ঢাকা ১২:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা যুক্তরাজ্যের ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী!

শারদীয় দুর্গোৎসব

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০২:০১:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর ২০২১
  • / 1341
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

উৎসব প্রতিটি জনগোষ্ঠী, সম্প্রদায়ের নিকট আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। সে দুর্গোৎসব হোক আর বিহু হোক কিংবা ইদ। উৎসবকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর লোকজন আনন্দে মেতে ওঠেন। আপনজনের সঙ্গে দীর্ঘ বিরতির পর সাক্ষাৎ লাভের একটি উপলক্ষ হচ্ছে উৎসব। উৎসবের আনন্দ এখানেই মূলত। কোনও কারণে মানুষের জীবনে যখন উৎসববিমুখতা দেখা দেয় বা উৎসবকে হরণ করা হয় বিভিন্ন অজুহাতে, তখন সমাজ নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। উৎসব উদযাপনে বাহুল্য আছে বটে। তবে, বাহুল্য অনেকাংশে লক্ষ্যকে ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়! ধরা যাক কবিগুরুর ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধের কথা-ই। সেখানে তিনি বলেছেন, ঘরের চেয়ে উঠোন বড়ো হওয়া চাই। বৃহৎ উঠান বাহুল্য বটে, তবে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বৃহৎ উঠোনের গুরুত্ব আছে বৈকি। সেভাবে, ময়ূর পাখি হিসেবে নিতান্ত সাধারণ একটি পাখির মতো। তার আলাদা কোনও বৈশিষ্ট্য বা উপকারিতা নেই। কিন্তু ময়ূরের পুচ্ছ পাখি হিসেবে তার সকল দুর্বলতাকে উতরে দিয়ে উৎকর্ষ সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। সংগীত পরিবেশনের সময় যেমন বাদ্যযন্ত্রের অবদানকে কোনওভাবে খাটো করা যায় না! শ্রোতৃমণ্ডলী টিকিট কেটে শিল্পীর কণ্ঠে গান শুনতে প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত হন। নিশ্চয় বাদ্যযন্ত্রের ঝংকার শুনার জন্য নয়। কিন্তু গানের আসরে বাদ্যযন্ত্র আপাত দৃষ্টিতে বাহুল্য মনে হলেও বাদ্যযন্ত্র ছাড়া গান কল্পনা করা যায় না। বাদ্যযন্ত্র অনেক ক্ষেত্রে শিল্পীর সহায়ক হয়ে ওঠে। সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি বাদ্যযন্ত্রের ঝংকারে ঢাকা পড়ে যায়! শ্রোতাদের নিকট সংগীতকে জনপ্রিয় করে তোলে বাদ্যযন্ত্র তথা মিউজিক।

‌বিয়ে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ও নারীর মধ্যে সম্পন্ন হয়। কিন্তু একজন বর কনের বাড়িতে একা যান না। বরের সঙ্গে অনেক সহযাত্রী থাকেন। এখানে সহযাত্রীরা বাহুল্য মাত্র। সহযাত্রীরা বরের সঙ্গে না-গেলেও বিয়ের মূল অনুষ্ঠানে হেরফের হওয়ার কিছু নেই। বর ও কনের মধ্যে সম্পাদিত হয় বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতা। কিন্তু এরপরও গাড়ি বোঝাই হয়ে, অনেককে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে বরযাত্রী হতে হয়! বাহুল্য জেনেও বরপক্ষ ও কনেপক্ষ শুধু দুজন মানব-মানবীর মধ্যে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাকে সীমাবদ্ধ না-রেখে উৎসবের রূপ দিতে সচেষ্ট থাকেন। কার বিয়েতে কতজন বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন, বিয়ের অনুষ্ঠানটি উৎসবমুখর ছিল কি না, তখন এটাই বিচার্য হয়ে দাঁড়ায়! অথচ বিয়ের অনুষ্ঠানে উক্ত বিশিষ্টগণ ময়ূরের পুচ্ছের ভূমিকাটিই নিয়েছিলেন! এর চেয়ে বেশি কিছু নয়!

‌দুর্গা পুজো বা ইদ বা বিহু ইত্যাদিও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের গণ্ডি অতিক্রম করে বৃহত্তর জনগণের মিলনমেলায় পর্যবসিত হয়। সে-সকল উৎসবে যাঁরা শারীরিকভাবে উপস্থিত হন, তাঁরা যেমন আনন্দ উপভোগ করেন, তেমন-ই আরেক দল জনগণের অনুপস্থিত উপস্থিতিও টের পাওয়া যায়! আর এই অনুপস্থিতিটা যাঁরা উপলব্ধি করতে পারেন, তাঁদের কাছে উৎসব সফল। উৎসবের সার্থকতা সেখানেই।

লেখক: কবি,গবেষক ও শিক্ষাবিদ । প্রকাশক, দৈনিক নববার্তা প্রসঙ্গ। করিমগঞ্জ। অসম।

আরও পড়ুন-

https://52banglatv.com/2021/06/29004/

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

শারদীয় দুর্গোৎসব

আপডেট সময় : ০২:০১:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর ২০২১

উৎসব প্রতিটি জনগোষ্ঠী, সম্প্রদায়ের নিকট আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। সে দুর্গোৎসব হোক আর বিহু হোক কিংবা ইদ। উৎসবকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর লোকজন আনন্দে মেতে ওঠেন। আপনজনের সঙ্গে দীর্ঘ বিরতির পর সাক্ষাৎ লাভের একটি উপলক্ষ হচ্ছে উৎসব। উৎসবের আনন্দ এখানেই মূলত। কোনও কারণে মানুষের জীবনে যখন উৎসববিমুখতা দেখা দেয় বা উৎসবকে হরণ করা হয় বিভিন্ন অজুহাতে, তখন সমাজ নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। উৎসব উদযাপনে বাহুল্য আছে বটে। তবে, বাহুল্য অনেকাংশে লক্ষ্যকে ভিন্ন মাত্রা এনে দেয়। গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়! ধরা যাক কবিগুরুর ‘পনেরো আনা’ প্রবন্ধের কথা-ই। সেখানে তিনি বলেছেন, ঘরের চেয়ে উঠোন বড়ো হওয়া চাই। বৃহৎ উঠান বাহুল্য বটে, তবে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বৃহৎ উঠোনের গুরুত্ব আছে বৈকি। সেভাবে, ময়ূর পাখি হিসেবে নিতান্ত সাধারণ একটি পাখির মতো। তার আলাদা কোনও বৈশিষ্ট্য বা উপকারিতা নেই। কিন্তু ময়ূরের পুচ্ছ পাখি হিসেবে তার সকল দুর্বলতাকে উতরে দিয়ে উৎকর্ষ সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। সংগীত পরিবেশনের সময় যেমন বাদ্যযন্ত্রের অবদানকে কোনওভাবে খাটো করা যায় না! শ্রোতৃমণ্ডলী টিকিট কেটে শিল্পীর কণ্ঠে গান শুনতে প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত হন। নিশ্চয় বাদ্যযন্ত্রের ঝংকার শুনার জন্য নয়। কিন্তু গানের আসরে বাদ্যযন্ত্র আপাত দৃষ্টিতে বাহুল্য মনে হলেও বাদ্যযন্ত্র ছাড়া গান কল্পনা করা যায় না। বাদ্যযন্ত্র অনেক ক্ষেত্রে শিল্পীর সহায়ক হয়ে ওঠে। সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি বাদ্যযন্ত্রের ঝংকারে ঢাকা পড়ে যায়! শ্রোতাদের নিকট সংগীতকে জনপ্রিয় করে তোলে বাদ্যযন্ত্র তথা মিউজিক।

‌বিয়ে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ও নারীর মধ্যে সম্পন্ন হয়। কিন্তু একজন বর কনের বাড়িতে একা যান না। বরের সঙ্গে অনেক সহযাত্রী থাকেন। এখানে সহযাত্রীরা বাহুল্য মাত্র। সহযাত্রীরা বরের সঙ্গে না-গেলেও বিয়ের মূল অনুষ্ঠানে হেরফের হওয়ার কিছু নেই। বর ও কনের মধ্যে সম্পাদিত হয় বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতা। কিন্তু এরপরও গাড়ি বোঝাই হয়ে, অনেককে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে বরযাত্রী হতে হয়! বাহুল্য জেনেও বরপক্ষ ও কনেপক্ষ শুধু দুজন মানব-মানবীর মধ্যে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাকে সীমাবদ্ধ না-রেখে উৎসবের রূপ দিতে সচেষ্ট থাকেন। কার বিয়েতে কতজন বিশিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন, বিয়ের অনুষ্ঠানটি উৎসবমুখর ছিল কি না, তখন এটাই বিচার্য হয়ে দাঁড়ায়! অথচ বিয়ের অনুষ্ঠানে উক্ত বিশিষ্টগণ ময়ূরের পুচ্ছের ভূমিকাটিই নিয়েছিলেন! এর চেয়ে বেশি কিছু নয়!

‌দুর্গা পুজো বা ইদ বা বিহু ইত্যাদিও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের গণ্ডি অতিক্রম করে বৃহত্তর জনগণের মিলনমেলায় পর্যবসিত হয়। সে-সকল উৎসবে যাঁরা শারীরিকভাবে উপস্থিত হন, তাঁরা যেমন আনন্দ উপভোগ করেন, তেমন-ই আরেক দল জনগণের অনুপস্থিত উপস্থিতিও টের পাওয়া যায়! আর এই অনুপস্থিতিটা যাঁরা উপলব্ধি করতে পারেন, তাঁদের কাছে উৎসব সফল। উৎসবের সার্থকতা সেখানেই।

লেখক: কবি,গবেষক ও শিক্ষাবিদ । প্রকাশক, দৈনিক নববার্তা প্রসঙ্গ। করিমগঞ্জ। অসম।

আরও পড়ুন-

https://52banglatv.com/2021/06/29004/