হিউম্যান রাইটস এন্ড পীস ফর বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের ভোটাধিকার সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সময়মত প্রচারনার অভাবেই প্রবাসীরা পোস্টাল ভোটে অংশ নিতে পারেন নি বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
১৩ ডিসেম্বর, বৃহষ্পতিবার মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পীস ফর বাংলাদেশ ইউকে এর পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের ভোটাধিকার সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ইস্ট লন্ডনের প্রিন্সলেট স্ট্রিটস্থ লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি বিশিষ্ট সাংবাদিক মো. রহমত আলী উল্লেখ করেন, ‘যে কোন রাষ্ট্রের কাছে সে দেশের জনগণের যে সমস্ত মৌলিক অধিকার রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হচ্ছে ভোটের অধিকার। সে হিসাবে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ধারায় এ অধিকারের কথা স্পস্টভাবে বলা হয়েছে।’
‘২০০৯ সালে বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় প্রবাসীদের নাম অন্তর্ভূক্ত করতে নির্বাচনী বিধিমালার সংশোধন করে সংসদে তা পাশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে,‘এ আইনের ৬নং ধারায় (১) উপধারা মোতাবেক ‘যা কিছু থাকুক না কেন, কোন বাংলাদেশী নাগরিক বিদেশে বসবাস করলে, তিনি সর্বশেষ যে নির্বাচনী এলাকায় বসবাস করিয়াছেন অথবা তাহার নিজ বা পৈত্রিক বসতবাড়ী যে স্থানে অবস্থিত ছিল বা আছে তিনি সেই এলাকার ভোটার বলিয়া গণ্য হইবেন।’
প্রবাসীদের ভোটের অধিকার কতটুকু যুক্তিপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত এ থেকেই বুঝা যায়। তিনি বলেন, এ ভোট শুধু নির্বাচনের সময় ভোট দেয়া নয়, তা এখন প্রবাসীদের দেশে তাদের সহায়-সম্পত্তি রক্ষাসহ অস্থিত্ব রক্ষার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এ দাবিটি প্রবাসীদের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন যাবৎ উপেক্ষিত হয়ে আছে।’
‘বিগত কয়েকটি সরকার এ ব্যাপারে তা বাস্তবায়নের জন্য তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করলেও প্রবাসীবান্ধব বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার এ ব্যাপারে কিছু বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর ফলে কয়েকটি দেশে স্থানীয় দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটার রেজিষ্ট্রেশনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর মধ্যে রয়েছে, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়া প্রভৃতি।’
তিনি বলেন, ‘চলমান এ প্রক্রিয়া যেহেতু সময় সাপেক্ষ এবং যেহেতু নির্বাচন আসন্ন এমতাবস্থায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এবার প্রবাসীদের শুধু পোস্টাল ভোট প্রদানের ব্যবস্থা ও পরবর্তি নির্বাচনে সামগ্রিকভাবে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়।
তাই সকলে আশাবাদী হয়েছিলেন, যারা রেজিষ্ট্রেশনপ্রাপ্ত তারা অন্তত এ প্রক্রিয়ায় পোস্টাল ভোট দিতে সক্ষম হবেন। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি স্থানীয় হাইকমিশনের প্রচার-প্রচারণা ও সহযোগিতার অভাবে।
যেহেতু এ প্রক্রিয়া অনেকের কাছে নতুন, তাই বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন থেকে বিদেশে অবস্থানরত দূতাবাস সমূহে এ ব্যাপারে প্রচার-প্রচারনার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়। সবাই প্রত্যাশা করেছিলেন, লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’ কিন্তু হাইকমিশনের পক্ষ থেকে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় নি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি বলেন, ‘মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পীস ফর বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে এ বিষয়টি প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য নব নিযুক্ত মাননীয় হাইকমিশনার ম্যাডামের সাক্ষাৎ লাভের চেষ্টা করা হয়। এ জন্য গত ৩০ নভেম্বর তিনি প্রথমবার ও এর এক সপ্তাহ পর দ্বিতীয়বার সাক্ষাৎলাভের জন্য অন-লাইনে ইমেইল করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন উত্তর পাননি। এ ব্যাপারে নব নিযুক্ত প্রেস মিনিষ্টার জনাব আশিকুন্নবী চৌধুরী সাহেবের সাথে টেলিফোনে সরাসরি যোগাযোগ করে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত হাইকমিশন থেকে তেমন কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে ইচ্ছাকৃতভাবেই অবজ্ঞা করা হচ্ছে এবং বিষয়টি নিয়ে আর কোন আশানুরুপ সাড়া পাওয়ার আশা নাই বলে তিনি সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য হয়েছেন।
সংগঠনের সভাপতি সংবাদ সম্মেলনে আরও উল্লেখ করেন, ‘যারা প্রবাসীদের বিভিন্ন দাবী-দাওয়া নিয়ে কাজ করেন তাদেরও নাকি তালিকাভুক্ত করে তা দেশে পাঠানো হয় ও সেখানে গোয়েন্দা নজরদারীসহ নানাভাবে হয়রানী করা হয়।। তা শুনে তাদের সংগঠনের অনেকের মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, সহ সম্পাদক আবুল হোসেন, আইন উপদেষ্টা শামীম চৌধুরী, ও অর্গেনাইজিং সেক্রেটারী আব্দুল আজিজ, অফিস সেক্রেটারী তাহের কামালী, নির্বাহী সদস্য আঙ্গুর আলী , জালালাবাদ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের সেক্রেটারী মায়েন উদ্দিন আনসার প্রমূখ।