রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
গোপালগঞ্জে জনমনে আতঙ্ক, কারফিউর সঙ্গে বাড়ছে গ্রেফতার  » «   এখন লড়াই নতুন বাংলাদেশের, বক্তৃতার সময় লুটিয়ে পড়লেন আমির  » «   এবার চকরিয়ায় বিএনপির প্রতিরোধের মুখে এনসিপির পথসভা পণ্ড  » «   গণতন্ত্রবিরোধীরা আবার জোট পাকাচ্ছে বলে মির্জা ফখরুল কাদেরকে ইঙ্গিত করলেন?  » «   চালু হলো স্টারলিংক, বাংলাদেশের মতো এত দ্রুত বিশ্বের আর কোথাও হয়নি  » «   গণ–অভ্যুত্থান যেটা বলা হচ্ছে, সেটা আসলে বিস্ফোরণ  » «   ইসলামপন্থিদের হুমকি সত্ত্বেও জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় বাংলাদেশে  » «   গোপালগঞ্জে যারা মারা গেলেন তারা কোন দলের?  » «   গোপালগঞ্জে সহিংস পরিস্থিতির পেছনে এনসিপি’র দায় কতটা?  » «   গোপালগঞ্জে কারফিউয়ের সময় বাড়লো, ‘মৃত্যুর দায় সরকার এড়াতে পারে না’  » «   গোপালগঞ্জে এনসিপির জনসভায় লোক ছিলেন ২০০ জন : পুলিশ প্রতিবেদনে যা উঠে এলো  » «   আবারও গোপালগঞ্জ যাওয়ার ঘোষণা নাহিদের, সরকার ও এনসিপি’র সমালোচনায় বিএনপি  » «   গোপালগঞ্জে কারফিউ, চলছে ধরপাকড়, সরকারের তদন্ত কমিটি  » «   ‘জুলাই শহীদ দিবসে’ রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে একি লেখা!  » «   নাহিদ-হাসনাতদের এপিসিতে ওঠার ব্যাখ্যা দিলেন এনসিপি নেতা  » «  

তালেবানকে প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার স্বীকৃতি



আফগানিস্তানে তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই ২০২৫) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে।
২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে তালেবান যখন আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে, তখন থেকেই রাশিয়া তাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল।
চার বছর পর বৃহস্পতিবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তালেবান কর্তৃপক্ষের নিয়োগ দেওয়া আফগানিস্তানের নতুন রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র তারা গ্রহণ করেছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, “আফগানিস্তানে ইসলামী আমিরাত সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে গঠনমূলক সহযোগিতা বিকাশে গতি দেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”
এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে রাশিয়া বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈধতা দিল।
আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি বৃহস্পতিবার রাশিয়ার কাবুল দূতাবাসে দেশটির রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি জিরনোভের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশিত এক ভিডিওতে তিনি বলেন, “এই সাহসী সিদ্ধান্ত অন্যদের জন্যও একটি দৃষ্টান্ত হবে। এখন যেহেতু স্বীকৃতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, রাশিয়াই প্রথম পদক্ষেপ নিল।”
তবে রাশিয়ার এই সিদ্ধান্ত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ওয়াশিংটন- এমনটাই বলা হয়েছে আল জাজিরার প্রতিবেদনে।
যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিলিয়ন ডলারের সম্পদ হিমায়িত করে রেখেছে এবং তালেবান শীর্ষ নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যার ফলে দেশটির ব্যাংকিং ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক আর্থিক খাত থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
মূলত যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার পতন ঘটিয়ে তালেবানরা ক্ষমতায় আসে। সে সময় রাশিয়া মার্কিন সেনা প্রত্যাহারকে ‘ব্যর্থতা’ বলে উল্লেখ করে এবং তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে উদ্যোগ নেয়। এরপর থেকেই তালেবান ও রাশিয়ার মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে।
২০২২ ও ২০২৪ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে রাশিয়ার অর্থনৈতিক ফোরামে তালেবান প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। ২০২৩ সালের অক্টোবরে তালেবান সরকারের শীর্ষ কূটনীতিক মস্কোতে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে বৈঠক করেন।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তালেবানকে ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মিত্র’ বলে অভিহিত করেন।
বিশেষ করে আফগানিস্তান ও রাশিয়ায় একাধিক ভয়াবহ হামলার জন্য দায়ী ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রদেশ (আইএসকেপি)-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তালেবানকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র বলে উল্লেখ করেন।
চলতি বছরের এপ্রিলে রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট তালেবানকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে যে তালিকায় রেখেছিল, সেটি তুলে নেয়।
রাশিয়ার তালেবানপ্রীতি সাম্প্রতিক বছরেই গড়ে উঠলেও এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন।
তালেবান গঠিত হয় ১৯৯৪ সালে আফগান গৃহযুদ্ধের সময়, মূলত সেই সব মুজাহিদিনদের দ্বারা যারা ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় যুদ্ধ করেছিল।
সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ রাশিয়ার জন্য একটি তিক্ত পরাজয় ছিল, যা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ত্বরান্বিত করেছিল বলে ধারণা করা হয়।
২০০৩ সালে তালেবানকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে রাশিয়া। কারণ তারা উত্তর ককেশাসে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন দিয়েছিল বলে অভিযোগ ছিল।
তবে ২০২১ সালে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর, রাশিয়াসহ অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তিগুলো বাস্তবতা মেনে নিতে শুরু করে এবং প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় নামে।
তালেবান সরকারকে শুরুতে স্বীকৃতি না দিলেও রাশিয়া ছিল প্রথম দেশ যারা আফগানিস্তানে ব্যবসায়িক প্রতিনিধি অফিস চালু করে। একইসঙ্গে দেশটি আফগানিস্তানকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় গ্যাস পরিবহনের জন্য একটি ট্রানজিট হাব হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনাও করে।
যদিও এখনো বিশ্বের কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। জাতিসংঘ এখনো এই সরকারকে ‘তালেবান দ্য ফ্যাক্টো অথরিটিজ’ হিসেবে উল্লেখ করে থাকে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন