বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, আজারবাইজান, জর্ডান এবং প্যালেস্টাইনের মতো দেশে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীর হার ২ শতাংশেরও কম। কিন্তু এসব দেশে ক্রিসমাসের দিনে সরকারি ছুটি আছে। অথচ ব্রিটেনে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের পরেই মুসলিম এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের সংখ্যা বেশী হলেও ঈদ কিংবা দিওয়ালী উপলক্ষে সরকারি ছুটি নাই। ব্রিটেনে সকল ধর্মের উৎসবের দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হলে পুরো দেশ অচল হয়ে যাবে। কারণ, এক দিনের হলিডেতে সারা দেশে ২.৩ বিলিয়ন পাউন্ডের আর্থিক ক্ষতি হয়। ২০৩০ সাল নাগাদ ব্রিটেন হবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশী ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাসের দেশ। মুসলিম এবং হিন্দুদের উৎসবের দিনে ছুটি ঘোষণা করা হলে অন্য সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকেও একই দাবি উঠতে পারে।
ব্রিটেনে ঈদের দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ২০১৩ সালে একটি অনলাইন পিটিশনে এক লাখ ২৪ হাজার মানুষ স্বাক্ষর করেছিল ঈদ এবং দিওয়ালীর দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবিতে। পিটিশনের জবাবে তৎকালীন কোয়ালিশন সরকার (কনজারভেটিভ-লিবারেল) আর কোনো হলিডে ঘোষণা করা যাবেনা বলে জানিয়ে দেয়।
তাহলে কি ঈদের দিনে ব্রিটেনের মুসলিমরা ছুটি পাবেনা? অবশ্যই ছুটি পাওয়া সম্ভব। ব্রিটেনের আইনেই এর সুযোগ আছে। যেমনঃ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সকল সরকারি স্কুল ঈদের দিনে বন্ধ দেয়া হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ নিজেদের উদ্যোগে এমন হলিডে ঘোষণার ক্ষমতা রাখে। তাই ঈদ উপলক্ষে সরকারি ছুটি কিংবা ব্যাংক হলিডে’র আশা না করে আমরা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ঈদের দিনে ছুটি ঘোষণা করতে পারি।
ব্রিটেনে বাংলাদেশীরা অনেক ধরনের প্রতিষ্ঠানের মালিক, পরিচালক এবং কর্মী। যেমনঃ গ্রোসারি শপ, ট্রাভেল এজেন্সি, নিউজ এজেন্ট, সলিসিটর ফার্ম, একাউনটেন্সি ফার্ম, সাপ্তাহিক সংবাদপত্র, চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান এবং রেস্টুরেন্ট ব্যবসা। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা সবচেয়ে ব্যাপক এবং এই ব্যবসার গ্রাহক শ্বেতাঙ্গ সহ সকল কমিউনিটির মানুষ। অন্যগুলোর গ্রাহক সাধারণত বাংলাদেশিরাই। ফলে এসব প্রতিষ্ঠান সাধারণত ঈদের দিনে নিজেদের মতো করে ছুটি নিয়ে নেয়। কিন্তু কারি ইন্ডাস্ট্রিতে এই চর্চা এখনও দেখা যায়না। ফলে এই সেক্টরে কর্মরত ব্রিটিশ-বাংলাদেশি মুসলিম কর্মজীবীরা এখনও ঈদের দিনে ছুটি পান না। কারী ইন্ডাস্ট্রিতে ঈদের দিনে ছুটি না দেয়ার অন্যতম বড় কারণ মালিক-শ্রমিক ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা এবং রেস্টুরেন্ট কর্মীদের দরকষাকষি করার ক্ষমতাহীনতা। রেস্টুরেন্টের অসংখ্য কর্মীর নিয়োগের চুক্তিপত্র না থাকা এবং এসব কর্মীদের ওয়ার্কার ইউনিয়নের সাথে যুক্ত না থাকার কারণে রেস্টুরেন্ট মালিকের সাথে তাদের ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়। ফলে ঈদের ছুটি সহ অন্য অনেক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে মালিক পক্ষের একচ্ছত্র সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয় রেস্টুরেন্ট কর্মীদের।
আব্দুল হাই সঞ্জু : লেখক, সাংবাদিক
২১ জুন ২০২২ ,লন্ডন