­
­
শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ২৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
‘আলোয় আলোয় মুক্তির’ সন্ধানে বর্ষবরণ করবে ছায়ানট  » «   মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলে গেল  » «   যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ: বিপজ্জনক খেলা, পথ নেই পিছু হটার  » «   বিশ্বকে বদলে দিতে বাংলাদেশ ক্রেজি আইডিয়ার দেশ  » «   প্রবাসীদের ভোট পদ্ধতি নির্ধারণে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি  » «   নাসার সাথে চুক্তি, আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা জোটে যুক্ত হলো বাংলাদেশ  » «   সারা দেশে সরকারি ফার্মেসি চালু করছে সরকার  » «   ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ থেকে বাটা-কেএফসি ভাংচুর : ৪ মামলা, গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান  » «   গাজায় গণহত্যা: ছয় জেলায় বাটা-কেএফসিতে হামলা-ভাঙচুর, হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ  » «   গাজার ৫০ শতাংশ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে, সংকুচিত হয়ে পড়ছেন ফিলিস্তিনিরা  » «   গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন : প্রতিবাদে সামিল বাংলাদেশ  » «   যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কারোপ: বাংলাদেশের জন্য সুযোগও সৃষ্টি হতে পারে  » «   ১০০ ডলারের টি-শার্টের শুল্ক ৪৯ ডলার!  » «   বাংলাদেশসহ ১৩ দেশের ওপর অস্থায়ী ভিসা নিষেধাজ্ঞা সৌদির  » «   ট্রাম্পের শুল্ক ধাক্কা কীভাবে সামলাবে বাংলাদেশ  » «  

বিলেতে কারী শিল্পে ঈদের ছুটি সময়ের দাবি
জামাল উদ্দিন



সমাজে অনেক অসংগতি ও অসুবিধা নিয়েই আমাদের বসবাস। আবার এগুলোর অনেকটাই সহযেই সমাধানযোগ্য, তাও সঠিক । শুধু একটু আন্তরিকতা ও স্বদিচ্ছার দরকার। ব্রিটেনে ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট বা কারী ইন্ডাষ্ট্রি বাংলাদেশির বিশেষ করে আমাদের পূর্বপুরুষদের অসামান্য ত্যাগ, উদ্ভাবন এবং পূর্ব- পাশ্চাত্যের রুচি ও স্বাদের এক বিষ্ময়কর মাইল ফলক। ইমিগ্ৰেন্টের এ দেশে পৃথিবীর প্রতিটি কর্ণারের মানুষ ঘড়ি ধরে বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করে। কিন্তু কারী শিল্প এমন, এখানে ঘড়ি ধরে কাজ চলে না এবং সব হাতে তা সম্ভব ও হয় না। এ যেন মহীরুহ হয়ে উঠে একমাত্র বাঙালির হাতেই, কারণ এরাই ওর স্রষ্টা। এবং মনের মাধুরী দিয়ে আনসোস্যাল আওয়ারে এ শিল্পকে বৈচিত্র্য দিতে এবং ভোজন বিলাসীদের সন্তুষ্ট করতে তাদের ও কার্পণ্যতা দেখা যায় না।

একটা সময় ছিল যখন পরিবার -পরিজন দেশে রেখে এ শিল্পের শ্রমিকরা রেস্টুরেন্টে থেকেই কাজ করতেন। ঈদ- পার্বনে ওখানে থেকেই সঙ্গী- সাথীদের নিয়ে উৎসব পালন করতেন, দেশে টাকা পাঠিয়ে ফেলে আসা স্বজনদের সাথে উৎসবের আনন্দ ভাগ করতেন। তখন কাজে ছুটি নেয়ার প্রসঙ্গ আসতো না। তাছাড়া বিলেতে এত মসজিদ বা ঈদের নামাজের ব্যবস্থাও ছিলনা। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে আজ অধিকাংশের পরিবার- পরিজন ব্রিটেনে, বাচ্চারা বড় হয়ে স্কুল কলেজে, অনেকেই আবার নাতি -নাতনী বা বর্ধিত আত্মীয়তায় সুসংহত। প্রায় প্রতিটি এলাকায় গড়ে উঠেছে মসজিদ, উপাসনালয় – যেখানে এক বড় অবদান রয়েছে বেশীরভাগ রেস্টুরেন্ট ব্যাবসায়ীদের।

এইসব কারণে এখন ঈদের ছুটি  একটি জুরালো সময়ের দাবী।  তবে অনেকের প্রশ্ন মুসলমানদের এই দুই ঈদে স্টাফের ছুটি বাধ্যতামূলক হবে, নাকি রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে?

এ নিয়ে বিবেকে প্রশ্ন জাগে, যখনই নিজের আত্বীয় বা বন্ধু- বান্ধব কাজের কারণে ঈদের দিনের আমেজ থেকে বঞ্চিৎ হতে দেখি।

ব্রিটেনে ঈদের ছুটি – বলতে গেলে অত্যন্ত ন্যায্য একটা দাবি। যা বোধকরি সচেতন ও মানবিক মানুষ মাত্রই স্বীকার করবেন। সমাজে পরিবর্তন আনতে হলে প্রথমে নিজেকে পরিবর্তন করতে হয়। তাই আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঈদের দিনে বন্ধ রাখি।

খ.

আমাদের রেষ্টুরেন্ট বা টেকওয়ের মালিকগণের প্রায় সকলেই মুসলিম হওয়া সত্বেও এখনও একমত হতে পারছেন না ঈদে রেষ্টুরেন্ট বন্ধ রেখে সবাইকে ছুটি দেয়ার ব্যাপারে। বাইরে থেকে মনে হয়-  স্টাফদের প্রতি তাদের সহানুভূতির কমতি নেই। কিন্তু মালিকপক্ষ যখনই  আর্থিক ব্যাপারটি বিবেচনায় নেন, তখনই তারা পিচ পা হোন।

আমার মনে হয় মালিকদের একটি ভ্রান্ত ধারণা ও  সদিচ্ছার অভাব আছে। কারণ বৎসরে দুই দিন রেষ্টুরেন্ট বা টেকওয়ে বন্ধ রাখলে কাষ্টমাররা অন্যত্র চলে যাবে এবং ব্যবসার ক্ষতি হবে বলে তাদের বিশ্বাস। আসলে কী তাই?  অনেকের মতো আমিও তা মনে করিনা। কারণ ঈদের দিনে সব কটি ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে ঘোষিত হলে- এটা কোন সমস্যা হবে না।  এবং এই বিষয়টি  কারী ইন্ড্রাস্ট্রির সংগঠনগুলোর  সমন্বিত উদ্যোগের  মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন সম্ভব।

তাছাড়া অগ্রিম এ ঘোষণা কাষ্টমাররাও সাদরে মেনে নেবে।  আমরা জানি The English moves on plan. ওরা বন্ধের দিনে না এসে অন্যদিন রেষ্টুরেন্টে খেতে আসবে।  কোন মানুষ এমনিতেও সপ্তাহে ৭ দিন রেস্টুরেন্টে খেতে আসে না। সুতরাং আর্থিক ক্ষতির ভয়টি এখানে  অমূলক।

তাছাড়া, এর আরেকটি গুণগত দিক হতে পারে- সারাদেশে ঈদের দিনে রেস্টুরেন্ট বন্ধ রেখে মেইনস্ট্রিমে ঈদ উৎসবের প্রচার ও প্রসার।

ঈদের খুশী পরিবারকে নিয়ে উদযাপন  করতে না পারলে যে কারোর মন খারাপ হবে। আমাদের রেষ্টুরেন্টের বেশীরভাগ মালিক মুসলমান, তাই পারিবার-স্বজনদের  নিয়ে ঈদ উদযাপনের অনুভূতি আলাদা করে বুঝানোর প্রয়োজন নেই।

আরেকটি বিষয় বিবেচ্য,  কারী ইন্ড্রাস্ট্রিতে  স্টাফ সংকট রয়েছে। ব্রিটেনে বেড়ে ওঠা বা ব্রিটিশ প্রজন্ম এই পেশায় আকৃষ্ট হচ্ছে না । এর অন্যতম কারণ হচ্ছে- কারী ইন্ড্রাস্ট্রিতে প্রফেসনালিজম , টাইম ম্যানেজমেন্ট, স্টাফ ওয়েলফেয়ার  ইত্যাদি মোটাদাগে অভাব।তার সাথে রয়েছে মুসলমানদের বড় দুই ধর্মীয় উৎসব ঈদের দিনে ছুটি না থাকা।

সহজ কথায় বলা যায়- ব্রিটেনে বাংলাদেশী কমিউনিটির  অর্থনৈতিক ভিত্তি দাড় করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখা বাংলাদেশী কারী ইন্ড্রাস্ট্রিতে  বছরের দুই  ঈদে ছুটি কার্যকর করা  সময়ের  দাবি। এ দাবী  উপেক্ষিত হওয়া  মানে  এ শিল্প লোকবল ও মেধা শুন্যতা থেকে বের কঠিন থেকে কঠিনতর হবে দিন দিন।

জামাল উদ্দিন :  কমিউনিটি সংগঠক ও ব্যবসায়ি , লন্ডন ।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন