ধর্ষণ এক ধরনের যৌন আক্রমণ। অধিকাংশ বিচারব্যবস্থায় ধর্ষণ বলতে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক অন্য কোনো ব্যক্তির অনুমতি ব্যাতিরেকে তার সঙ্গে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হওয়া কিংবা অন্য কোনোভাবে তার দেহে যৌন অনুপ্রবেশ ঘটানোকে বুঝায়। ধর্ষণের অভিযোগ, বিচার ও শাস্তি প্রদান বিভিন্ন শাসন ব্যবস্থায় বিভিন্ন রকম।
আন্তর্জাতিকভাবে, ২০০৮ সালে পুলিশ কর্তৃক লিপিবদ্ধ ধর্ষণের হার ছিল আজারবাইজানে প্রতি লক্ষে ০.২ এবং বতসোয়ানায় প্রতি লক্ষে ৯২.৯। বিশ্বজুড়ে প্রধানত পুরুষদের দ্বারাই ধর্ষণ সংঘটিত হয়। ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিরা মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে এবং আঘাত-পরবর্তী চাপ বৈকল্যে আক্রান্ত হতে পারে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে আমেরিকায়। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশটিতে ধর্ষণের শিকার। নারীর পরিসংখ্যান ৯১% এবং ৮% পুরুষ। অপর একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, এ দেশে ছয় জন নারীর মধ্যে একজন ধর্ষণের শিকার। পুরুষদের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানটা ৩৩ জনে ১ জন ধর্ষণের শিকার। এই দেশে ১৪ বছর বয়স থেকেই ধর্ষণের মত অপরাধের প্রবণতা তৈরি হয় শিশু মনে।
যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ষোল বৎসরের অধিক বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতি ছাড়া বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে, অথবা ষোল বৎসরের কম বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করেন, তাহলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবেন।
সন্তান এবং শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা গোটা পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয়। এই দেশে ধর্ষণের শাস্তি- মাত্র দুই বছরের জেল। ইউরোপের সুইডেনেই সবচেয়ে বেশি (৫৮%) ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছে সুইডেন।
তালিকায় চার নম্বরে আছে ভারত। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো অনুযায়ী ২০১২ সালে ভারতে ধর্ষণের অভিযোগ জমা পড়ে ২৪ হাজার ৯২৩টি। দেশটিতে ধর্ষণের শিকার হওয়া ১০০ জন নারীর মধ্যে ৯৮ জনই আত্মহত্যা করেন। প্রতি ২২ মিনিটে ভারতে একটি করে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়।
তালিকার পাঁচ নম্বরে আছে ব্রিটেন। দেশটিতে চার লাখ মানুষ প্রতিবছর ধর্ষণের মতো ঘটনার শিকার হন এদেশে। প্রতি পাঁচ জন মহিলার মধ্যে একজন করে ধর্ষণের শিকার হন।
তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে থাকা জার্মানিতে এখন পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়ে দুই লাখ ৪০ হাজার নারীর মৃত্যু হয়েছে। প্রতি বছর জার্মানিতে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয় ৬৫ লাখ ৭ হাজার, ৩৯৪। সপ্তম স্থানে আছে ফ্রান্স। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ধর্ষণের মত ঘটনা ফ্রান্সে অপরাধ বলেই মানা হতো না। সরকারি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছরে এই দেশে ধর্ষণের শিকার হন অন্তত ৭৫ হাজার নারী।
তালিকায় অষ্টম স্থানে থাকা কানাডায় এখনও পর্যন্ত লিখিত অভিযোগের সংখ্যা ২৫ লাখ ১৬ হাজার ৯১৮টি। প্রতি ১৭ জনের মধ্যে এক জন নারী এই দেশে ধর্ষণের শিকার হন।
নবম স্থানে থাকা শ্রীলংকায় অপরাধের শতাংশের বিচারে ১৪.৫ শতাংশ অপরাধ সংগঠিত হয় ধর্ষণে। ধর্ষণে অভিযুক্তদের ৬৫.৮% ধর্ষণের মত নারকীয় কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থেকেও কোনও প্রকার অনুশোচনা তাদের মধ্যে হয় না। ১০ নম্বরে থাকা ইথিওপিয়ায় ৬০% নারীই ধর্ষণের শিকার।
ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্ষণের শাস্তি :
ফ্রান্স: নির্যাতিতার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে ধর্ষকের সাজা ঠিক করা হয় এখানে। তবে, ধরা পড়ার পর এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে কমপক্ষে ১৫ বছরের জেল। অপরাধ গুরুতর হলে তা বেড়ে হতে পারে ৩০ বছরও
নরওয়ে :সম্মতি ছাড়া যে কোনো যৌনতা ধর্ষণের মধ্যে পড়ে। নৃশংসতা অনুযায়ী দোষীর তিন থেকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড হয়।
■ গ্রিসে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার একমাত্র শাস্তি আগুনে পুড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড।
■পোলেন্ড: হিংস্র বুনো শুয়োরের খাঁচায় ফেলে মৃত্যুদণ্ড!
■চীন: ধর্ষণ প্রমাণ হলেই আর কোনও সাজা নয়, বিশেষ অঙ্গ কর্তন এবং সরাসরি মৃত্যুদণ্ড। অন্য কোন শাস্তি নেই।
■ইরান: ধর্ষককে ফাঁসি, না হয় সোজাসুজি গুলি করা হয়। এভাবেই ধর্ষককে এদেশে শাস্তি দেওয়া হয়।
■আফগানিস্থা: ধর্ষণ করে ধরা পড়লে চার দিনের মধ্যে ধর্ষকের মাথায় সোজা গুলি করে মারা হয়।
■উত্তর কোরিয়া: অভিযোগ, গ্রেফতার আর তারপর অভিযোগ প্রমাণ হলে গুলি করে হত্যা করা হয়।
■ সৌদি আরব: জুম্মার নামাযের পর ধর্ষককে প্রকাশ্যেই শিরশ্ছেদ করা হয়।
■সংযুক্ত আরব আমিরাত: সাত দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
■ সৌদি আরব: শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে জনসমক্ষে শিরশ্ছেদ করা হয়।
■মঙ্গোলিয়া: ধর্ষিতার পরিবারের হাত দিয়ে ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
■মিশর: ধর্ষককে জনসমক্ষে ফাঁসি দেওয়া হয়।
■রাশিয়া: ২০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড।
■দক্ষিণ আফ্রিকা: বিশ বছরের কারাদণ্ড।
■মালোশিয়া: মৃত্যুদণ্ড
■ ইসরাইল : দোষ প্রমাণ হলে ১৬ বছরের কারাদণ্ড। সে দেশে ধর্ষণের সংজ্ঞা কিছুটা বর্ধিত। অন্য যৌন নির্যাতনও এর অন্তর্ভুক্ত।
লেখক: আব্দুল মোমিত রুমেল; ৫২বাংলা ফ্রান্স প্রতিনিধি, স্যোসাল এক্টিভিস্ট, ফ্রান্স প্রবাসী।