যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে ১ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া কোপ২৬ জলবায়ু সম্মেলনকে “লাস্ট, বেস্ট হোপ” নামে অভিহিত করা হয়েছে। শীর্ষ এই সম্মেলনে বিশ্বনেতারা গ্লাসগোতে পৌঁছালে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস প্রায় ১২০টি দেশের নেতাদের স্বাগত জানান।
৪৮টি দেশের ক্লাইমেট ভ্যনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার হিসেবে ধনী দেশগুলোর কাছে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর দাবির পক্ষে সমর্থন চেয়েছেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সম্মেলন উদ্বোধনের পরে বিকালের অধিবেশনে বিশ্বনেতারা তাদের নিজ নিজ জলবায়ু পরিকল্পনা নিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য দ্রুত তাদের প্রতীক্ষিত জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) পরিকল্পনা পেশ করার দাবি জানান। সিভিএফ’র থিম্যাটিক অ্যাম্বাসেডর হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সহ ১২০ টির বেশী দেশের নেতারা সম্মেলনে সোম ও মঙ্গলবার বক্তব্য রাখবেন।
বিশ্লেষক এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, উন্নত দেশগুলোর নেতারা দুই সপ্তাহের আলোচনায় তাদের অবস্থান ঠিক করবেন যা এই পৃথিবী নামক গ্রহকে কার্বনমুক্ত করার পরিকল্পনার মাধ্যমে শেষ হতে পারে।
এদিকে সম্মেলনের সাফল্য নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্লেষকরা তাদের সন্দেহের ধোয়া ছড়াচ্ছেন অতীতের প্রাসঙ্গিক নানা ঘটনাকে বিশ্লেষণ করেই।
সিএনএন-এর একজ বিশ্লেষক কপ২৬ বিশ্ব নেতাদের লোক-দেখানো বিবৃতির মাধ্যমে সমাপ্ত হতে পারে বলে মন্তব্য করে বলেছেন, বিজ্ঞান এর আশু প্রয়োজনীয়তার কথা বললেও তারা এটাকে সম্ভবত আরও দূরে ঠেলে দিতে পারেন।
বিবিসির একজন বিশ্লেষক বলেছেন, ‘চীন যা করে তা আমাদের সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বিশ্বের কার্বন ডাই অক্সাইডের সবচেয়ে বড় উৎস, দেশটি বিশ্বব্যাপী নির্গমনের প্রায় ২৮ শতাংশের জন্য দায়ী।’
দায়িত্ব গ্রহণের পর জো বাইডেন পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্যারিস চুক্তি থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বাতিল করেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি-ইত্যাদি ঘটনা সামনে এনে
বিবিসি’র এই ভাষ্যকার বলছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম নির্গমনকারী, তাই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
বাংলাদেশ এবং নিম্নাঞ্চলীয় দ্বীপ দেশগুলোসহ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অন্য দেশগুলো সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলছে যে তারা ফ্রন্টলাইনে রয়েছে এবং ‘ভয়ঙ্কর’ প্রভাবের সম্মুখীন রয়েছে।
প্রসঙ্গত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কার্বন নিঃসরণকারী হওয়া সত্ত্বেও ভারত তার নেট-জিরো-বর্ষ ঘোষণা করেনি বা প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছরে কার্বন-হ্রাস উচ্চাকাক্সক্ষাসহ একটি আপডেট জলবায়ু পরিকল্পনা (এনডিসি) জাতিসংঘের কাছে জমা দেয়নি।
এছাড়াও মার্কিন জলবায়ু দূত জন কেরি এর আগে বলেছিলেন যে, গ্লাসগো শীর্ষ সম্মেলন ‘জলবায়ু সংকটের সবচেয়ে খারাপ পরিণতি এড়াতে আমাদের যা করতে হবে তা করার জন্য বিশ্বের একত্রিত হওয়ার শেষ সেরা সুযোগ।’
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে প্রিন্স চার্লস বলেছেন, ‘বেশ আক্ষরিক অর্থেই এটি শেষ সুযোগ। আমাদের এখন সুন্দর শব্দগুলোকে আরও সুন্দরতর কর্মে রূপান্তর করতে হবে।’
গত ৩১ অক্টোবর রবিবার কপ২৬ সভাপতি অলোক শর্মা বলেছেন, জলবায়ু লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সম্মেলনটি ‘আমাদের শেষ সেরা আশা’। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রয়োজনীয় সমাধানগুচ্ছ গড়ে তোলার জন্য আমাদেরকে দ্রুত এগোতে হবে। এবং সেই কাজটি আজ থেকে শুরু হতে হবে- এবং আমরা একসঙ্গে সফল বা ব্যর্থ হবো।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ নভেম্বর কোপ২৬ সম্মেলনস্থলের কমনওয়েলথ প্যাভিলিয়নে ‘সিভিএফ-কমনওয়েলথ হাই-লেভেল ডিসকাসন অন ক্লাইমেট প্রসপারিটি পার্টনারশিপ’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণে বলেছেন, উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই তাদের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) জানাতে হবে এবং জাতীয় নির্গমন হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অভিযোজন বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন ‘জলবায়ু পরিবর্তন এখন একটি বৈশ্বিক এবং আন্তঃসীমান্ত সমস্যা এবং এর মারাত্মক পরিণতি থেকে কোনো দেশই মুক্ত নয়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্যে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে সিভিএফ এবং কমনওয়েলথ দেশগুলোর যৌথ পদক্ষেপের পাশাপাশি বাস্তবসম্মত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্থানীয়ভাবে প্রধান্য দিয়ে সমাধান খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।