রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
গোপালগঞ্জে জনমনে আতঙ্ক, কারফিউর সঙ্গে বাড়ছে গ্রেফতার  » «   এখন লড়াই নতুন বাংলাদেশের, বক্তৃতার সময় লুটিয়ে পড়লেন আমির  » «   এবার চকরিয়ায় বিএনপির প্রতিরোধের মুখে এনসিপির পথসভা পণ্ড  » «   গণতন্ত্রবিরোধীরা আবার জোট পাকাচ্ছে বলে মির্জা ফখরুল কাদেরকে ইঙ্গিত করলেন?  » «   চালু হলো স্টারলিংক, বাংলাদেশের মতো এত দ্রুত বিশ্বের আর কোথাও হয়নি  » «   গণ–অভ্যুত্থান যেটা বলা হচ্ছে, সেটা আসলে বিস্ফোরণ  » «   ইসলামপন্থিদের হুমকি সত্ত্বেও জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় বাংলাদেশে  » «   গোপালগঞ্জে যারা মারা গেলেন তারা কোন দলের?  » «   গোপালগঞ্জে সহিংস পরিস্থিতির পেছনে এনসিপি’র দায় কতটা?  » «   গোপালগঞ্জে কারফিউয়ের সময় বাড়লো, ‘মৃত্যুর দায় সরকার এড়াতে পারে না’  » «   গোপালগঞ্জে এনসিপির জনসভায় লোক ছিলেন ২০০ জন : পুলিশ প্রতিবেদনে যা উঠে এলো  » «   আবারও গোপালগঞ্জ যাওয়ার ঘোষণা নাহিদের, সরকার ও এনসিপি’র সমালোচনায় বিএনপি  » «   গোপালগঞ্জে কারফিউ, চলছে ধরপাকড়, সরকারের তদন্ত কমিটি  » «   ‘জুলাই শহীদ দিবসে’ রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে একি লেখা!  » «   নাহিদ-হাসনাতদের এপিসিতে ওঠার ব্যাখ্যা দিলেন এনসিপি নেতা  » «  

ভয়ঙ্কর তথ্য মালয়েশিয়া পুলিশ প্রধানের : সিরিয়া ও বাংলাদেশে ‘আইএস তহবিলে অর্থ পাঠাত’ গ্রেপ্তার বাংলাদেশিরা



মালয়েশিয়ায় সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশি নাগরিকরা সিরিয়া ও বাংলাদেশে ‘ইসলামিক স্টেট (আইএস)’ এর সেলগুলোতে অর্থ পাঠাতেন—এমন তথ্য জানিয়েছেন দেশটির পুলিশ প্রধান।

শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল জানান, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে একাধিক অভিযান চালিয়ে ৩৬ জন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। তারা মূলত কারখানা, নির্মাণ ও সেবামূলক খাতে কর্মরত ছিলেন।

রয়টার্স জানিয়েছে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে ২০১৬ সালে আইএস সন্ত্রাসীদের হামলার পর দেশটির পুলিশ শত শত সন্দেহভাজনকে আটক করেছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে আঞ্চলিক সন্ত্রাসবিরোধী তৎপরতা জোরদার হওয়ায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।

বিদেশি শ্রমিকের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল মালয়েশিয়া প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক গ্রহণ করে, যার একটি বড় অংশ বাংলাদেশি।

পুলিশপ্রধান খালিদ ইসমাইল জানান, আটক বাংলাদেশিদের একটি চক্র অন্যান্য বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্য থেকে সদস্য সংগ্রহ করছিল এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে উগ্রবাদী চিন্তাধারা ছড়িয়ে দিচ্ছিল।

তার ভাষ্য অনুযায়ী, চক্রটি আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সেবা এবং ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে সিরিয়া ও বাংলাদেশে আইএসের জন্য অর্থ পাঠাতো। তিনি বলেন, “মালয়েশিয়া পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট অর্থ সংগ্রহের স্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছে। তারা ঠিক কত অর্থ সংগ্রহ করেছে তা এখনও তদন্তাধীন। আমাদের ধারণা, সদস্য ফি ও চাঁদা থেকেই এই অর্থ এসেছে।”

মালয়েশিয়া স্টার পত্রিকার তথ্যমতে, ‘গেরাকান মিলিটান র্যাডিকাল বাংলাদেশ’ (জিএমআরবি) নামে পরিচিত এই চক্র হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ ও উগ্র মতবাদ প্রচার করছিল।

পুলিশপ্রধান বলেন, “আমাদের বিশ্বাস, হোয়াটসঅ্যাপে তাদের সদস্য সংখ্যা ১০০ থেকে ১৫০ জনের মতো। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, প্রতি সদস্যকে বছরে ৫০০ রিংগিত করে ফি দিতে হতো, তবে চাঁদার পরিমাণ ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন ছিল।”

এই চক্রের সঙ্গে কোনো আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক আইএস সেলের সরাসরি সংযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে খালিদ ইসমাইল বলেন, “এ বিষয়ে তদন্ত এখনো চলমান।”

তিনি আরও জানান, মালয়েশিয়া সরকার অন্যান্য দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ইন্টারপোলের সঙ্গে সমন্বয় করে এই সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক চিহ্নিত করার কাজ করছে।

গ্রেপ্তারদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। ১৫ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর ১৬ জন এখনো পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন এবং তাদের ব্যাপারে তদন্ত চলছে বলে জানান পুলিশপ্রধান।

তিনি বলেন, “যাদের সংশ্লিষ্টতা কম, তাদের ফেরত পাঠানো হবে। যাদের সম্পৃক্ততা গুরুতর, তাদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

গত ২৭ জুন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসিউশন ইসমাইল প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমে এই ৩৬ বাংলাদেশিকে জঙ্গি সন্দেহে আটকের বিষয়টি জানান।

তিনি বলেছিলেন, “আটক ব্যক্তিরা আইএসের মতাদর্শ মালয়েশিয়ায় ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছিল এবং নিজেদের মধ্যে সদস্য সংগ্রহের জন্য সেল তৈরি করেছিল। তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থ জোগান এবং বাংলাদেশের বৈধ সরকার উৎখাতের পরিকল্পনাও করছিল।”

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে বলেন, “তাদের সন্ত্রাসবাদ-সন্দেহে আটক করা হয়েছে—আমরা বিস্তারিত জানতে চেয়েছি। আশা করছি, দুই-চার দিনের মধ্যে স্পষ্ট হবে তাদের প্রকৃত অবস্থা কী। কয়েকজনের বিরুদ্ধে হয়তো নির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের বিচার হবে। বিষয়টি এখনও পরিবর্তনশীল।”

ফেরত পাঠানোদের ব্যাপারে তিনি বলেন, “অনেককেই তারা বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে। স্বাভাবিকভাবে আমাদেরও যাচাই করতে হবে তারা কতটা সম্পৃক্ত, এবং কোন সংগঠনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক রয়েছে—সেটি আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খতিয়ে দেখবে।”

এই ঘটনায় বাংলাদেশিদের বিদেশে ভিসা পাওয়ায় কোনো প্রভাব পড়বে কিনা—এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, “যে কোনো নেতিবাচক বিষয়ই ভিসা প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে। তবে আমরা যদি সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করি, তাহলে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।”

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের করণীয় হলো বিষয়টি খতিয়ে দেখা—যদি কেউ এই ধরনের অপরাধে জড়িত থাকে, তাহলে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করা।”

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন