ক্রিকেট বিশ্বকাপে ২৭ বছর পর ফাইনাল খেলল ইংল্যান্ড। আর স্বাগতিক দেশ হিসেবে শিরোপা পাওয়ার দাবিটা খুব একটা অযৌক্তিক মনে হয়নি। কারণ, কন্ডিশন, দর্শক সবকিছুই ছিল তাদের অনুকূলে। তা ছাড়া ক্রিকেটের জনক হওয়ার পরও একবারো শিরোপার স্বাদ না পাওয়ার যে আক্ষেপ তা ঘোচাতে মরিয়া ছিল ইংলিশরা। তাই তীরের এত কাছে আর তরী ডোবাতে চাননি মরগান-রুটরা। লড়েছেনও জানবাজি। কিন্তু কাজটা যে খুব সহজ ছিল না। গতবারের রানার্সআপ নিউজিল্যান্ড যেভাবে এবারের আসরের অন্যতম ফেবারিট ভারতকে আসর থেকে ছিটকে ফেলেছে তাতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়েরই আভাস ছিল শুরু থেকেই। নিউজিল্যান্ডও শিরোপা জিততে চেষ্টার কোনো ত্রু টি করেনি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। টান টান উত্তেজনা ছিল পুরো ম্যাচজুড়েই। ব্যাটিংয়ে নেমে নিউজিল্যান্ডের স্বল্প পুঁজি দেখে যারা ভেবেছিলেন ইংল্যান্ড সহজেই জিতে যাবে, তারা ঠকেছেন।
গতকাল শিরোপার লড়াইয়ে টসে জিতে ব্যাট করতে নামে নিউজিল্যান্ড। বৃষ্টিভেজা সকাল হলেও উৎসবের কোনো কমতি ছিল না। গ্যালারিতে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে ইংলিশ দর্শকরা। লর্ডসে উপস্থিত ৩০ হাজার দর্শকের অর্ধেকেরও কম হবে ইংলিশ দর্শক। নিউজিল্যান্ডের সমর্থকরা ছাড়া বাকি দর্শকদের প্রায় সবাই-ই বলতে গেলে ভারতীয়, বাংলাদেশি আর পাকিস্তানি। এই তিন দেশের প্রায় সবাই ছিলেন ইংল্যান্ডের সমর্থক। এমনিতেই লর্ডসের মোট আসনের অর্ধেক অর্থাৎ ১৫ হাজার টিকেট ভারতীয়রা কিনে রেখেছিল আগেই। সুতরাং খেলায় তুলনামূলকভাবে তাদের আধিক্য থাকারই কথা। চিৎকার-উল্লাসটা এশিয়ানদের কাছ থেকেই এসেছে অধিক। ফাইনাল ম্যাচ দেখার সুযোগ না পাওয়া অসংখ্য লন্ডনবাসী খেলা দেখেছেন ট্রাফালগার স্কয়ারের খোলা জায়গায় বড় পর্দায়। দক্ষিণ এশিয়ার মানুষগুলোর চোখ ছিল বাসায় টিভি পর্দায়। একমাত্র স্কাই স্পোর্টসই এ বিশ্বকাপের খেলা দেখালেও ইংল্যান্ড ফাইনাল খেলছে বলে চ্যানেল ফোরও এ ম্যাচ দেখার সুযোগ করে দেয় ইংল্যান্ডের টিভি দর্শকদের।
ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও শিরোপার স্বাদ নিতে পারেনি ইংল্যান্ড। ক্রিকেটের জনক খ্যাত ইংল্যান্ড এবার ছিল চতুর্থবারের মতো শিরোপার লড়াইয়ে। আর সে লক্ষ্যেই ইংলিশ বোলাররা চাপে রেখেছিল নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের। টসে জিতে নিউজিল্যান্ড ব্যাট করতে গেলেও শুরু থেকে শেষ পর্যন্তই ছিল চাপের মধ্যে। ছয় কিংবা চারের কোনো চমক তারা দেখাতে না পারলেও ইংল্যান্ডকে ২৪২ রানের টার্গেট দিয়ে তাদের ইনিংস শেষ করে। উচ্ছ্বাস-উল্লাসের মাঝেই দর্শক গ্যালারি ছিল উৎকণ্ঠায়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাসায় কিংবা গ্যালারিতে সবারই একই চাওয়া শিরোপা উঠুক এবার স্বাগতিক ব্রিটেনের ঘরেই।
সমর্থকদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। তবে সহজে নয়। বলতে গেলে হারতে হারতেই জিতেছে ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপের ফাইন্যাল তো দূরের কথা : এমন রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ ক্রিকেটবিশ্ব খুব কমই দেখেছে। ইংলিশদের ব্যাটিংয়ের নির্ধারিত ওভারের শেষ বলটি পর্যন্ত কেউ ধারণা করতে পারেননি ম্যাচের ফলাফল কী হচ্ছে। কখনো এদিকে হেলেছে তো কখনো ওদিকে। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। সেখানে শেষ বলটিতে পর্যন্ত ছিল চরম অনিশ্চয়তা আর উত্তেজনা। এমন মহাকাব্যিক একটা ম্যাচের পর শেষ হাসিটা হেসেছে ইংল্যান্ডই। আর এমন অনিশ্চয়তায় ঠাসা বলেই তাদের উদযাপনে দেখা যায় বাঁধ ভাঙা উল্লাস। আর ইংল্যান্ড সমর্থকদের উল্লাস তো ছিল মাত্রা ছাড়া। তবে ম্যাচের মাহাত্ম্য বিবেচনায় তা মোটেও অপ্রত্যাশিত ছিল না।