প্রায় ৫০বছরের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেল বাগেরহাটের শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নের বগীসহ চার গ্রামের মানুষ। জলোচ্ছাসে এখন তলিয়ে যাবে না ঘরবাড়ি, ফসলে মাঠ, পুকুর, মাছের ঘের। বলেশ্বর নদের তীর রক্ষায় দেড় কিলোমিটার রিং বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ সমাপ্ত হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। সেনাবাহিনীর তত্ববধানে নির্মিত রিং বেড়িবাঁধ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বরিশাল শেখ হাসিনা সেনানিবাসের ২৮ পদাতিক বিগ্রেডের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল কাজী আনিসুজ্জামান পিএসসি পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. হাসান ইমামের কাছে নির্মিত বাঁধটির সবকিছু তোলে ধরেন। এসময় বাঁধের প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল খুরশিদ আনোয়ার, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আ ন ম ফয়জুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব মো. শাহিনুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাফিন মাহমুদ, শরণখোলা উপজেলা চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শহিন উপস্থিত ছিলেন। পরে তারা নির্মিত বাঁধ পরিদর্শন করেন।
এর আগে বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁধ নির্মানের জন্য ভ‚মি অধিগ্রনে ক্ষতিগ্রস্ত ২৩ পরিবারের হাতে ৪৮ লাখ ৩৭ হাজার ৩০৮ টাকার চেক প্রদান করেন জেলা প্রশাসক আ ন ম ফয়জুল হক। এছাড়া, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বাঁধসংলগ্ন এলাকার হতদরিদ্র চার শ’ মানুষকে কম্বল বিতরণ করা হয়।
সেনাবাহিনী সুত্রে জানা গেছে, সেনাবাহিনীর তত্ববধানে ২০২০ সালের ১৬ জুন সাউথখালী ইউনিয়নের ভাঙনকবলিত বগী থেকে গাবতলা পর্যন্ত ১৭ শ’ মিটার রিং বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। আট কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি প্যাকেজে স্থানীয় ঠিকাদারদের মাধ্যমে প্রায় সাত মাসে কাজ সম্পন্ন করা হয়।
ভাঙনের শিকার বগী গ্রামের আব্দুল আলী (৯০) ও মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলী (৬৫) প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, শত শত একর জমি, বলেশ্বরে গিলে খেয়েছে। প্রায় ৫০বছর ধরে আমরা এই দুর্ভোগ বয়ে আসছি। এখন সেনাবাহিনীর বেড়িভাঁদ আমরা অনেকটা রক্ষা পাবো।
সাউথখারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোজাম্মেল হোসের বলেন, সেনাবাহিনী যে রিং বাঁধ নির্মাণ করেছে সেটি অস্থায়ী হলেও বগী, গাবতলা, চালিতাবুনিয়া, উত্তর সাউথখালীসহ চারটি গ্রামের মানুষকে সামান্য ঝড়-জলোচ্ছাসে আর ডবে মরতে হবে না। এখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ণ বোর্ড জমি অধিগ্রহন করেছে। শিগগরিই স্থায়ী বাঁধের কাজ শুরু হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ১৫ নবেম্বর ঘুর্ণিঝড় সিডরে শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সম্পূর্ণ বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকে এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) মাধ্যমে পাউবোর ৩৫/১ পোল্ডারের ৬৩ কিলোমিটার বাঁধের টেকসই নির্মান কাজ শুরু হয়। প্রায় সাড়ে তিন শত কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারী বেড়িবাঁধ নির্মানের কাজ শুরু করে ‘সিএইচডাব্লিউই’ নামের চায়নার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।