সুনামগঞ্জ জেলা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ইউ,কে নিয়ে বৃটেনে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির সভাপতি আরমান আলী। মঙ্গলবার লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন,
আপনারা জানেন যে বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের সংগঠনের নাম উল্লেখ ও ব্যবহার করে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রচার করে বৃটেনে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যেমে আমরা আমাদের সংগঠনের অবস্থান পরিস্কার করতে চাই।
বিগত ২০১৪ সনে যুক্তরাজ্যে বৃহত্তর সুনামগঞ্জ জেলার অভিবাসীদের কল্যাণার্থে কাজ করার জন্য “সুনামগঞ্জ জেলা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ইউ, কে” নামে আমাদের এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। জন্মলগ্ন থেকেই সংগঠনের সিনিওর নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে ৫ সদস্য বিশিষ্ট সাবজেক্ট কমিটির মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী দুই বছর মেয়াদের জন্য নতুন কমিটি বা ইসি কমিটি গঠন করা হয়।
এর ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সনে ইসি কমিটিতে সভাপতি ইকবাল হোসেইন, সাধারণ সম্পাদক আহবাব মিয়া ও কোষাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ নির্বাচিত হন এবং তাদের নেতৃত্বে সংগঠনের কার্যক্রম চলে।
সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ইসি কমিটির নির্ধারিত দুই বছর মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর এবং করোনাকালিন জটিলতার কারণে ৩০ জুন ২০২১ তারিখের নির্বাহী কমিটির এক বর্ধিত সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে ইসি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫ সদস্য বিশিস্ট সাবজেক্ট কমিটিকে নতুন কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং ২রা আগস্ট ২০২১ তারিখে বিলম্বিত দ্বী বার্ষিক সম্মেলন ও নতুন কমিটি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
কমিউনিটির গুনী ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে ২রা আগস্ট ২০২১ সোমবার পূর্ব লন্ডনের Le Madison রেস্টুরেন্টে দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও নতুন কমিটি গঠিত হয়। সংগঠনের তদানিন্তন সভাপতি ইকবাল হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক আহবাব মিয়ার সঞ্চালনায় সংগঠনের ইতিহাসের এই বৃহৎ সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আব্দুল হান্নান, গ্রেটার সিলেট কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, বাংলাদেশ টিচার এসোসিয়েশনের সম্মানিত সভাপতি আবু হোসেইন, বিশিস্ট সাংবাদিক ও কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব কে , এম, আবু তাহের চৌধুরী প্রমূখ।
সম্মেলনের প্রথম পর্ব শেষে সভাপতি ইকবাল হোসাইন বিদায়ী কমিটির বিলুপ্তি ঘোষণা করেন এবং নতুন কমিটির নাম ঘোষণা করার জন্য সাবজেক্ট কমিটিকে দায়িত্ব অর্পণ করেন। এ পর্যায়ে সাবজেক্ট কমিটির প্রধান সৈয়দ আবুল কাশেম নতুন কমিটির নাম ঘোষণা করে।
সম্মেলনের দুই দিন পর ৪ঠা আগস্ট ২০২১ তারিখে সংগঠনের WhatsAap গ্রুপে এবং ই-মেইলের মাধ্যমে ইকবাল হোসেইন এক অভিনন্দন বার্তায় নতুন কমিটিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে উৎসাহ প্রদান করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ২০২১ সালের ২রা আগস্ট দ্বী-বার্ষিক সম্মেলনে নতুন কমিটি ঘোষনার পরে সংগঠনের সিনিয়র নেতা রফিক মিয়া তাঁকে আগেকার কমিটির উপদেস্টা পদ থেকে সরিয়ে নতুন কমিটিতে সহ-সভাপতির পদে নির্বাচিত করায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। বিদায়ী সভাপতি ইকবাল হোসেইন এবং নতুন কমিটির সভাপতি হিসাবে আমি এর একটি সম্মানজনক সমাধানের দায়িত্ব গ্রহন করি।
পরবর্তীতে ইকবাল হোসেইনের নেতৃত্বে রফিক মিয়ার সাথে আমাদের একটি সফল মিটিং করার পর অজ্ঞাত কারণে ইকবাল হোসেইন পিছু হঠেন এবং আমাদের সাথে সহযোগিতা বন্ধ করেন।
এর কিছুদিন পর আমরা লক্ষ্য করি যে, জনাব রফিক মিয়া Sunamganj Jela Welfare Association in UK & Europe নামে একটি সংগঠনের নাম company house এ রেজিস্টার করেন এবং আমাদের সংগঠনের লগোর প্রায় ৯৫% নকল করে একটি লগো প্রচার করেন। আমাদের সংগঠনের নাম এবং নতুন লগো ব্যবহার করে ইকবাল হোসেইন ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পুরাতন ইসি কমিটির এক জরুরী সভা আহ্ববান করেন।
তার ভাষ্যমতে তিনি “retrospective power” নামে কি এক বিশেষ অলীক ক্ষমতাবলে আবার বিলুপ্ত কমিটির স্বঘোষিত সভাপতির কর্তৃত্ব খাটাতে সচেস্ট হয়ে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দেন। সাবজেক্ট কমিটির উপর অমূলক কিছু অভিযোগ এনে নতুন কমিটিকে অবৈধ ঘোষনা করে সংবাদ মাধ্যমে অপপ্রচার অব্যাহত রাখেন। যে সাবজেক্ট কমিটি পদ্ধতির মাধ্যমে তিনি দুই দুই বার সভাপতি নির্বাচিত হলেন সেই সাবজেক্ট কমিটিকে অসাংবিধানিক, দুর্নীতি পরায়ন ও স্বজনপ্রীতি পরায়ন আখ্যা দেন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি আমার উপর ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে আমার সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। আমি নতুন কমিটির সভাপতি হিসাবে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আমাদের প্রথম ইসি মিটিংএ তাঁকে আমন্ত্রণ জানাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ইকবাল হোসেইন তা প্রত্যাখ্যান করেন।
পরবর্তীতে ইকবাল হোসেইনের সভাপতিত্বে এবং আহবাব হোসেনের সঞ্চালনায় পর্যায়ক্রমে কয়েকটি সভা করার পরে উনারা ১২ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে আমাদের নতুন ইসি কমিটিতে স্থান না পাওয়া কিছু দল ছুট সদস্য ও সদস্য নন এমন কিছু লোক নিয়ে কোম্পানি হাউস এ উনাদের রেজিষ্ট্রি করা Sunamganj Jela Welfare Association UK & Europe নাম বাদ দিয়ে ২০১৪ সন থেকে প্রতিষ্ঠিত এবং আমাদের রেজিষ্ট্রি করা Sunamganj Jela Welfare Association UK নামে এবং লগো ব্যবহার করে সমান্তরাল আরেকটি সংগঠনের কমিটি ঘোষনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরমান আলী আরো উল্লেখ করেন, সুনামগঞ্জে যে কোন নতুন কমিউনিটি সংগঠন গঠনে আমাদের কোন আপত্তি নেই। তবে আমরা লক্ষ্য করছি যে আমাদের রেজিস্ট্রিকৃত সংগঠনের নাম এবং নকল লগো ব্যবহার করে উক্ত বিতর্কিত কমিটি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে সুনামগঞ্জবাসীকে দ্বিধান্বিত করছেন এবং কমিউনিটিতে ভাঙ্গন সৃষ্টি করছেন।
আরমান আলী, সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া সহ সকল পেশাজীবি প্রচার মাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমকে আমাদের সংগঠনের নামে বিভ্রান্তি ও বিভেদ সৃস্টিকারী সংবাদ প্রচার না করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানান।
তিনি আরো বলেন, যদি কোন ব্যক্তি বা সংগঠন স্বজ্ঞানে আমাদের সংগঠনের নামে ভুল তথ্য প্রচার করেন তবে সুনামগঞ্জ জেলা ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশন ইউ,কে-র সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে আমরা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হব।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা মাস্টার আমির উদ্দিন, শেখ ফারুক, ফজল উদ্দিন, সহ সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম মিয়া, হাবিবুর রহমান, বদরুল চৌধুরী, শিশু মিয়া, আনসার আহমদ, ফারুক আহমদ, রাহুল আমিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুক সরদার, আনোয়ার কামাল দোলাল, জয়নাল আবেদীন, রাজু মিয়া কমিটির ৬০ জন ইসি সদস্য।