ঢাকা ০৩:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ কেন বন্ধ করলো অন্তর্বর্তী সরকার? সাংবাদিক আনিস আলমগীর ও অভিনেত্রী শাওনসহ চারজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে সরকার সমালোচক সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে আটক ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যা করেনি’  চবি উপ-উপাচার্যের বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ঢাবিতে ‘রাজাকার ঘৃণাস্তম্ভ’, জুতা নিক্ষেপ লন্ডনে তারেক রহমানের শেষ কর্মসূচি ১৬ ডিসেম্বর গোলাম আজম ও নিজামীকে দেশপ্রেমিক বলায় পাবনায় প্রতিবাদ মিরপুরের বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল, ঘাতকদের বিচারের দাবি জগন্নাথ হলের সড়কে ছাত্রদের আঁকা গোলাম আজমদের ছবি মুছে দিল প্রশাসন

লন্ডনে বাংলায় স্টেশনের নাম নিয়ে ব্রিটিশ এমপির ক্ষোভ!

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৬:০৪:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / 443
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা নামের সাইনবোর্ড লেখা নিয়ে ক্ষোভ জানিছেন একজন ব্রিটিশ এমপি। গ্রেট ইয়ারমাউথের এমপি রুপার্ট লোয়ি বলেছেন, লন্ডনে সব স্টেশনের সাইনবোর্ডে কেবল ইংরেজিই থাকা উচিত, অন্য কোনো ভাষা নয়। তার এ বক্তব্য নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। আর তার এই বক্তব্যকে সমর্থন করে বিতর্ককে উস্কে দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া মার্কিন বিজনেস টাইকুন ইলন মাস্ক।
জানা যায়, ডানপন্থি জনতুষ্টিবাদী দল রিফর্ম ইউকের সদস্য লোয়ি সোমবার (৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনের ইংরেজি ও বাংলা নামের পাশাপাশি লাগানো দুটি সাইনবোর্ডের ছবি শেয়ার করেন। তিনি লিখেছেন “এটা লন্ডন, এখানে স্টেশনে নাম ইংরেজিতে থাকা উচিত, কেবলই ইংরেজিতে,”।
তার এই পোস্ট অল্প সময়ের মধ্যে বিতর্কের ঝড় তোলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের কেউ কেউ তাকে সমর্থন জানালেও অনেকে একাধিক ভাষায় সাইনবোর্ড রাখার পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। এক্সের মালিক মাস্ক লোয়িকে সমর্থন জানিয়ে লেখেন, “ইয়েস।”

লোয়ির দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি মাস্কের এই সমর্থন এমন সময়ে এলো যখন যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে টেসলার প্রধান নির্বাহী মাস্কের সম্পৃক্ততা ক্রমশ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। মাস্ক সম্প্রতি রিফর্ম ইউকের নেতা হিসেবে নাইজেল ফারাজেকে দেখতে চান বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন; তার সম্ভাব্য উত্তরসূরী হিসেবে ৬৭ বছর বয়সী লোয়ির প্রতিও স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠাতার সমর্থন আছে বলেই মনে হচ্ছে।
ব্রিটেনে বাংলাদেশ ও ভারতের বংশদ্ভুত প্রচুর বাঙালি জনগোষ্ঠী রয়েছেন। তাদের মাতৃভাষাকে সম্মান জানিয়ে স্টেশনের নামকরণকে তার স্বাগত জানান। এটি ভাষাবৈচিত্র্য ও সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদকে তুলে ধরে, যা লন্ডনের মতো এক বহুজাতিক শহরের জন্য অত্যন্ত স্বাভাবিক।

হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে বাংলা নামের সাইনবোর্ড যুক্ত করায় তিন বছর আগে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। ২০২২ সালের মার্চে এক্সে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘এটি বাংলা ভাষার তাৎপর্যের স্বীকৃতি। লন্ডন টিউব রেল হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনের সাইনবোর্ডে বাংলা ভাষাকে গ্রহণ করেছে জেনে গর্বিত, এটা ১,০০০ বছরের পুরনো ভাষাটির ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক গুরুত্ব ও প্রভাবের ইঙ্গিত।
এই সিদ্ধান্ত সাংস্কৃতিক সংযোগের মাধ্যমে প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে জানিয়ে তিনি আরও বলেছিলেন, “এটি (হোয়াইটচ্যাপেলে বাংলা সাইনবোর্ড) আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিজয়।”

লোয়ির বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক চলমান থাকলেও, লন্ডন শহর কর্তৃপক্ষ এখনো এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে, ভাষাগত অন্তর্ভুক্তির এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে কীভাবে এগোবে এবং ব্রিটিশ রাজনীতিতে এর কী প্রভাব পড়বে, তা দেখার বিষয়।

একদিকে, কট্টর ডানপন্থি গোষ্ঠীগুলো কেবল ইংরেজি ভাষাকে প্রাধান্য দেওয়ার দাবি তুলছে, অন্যদিকে বহুভাষিক সমাজ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সমর্থকরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন।

ব্রিটিশ শাসনে থাকার সময় থেকেই লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করেন বাঙালিরা। বর্তমানে এই অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ মানুষই হল বাঙালি। ইংল্যান্ডের অধিকাংশ বাঙালিই থাকেন এই অঞ্চলে। এই অঞ্চলে আগে থেকেই বহু দোকানের নাম রয়েছে বাংলা ভাষায়। এই স্টেশনের বিভিন্ন গেটের সাইনবোর্ডে বাংলা ভাষায় নাম লেখার পাশাপশি স্টেশনের প্রবেশপথেও বাংলা ভাষাতে লেখা রয়েছে, ‘হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে আপনাকে স্বাগত।’ বিষয়টি এখন সহ্য হচ্ছে না রুপার্টের ।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

লন্ডনে বাংলায় স্টেশনের নাম নিয়ে ব্রিটিশ এমপির ক্ষোভ!

আপডেট সময় : ০৬:০৪:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা নামের সাইনবোর্ড লেখা নিয়ে ক্ষোভ জানিছেন একজন ব্রিটিশ এমপি। গ্রেট ইয়ারমাউথের এমপি রুপার্ট লোয়ি বলেছেন, লন্ডনে সব স্টেশনের সাইনবোর্ডে কেবল ইংরেজিই থাকা উচিত, অন্য কোনো ভাষা নয়। তার এ বক্তব্য নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। আর তার এই বক্তব্যকে সমর্থন করে বিতর্ককে উস্কে দিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া মার্কিন বিজনেস টাইকুন ইলন মাস্ক।
জানা যায়, ডানপন্থি জনতুষ্টিবাদী দল রিফর্ম ইউকের সদস্য লোয়ি সোমবার (৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনের ইংরেজি ও বাংলা নামের পাশাপাশি লাগানো দুটি সাইনবোর্ডের ছবি শেয়ার করেন। তিনি লিখেছেন “এটা লন্ডন, এখানে স্টেশনে নাম ইংরেজিতে থাকা উচিত, কেবলই ইংরেজিতে,”।
তার এই পোস্ট অল্প সময়ের মধ্যে বিতর্কের ঝড় তোলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের কেউ কেউ তাকে সমর্থন জানালেও অনেকে একাধিক ভাষায় সাইনবোর্ড রাখার পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। এক্সের মালিক মাস্ক লোয়িকে সমর্থন জানিয়ে লেখেন, “ইয়েস।”

লোয়ির দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি মাস্কের এই সমর্থন এমন সময়ে এলো যখন যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে টেসলার প্রধান নির্বাহী মাস্কের সম্পৃক্ততা ক্রমশ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। মাস্ক সম্প্রতি রিফর্ম ইউকের নেতা হিসেবে নাইজেল ফারাজেকে দেখতে চান বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন; তার সম্ভাব্য উত্তরসূরী হিসেবে ৬৭ বছর বয়সী লোয়ির প্রতিও স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠাতার সমর্থন আছে বলেই মনে হচ্ছে।
ব্রিটেনে বাংলাদেশ ও ভারতের বংশদ্ভুত প্রচুর বাঙালি জনগোষ্ঠী রয়েছেন। তাদের মাতৃভাষাকে সম্মান জানিয়ে স্টেশনের নামকরণকে তার স্বাগত জানান। এটি ভাষাবৈচিত্র্য ও সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদকে তুলে ধরে, যা লন্ডনের মতো এক বহুজাতিক শহরের জন্য অত্যন্ত স্বাভাবিক।

হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে বাংলা নামের সাইনবোর্ড যুক্ত করায় তিন বছর আগে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। ২০২২ সালের মার্চে এক্সে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘এটি বাংলা ভাষার তাৎপর্যের স্বীকৃতি। লন্ডন টিউব রেল হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনের সাইনবোর্ডে বাংলা ভাষাকে গ্রহণ করেছে জেনে গর্বিত, এটা ১,০০০ বছরের পুরনো ভাষাটির ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক গুরুত্ব ও প্রভাবের ইঙ্গিত।
এই সিদ্ধান্ত সাংস্কৃতিক সংযোগের মাধ্যমে প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে জানিয়ে তিনি আরও বলেছিলেন, “এটি (হোয়াইটচ্যাপেলে বাংলা সাইনবোর্ড) আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বিজয়।”

লোয়ির বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক চলমান থাকলেও, লন্ডন শহর কর্তৃপক্ষ এখনো এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে, ভাষাগত অন্তর্ভুক্তির এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে কীভাবে এগোবে এবং ব্রিটিশ রাজনীতিতে এর কী প্রভাব পড়বে, তা দেখার বিষয়।

একদিকে, কট্টর ডানপন্থি গোষ্ঠীগুলো কেবল ইংরেজি ভাষাকে প্রাধান্য দেওয়ার দাবি তুলছে, অন্যদিকে বহুভাষিক সমাজ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের সমর্থকরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন।

ব্রিটিশ শাসনে থাকার সময় থেকেই লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করেন বাঙালিরা। বর্তমানে এই অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ মানুষই হল বাঙালি। ইংল্যান্ডের অধিকাংশ বাঙালিই থাকেন এই অঞ্চলে। এই অঞ্চলে আগে থেকেই বহু দোকানের নাম রয়েছে বাংলা ভাষায়। এই স্টেশনের বিভিন্ন গেটের সাইনবোর্ডে বাংলা ভাষায় নাম লেখার পাশাপশি স্টেশনের প্রবেশপথেও বাংলা ভাষাতে লেখা রয়েছে, ‘হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে আপনাকে স্বাগত।’ বিষয়টি এখন সহ্য হচ্ছে না রুপার্টের ।