাছে জানা। তার মধ্যে একটা বড় বিষয় ছিল এই স্বপ্নের পিছনে যে আত্মত্যাগ, আমরা যেন এমন একটা দেশ করতে পারি, যেটা সুশৃঙ্খলভাবে চলবে।”
তিনি বলেন, “যে আইনি কাঠামোর মাধ্যেমে যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকার সুযোগ পেয়েছিল, সেই কাঠামো থেকে যেন আমরা পূর্ণরূপে বের হয়ে আসতে পারি।” দেশকে একটা তামাশায় পরিণত করে ফেলা হয়েছিল মন্তব্য করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আইন বলে কিছু নাই। এই নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য কী আইন কানুন লাগবে, কীভাবে আমরা অগ্রসর হব, সেই প্রশ্ন মাথায় রেখে আমরা কিছু সংস্কার করা শুরু করেছিলাম, অর্থাৎ সংস্কার করতে হবে।”
সংস্কারগুলো যেন এমনভাবে হয় যেন আগামী প্রজন্ম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সেই প্রত্যাশা তুলে ধরে তিনি বলেন, “উনারা (সংস্কার কমিশন) যে সমস্ত জিনিস প্রস্তাব করেছেন সেগুলো উনাদের অভিজ্ঞতা এবং উনাদের পাণ্ডিত্য এবং আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। এখন আমাদের কাজ তাদের প্রস্তাবের কতটুকু গ্রহণ করবো কীভাবে অগ্রসর হবো।”
রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশ্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আপনাদের অভিজ্ঞতা, আপনারা যেহেতু বড় বড় রাজনৈতিক দলের নেতা, আপনাদেরই… আপনাদেরকেই প্রতিনিয়ত এই আইনগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। সেজন্য আপনাদের আলোচনা করার জন্য দেওয়া হবে।” আলোচনার মাধ্যমে সুন্দর রাষ্ট্র গঠন করার বিষয়ে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “কাউকে চাপিয়ে দেওয়ার জন্য না, একটা ঐক্যমতের মাধ্যমে হবে। সুযোগটা আমরা সবাই জানি, এটাকে গ্রহণ করতে হবে, কাজে লাগাতে হবে। এটা প্রচন্ড সুযোগ, এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারি।”
সুযোগ কাজে লাগালে একটা সুন্দর দেশ পাওয়া যাবে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে আমরা কেবল মাত্র সুপারিশগুলো নিয়ে এসেছি। এক সঙ্গে আলোচনা করব, কমিশনের যারা আছেন তারা আপনাদের সঙ্গে বসবেন ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য, চাপিয়ে দেওয়ার জন্য না। চাপানোর ক্ষমতা আমাদের নাই। আমরা শুধু আপনাদের বোঝানোর জন্য, কেন করা হয়েছিল, কী কারণে করা হয়েছিল সেটা উপস্থাপন করা।”
সংস্কারের পুরো সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে উপস্থাপনের বিষয়টি তুলে ধরে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “এটা আমার কাজ না, এটা আপনাদের কাজ, যেহেতু আপনারা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন। আপনাদের বলতে হবে সমাজের কোন জায়গায় কী করতে হবে, কীভাবে করতে হবে। আমরা শুধু সাচিবিক কাজগুলো আপনাদের করে দিলাম।”
রাজনৈতিক দল, জনগণ ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব- সব মিলে পৃথিবীজুড়ে বড় রকমের সমর্থন আছে দাবি করে তিনি বলেন, “যে কারণে অপর পক্ষ সুবিধা করতে পারছে না। পদে পদে ব্যহত হচ্ছে। শেষমেশ ট্রাম্পের হাতেই আবার… চালাতে গিয়ে চালাতে পারল না। যত ছোট রাষ্ট্র, বড় রাষ্ট্র, ধনী রাষ্ট্র, মাঝারি রাষ্ট্র সবাই আমাদের সমর্থন দিয়েছে। কারো কোনো রকমের দ্বিধা নাই কোন প্রশ্ন নাই। প্রথমেই যখন কথা বলে তখন বলে কি লাগবে বলো আমরা আছি।”
এমন সমর্থনের ভেতর দিয়ে যদি নতুন বাংলাদেশ গড়া না যায় তাহলে তা কপালের দোষ মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, “আমরা এই সুযোগ ছাড়তে চাই না। আন্তর্জাতিক মহলেও আমাদের জিজ্ঞাস করে তোমাদের অর্থনৈতিকভাবে আমরা সাহায্য করতে পারব, কিন্তু সংস্কারের কাজ তোমরা নিজেরাই করতে পার। না হলে এই যে আত্মত্যাগ তা টিকিয়ে রাখা যাবে না, আবার নতুন করে কেউ লণ্ডভণ্ড করে দিবে।”

বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এলডিপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), নাগরিক ঐক্য, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিশ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম, হেফাজতে ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।

আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারির নেতৃত্বে জাতীয় নাগরিক কমিটি, হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও এই বৈঠকে অংশ নেয়।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর বিভিন্ন সুপারিশ বিবেচনা ও জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তির সঙ্গে এই বেঠক করে ঐকমত্য কমিশন। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ছয় কমিশনের পুরো প্রতিবেদন নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটির সঙ্গেও কথা বলবে ঐকমত্য কমিশন।

কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর কথার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে কতটুকু সংস্কার দ্রুত করতে হবে, কতটুকু পরে করা যাবে। ঐকমত্যের ভিত্তিতেই জুলাই সনদ প্রণয়ন করবে সরকার। এ জাতীয় সনদের ভিত্তিতে হবে নির্বাচন।

বৈঠক শুরুর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আশা করছি, ছয়টা কমিশন যে রিপোর্টগুলো দিয়েছে সেগুলো নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পলিটিক্যাল পার্টির এই কমিশনের আলাপ হবে। আলাপে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত হবে, রাজনৈতিক দলগুলো তাতে স্বাক্ষর করবে জানিয়ে তিনি বলেন, সেটাই হবে ‘জুলাই চার্টার’। সেই জুলাই চার্টারের ওপর নির্ভর করে আমাদের নির্বাচনের তারিখটা হবে।”

২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে রাষ্ট্র সংস্কার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেন অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনগুলোর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ৮ ফেব্রুয়ারি। পরে ১২ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়।