ঢাকা ০৩:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
লিবিয়া থেকে ৩১০ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আরও ৩০ দেশের নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা খাঁচা থেকে বের হওয়া সিংহী আড়াই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে লন্ডনে ফ্লাই রবিবার, নির্জন কারাবাস থেকেই খালেদা জিয়ার ‘নানা রোগের সূচনা’ জানালেন ফখরুল মহাকাশ থেকে পবিত্র  কাবা শরিফের উজ্জ্বল ছবি আন্দোলনে থাকা প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি, ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত তারেক রহমানের দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত, কীভাবে ভোটার হবেন? খালেদা জিয়া ছাড়া পরিবারের কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবেন না কুকুরছানা হত্যা মামলায় মায়ের সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে ঢাকায় আসছেন জুবাইদা

বাংলাদেশির হারানো টাকা দেশে পৌঁছে দিলেন আজমান পুলিশ

৫২ বাংলা
  • আপডেট সময় : ০৯:৪৫:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • / 12004
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

 

‘পুলিশ’ এই শব্দটি এক এক দেশে এক এক রকম চরিত্র নিয়ে এগিয়ে চলেছে জনগণের সেবায় | আরব আমিরাতে পুলিশ শব্দটির যথার্থ ব্যবহারের হাজারো দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায় |
তেমনি একজন সংযুক্ত আরব আমিরাতের আজমান এর আল মদিনা কম্প্রিহেনসিভ পুলিশ স্টেশনের ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ওমর মুসাবাহ আল কাবি| তিনি এক বাংলাদেশি মহিলা গৃহকর্মীর হারানো সাতশ দিরহাম ফিরিয়ে দিয়েছেন, যিনি বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।
টাকার পরিমাণ যাই হোক না কেন, ওমর তা তার মালিকের কাছে ফিরিয়ে না দেয়া পর্যন্ত যেন স্বস্তিই পাচ্ছিলেন না। টাকার মালিক পৃথিবীর যেকোন প্রান্তেই থাকেন না কেন ,শুরু হয় তার সার্চ মিশন |

আজমানের বাংলাদেশি গৃহকর্মী জেসমিন ফকির(৪২) কখনো আশা করেননি  তিনি তার হারানো সাতশ দিরহাম ফিরে পাবেন। জেসমিন তার প্রবাস জীবনের ইতি টেনে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করছিলেন। এরই মধ্যে কোভিড ১৯ মহামারীতে আটকে পড়েন, তার ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। তিনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে দেশে ফেরার ঠিক আগেই তার ওয়ালেটটি হারিয়ে যায়। যাতে ছিল ৭শ দিরহাম। কিন্তু এদিকে জেসমিনের দেশে ফেরার সময় হলে তিনি আশাহত হৃদয়ে ফিরে আসেন।

এরই মধ্যে একজন সহৃদয় প্রবাসী তার ওয়ালেটটি কুড়িয়ে পেলে তা পুলিশ স্টেশনে জমা দেন। আর সেই ওয়ালেটের বিষয়টা ওমর আল কাবির  নজরে নজরে আসে|

এবার শুরু হয় আল ক্বাবি’র সার্চ মিশন। তিনি বলেন , আমার মনে হয়েছে এই ৭শ দিরহাম তার কষ্টার্জিত অর্থ, অন্যের কাছে তা সামান্য হতে পারে কিন্তু মহিলার কাছে না। আমি ওয়ালেটটিতে মহিলার যেটুকু তথ্যসূত্র পেলাম তার মধ্যে ছিল নগদ টাকা, একটি এমিরেটস আইডি এবং জীর্ণশীর্ণ এক টুকরো কাগজ,  এতে এলোমেলোভাবে লেখা ছিল কিছু টেলিফোন নাম্বার।

তিনি বলেন , ‘আমার মনে হয়েছে এই ৭শ দিরহাম তার কষ্টার্জিত অর্থ, অন্যের কাছে তা সামান্য হতে পারে কিন্তু ঐ মহিলার কাছে না। আমি ওয়ালেট টিতে মহিলার যেটুকু ক্লু পেলাম তার মধ্যে ছিল নগদ টাকা, একটি এমিরেটস আইডি এবং জীর্ণশীর্ণ এক টুকরো কাগজ, ওতে এলোমেলোভাবে লেখা ছিল কিছু টেলিফোন নাম্বার।

আইডির সাথে সংযুক্ত নম্বরতো কাজ করবে না কারণ তিনি দেশের বাইরে। কাগজের টুকরোয় পাওয়া নম্বরের একটিতে ডায়াল করতেই ফোনের মালিক জানালেন তিনি সৌদি আরব থাকেন। কিন্তু সমস্যা হল তিনি না বোঝেন আরবি না জানেন ইংরেজি। আমি আমার বাংলাদেশি ড্রাইভার এর সাহায্য নিলাম। তিনি স্বীকার করলেন যে জেসমিনকে চেনেন। তবে তাকে খুজে বের করতে কয়েকদিন সময় লাগবে। একমাস পরে মহিলার এক আত্মিয়ের নম্বর দিলেন তিনি। সে নাম্বারে ফোন করতেই ভদ্রলোক জানান, তিনি জেসমিনদের এলাকা থেকে দূরে থাকেন। তবে তিনি প্রতিশ্রুতি দিলেন যেভাবেই হোক পুলিশ অফিসারের সাথে তিনি জেসমিনকে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন।”

ওমর আল কাবি একদিন পরপর বাংলাদেশে তাকে ফোন করতে লাগলেন এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি আছে কিনা জানতে। অবশেষে তিনমাসের নিরলস প্রচেষ্টায় জেসমিনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হল।

আজমান থেকে পুলিশ অফিসারের ফোন পেয়ে জেসমিন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লেন। তিনি তার হারানো টাকার ব্যাপারে এমনকি যেখানে পুলিশে রিপোর্টও করেন নি সেখানে টাকা ফেরত পাওয়ার আনন্দে আপ্লুত হয়ে গেলেন। এটুকুই যথেষ্ট ছিল অফিসার আল ক্বাবি’র জন্য।

জেসমিনের কেবল নয় এর কিছুদিন আগে এই পুলিশ অফিসার নিজ দেশে ফিরে যাওয়া একজন প্রবাসীর হারানো সমুদয় সঞ্চয় ১৪ হাজার দিরহাম দেশে তার ঠিকানায় পৌছে দিয়েছিলেন।

আজমান পুলিশ স্টেশন এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গেইথ খালিফা বলেন , ‘আজমান পুলিশ তাদের কমিউনিটিকে যে কোন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ” । পুলিশ হারানো অর্থ তার মালিককে ফিরিয়ে দেয় কেবল তাদের চাকরীর খাতিরে নয় বরং এজন্য যে তারা অপরের আবেগের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং তারা তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে তা করে থাকেন।’

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বাংলাদেশির হারানো টাকা দেশে পৌঁছে দিলেন আজমান পুলিশ

আপডেট সময় : ০৯:৪৫:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

 

 

‘পুলিশ’ এই শব্দটি এক এক দেশে এক এক রকম চরিত্র নিয়ে এগিয়ে চলেছে জনগণের সেবায় | আরব আমিরাতে পুলিশ শব্দটির যথার্থ ব্যবহারের হাজারো দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায় |
তেমনি একজন সংযুক্ত আরব আমিরাতের আজমান এর আল মদিনা কম্প্রিহেনসিভ পুলিশ স্টেশনের ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ওমর মুসাবাহ আল কাবি| তিনি এক বাংলাদেশি মহিলা গৃহকর্মীর হারানো সাতশ দিরহাম ফিরিয়ে দিয়েছেন, যিনি বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।
টাকার পরিমাণ যাই হোক না কেন, ওমর তা তার মালিকের কাছে ফিরিয়ে না দেয়া পর্যন্ত যেন স্বস্তিই পাচ্ছিলেন না। টাকার মালিক পৃথিবীর যেকোন প্রান্তেই থাকেন না কেন ,শুরু হয় তার সার্চ মিশন |

আজমানের বাংলাদেশি গৃহকর্মী জেসমিন ফকির(৪২) কখনো আশা করেননি  তিনি তার হারানো সাতশ দিরহাম ফিরে পাবেন। জেসমিন তার প্রবাস জীবনের ইতি টেনে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করছিলেন। এরই মধ্যে কোভিড ১৯ মহামারীতে আটকে পড়েন, তার ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। তিনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে দেশে ফেরার ঠিক আগেই তার ওয়ালেটটি হারিয়ে যায়। যাতে ছিল ৭শ দিরহাম। কিন্তু এদিকে জেসমিনের দেশে ফেরার সময় হলে তিনি আশাহত হৃদয়ে ফিরে আসেন।

এরই মধ্যে একজন সহৃদয় প্রবাসী তার ওয়ালেটটি কুড়িয়ে পেলে তা পুলিশ স্টেশনে জমা দেন। আর সেই ওয়ালেটের বিষয়টা ওমর আল কাবির  নজরে নজরে আসে|

এবার শুরু হয় আল ক্বাবি’র সার্চ মিশন। তিনি বলেন , আমার মনে হয়েছে এই ৭শ দিরহাম তার কষ্টার্জিত অর্থ, অন্যের কাছে তা সামান্য হতে পারে কিন্তু মহিলার কাছে না। আমি ওয়ালেটটিতে মহিলার যেটুকু তথ্যসূত্র পেলাম তার মধ্যে ছিল নগদ টাকা, একটি এমিরেটস আইডি এবং জীর্ণশীর্ণ এক টুকরো কাগজ,  এতে এলোমেলোভাবে লেখা ছিল কিছু টেলিফোন নাম্বার।

তিনি বলেন , ‘আমার মনে হয়েছে এই ৭শ দিরহাম তার কষ্টার্জিত অর্থ, অন্যের কাছে তা সামান্য হতে পারে কিন্তু ঐ মহিলার কাছে না। আমি ওয়ালেট টিতে মহিলার যেটুকু ক্লু পেলাম তার মধ্যে ছিল নগদ টাকা, একটি এমিরেটস আইডি এবং জীর্ণশীর্ণ এক টুকরো কাগজ, ওতে এলোমেলোভাবে লেখা ছিল কিছু টেলিফোন নাম্বার।

আইডির সাথে সংযুক্ত নম্বরতো কাজ করবে না কারণ তিনি দেশের বাইরে। কাগজের টুকরোয় পাওয়া নম্বরের একটিতে ডায়াল করতেই ফোনের মালিক জানালেন তিনি সৌদি আরব থাকেন। কিন্তু সমস্যা হল তিনি না বোঝেন আরবি না জানেন ইংরেজি। আমি আমার বাংলাদেশি ড্রাইভার এর সাহায্য নিলাম। তিনি স্বীকার করলেন যে জেসমিনকে চেনেন। তবে তাকে খুজে বের করতে কয়েকদিন সময় লাগবে। একমাস পরে মহিলার এক আত্মিয়ের নম্বর দিলেন তিনি। সে নাম্বারে ফোন করতেই ভদ্রলোক জানান, তিনি জেসমিনদের এলাকা থেকে দূরে থাকেন। তবে তিনি প্রতিশ্রুতি দিলেন যেভাবেই হোক পুলিশ অফিসারের সাথে তিনি জেসমিনকে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন।”

ওমর আল কাবি একদিন পরপর বাংলাদেশে তাকে ফোন করতে লাগলেন এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি আছে কিনা জানতে। অবশেষে তিনমাসের নিরলস প্রচেষ্টায় জেসমিনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হল।

আজমান থেকে পুলিশ অফিসারের ফোন পেয়ে জেসমিন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লেন। তিনি তার হারানো টাকার ব্যাপারে এমনকি যেখানে পুলিশে রিপোর্টও করেন নি সেখানে টাকা ফেরত পাওয়ার আনন্দে আপ্লুত হয়ে গেলেন। এটুকুই যথেষ্ট ছিল অফিসার আল ক্বাবি’র জন্য।

জেসমিনের কেবল নয় এর কিছুদিন আগে এই পুলিশ অফিসার নিজ দেশে ফিরে যাওয়া একজন প্রবাসীর হারানো সমুদয় সঞ্চয় ১৪ হাজার দিরহাম দেশে তার ঠিকানায় পৌছে দিয়েছিলেন।

আজমান পুলিশ স্টেশন এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গেইথ খালিফা বলেন , ‘আজমান পুলিশ তাদের কমিউনিটিকে যে কোন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ” । পুলিশ হারানো অর্থ তার মালিককে ফিরিয়ে দেয় কেবল তাদের চাকরীর খাতিরে নয় বরং এজন্য যে তারা অপরের আবেগের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং তারা তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে তা করে থাকেন।’