বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর উত্তরায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামায়াতে ইসলামীর প্রতি কঠোর সমালোচনা করেন।
দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াতকে এবার কটাক্ষ করেন বিএনপি মহাসচিব। তার মতে, এখন যেহেতু দেশে কোনো নির্বাচন নেই, তাই জামায়াতের গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন শুরু হলে তারাই সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বে, সে কারণেই দলটি ভোটমুখী নয়।
বুধবার উত্তরায় বিএনপির সদস্য নবায়ন কার্যক্রম উদ্বোধনের সময় এ মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
জামায়াতের পক্ষ থেকে আগের দিন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশ না নেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শুরুতেই তীর ছোড়েন ফখরুল। তিনি বলেন, “লন্ডনে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক একটি দলের পছন্দ হয়নি। সে কারণে তারা অসন্তুষ্ট হয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের গতকালের বৈঠকে অনুপস্থিত ছিল।”
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত বৃহস্পতিবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি আয়োজনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়।
এ সিদ্ধান্ত যে জামায়াতের অপছন্দ হয়েছে, তারা তা গোপন রাখেনি। শনিবার এক বিবৃতিতে দলটি জানায়, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাবের মাধ্যমে বিএনপির প্রতি প্রধান উপদেষ্টার পক্ষপাত স্পষ্ট হয়েছে এবং এতে তিনি নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন।
জামায়াত বিবৃতিতে আরও জানায়, “আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে কিনা, তা নিয়ে জনগণের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।”
মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা বৈঠকে গণঅভ্যুত্থনপন্থী সব দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও জামায়াত তাতে যোগ দেয়নি। তাদের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়, কেবল বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে ভোটের সময় এগিয়ে আনার সিদ্ধান্তই এই অনুপস্থিতির কারণ।
প্রধান উপদেষ্টা যখন চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণে কথা বলছিলেন, তখন জামায়াত সে অবস্থানকে সমর্থন করেছিল। ঈদের আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণেও তিনি যখন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের কথা বলেন, তখনও জামায়াত তার প্রতি সমর্থন জানায়।
লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে জামায়াতকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, “সংঘর্ষ এড়িয়ে দুই নেতা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—এটাই রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতৃত্বের নিদর্শন।
“রাষ্ট্রনায়ক সবসময় জনগণের কল্যাণের কথা ভাবেন, বিভাজনের পথে না গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন নিশ্চিত করেন। তবে এই শান্তি কিছু দলের পছন্দ হয়নি। কারণ, নির্বাচন হলেই তাদের ক্ষতি। এখন নির্বাচন না থাকায় তাদের গুরুত্ব বেড়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন হলে জনগণের ভালোবাসায় বিজয়ী দল ক্ষমতায় আসবে এবং তাতে তাদের গুরুত্ব কমে যাবে—এটা তারা জানে। সে কারণেই তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ঐকমত্যের বৈঠকে অংশ নেয়নি।”
১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট গঠনের পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দুই দলের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এখন তারা একে অপরকে ‘শত্রু’ হিসেবে দেখছে।
বিএনপি এখন জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা সামনে এনে দলটিকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ বলছে, আর পাল্টা জামায়াত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ তুলছে।
‘আওয়ামী লীগের মতো নয়’
নিজ দলের নেতাকর্মীদের আচরণে সংযম আনতে বলেন ফখরুল। তিনি বলেন, “যারা আওয়ামী লীগের মতো আচরণ করে, জোর করে অধিকার কেড়ে নেয়, চাঁদাবাজি করে—তারা ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগে পরিণত হয়। এই আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ চাই, পরিবর্তন চাই। আগের শাসন আর চাই না।”
তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বার্তাও স্মরণ করিয়ে দেন: “তারেক রহমানও বলেছেন, ভয় দেখিয়ে বা মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে ভোট পাওয়া যায় না; বরং বিনয়ের সঙ্গে ভোট চাইতে হবে।”
আওয়ামী লীগের সদস্য নয়
সদস্যপদ নবায়নের সময় আওয়ামী লীগের কেউ যেন বিএনপিতে না ঢুকে, সে বিষয়ে সতর্ক করেন তিনি। ফখরুল বলেন, “কারণ, এটা প্রমাণিত—আওয়ামী লীগের কেউই ভালো নয়। তারা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া কিছু দেখে না। তাই তাদের কাউকে আমাদের দলে নেওয়া যাবে না।”
তবে নিরপেক্ষ কেউ থাকলে, তাদের দলে আহ্বান জানানো হবে বলেও জানান তিনি।