মিয
মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধরত আরসা
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির থেকে সদস্য সংগ্রহ করছে কয়েকটি রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা মিয়ানমারের আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা আরও বাড়বে এবং রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনাও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
বুধবার (১৮ জুন) প্রকাশিত আন্তর্জাতিক সংস্থা ক্রাইসিস গ্রুপের এক প্রতিবেদনে এসব আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার: রোহিঙ্গা বিদ্রোহের ঝুঁকি’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে শরণার্থী শিবিরে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য সংগ্রহের হুমকি এবং তা মোকাবিলায় করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আরাকান আর্মির টানা সাফল্যের কারণে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বহুদিন ধরেই সংঘাতে জড়িত এসব গোষ্ঠী ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে লড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সহিংসতার মাত্রা কিছুটা কমলেও শরণার্থী শিবিরে সদস্য সংগ্রহ বেড়েছে, বিশেষ করে ধর্মীয় প্ররোচনার মাধ্যমে, যেহেতু আরাকান আর্মি রাখাইনের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছে।
প্রতিবেদনটি আরও জানায়, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের প্রায় পুরো এলাকাই বর্তমানে আরাকান আর্মির দখলে রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকার তাদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেয়। তবে রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলো যদি আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে সেই আলোচনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও জটিল হয়ে উঠবে।
২০২৪ সালের শুরুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের নিজেদের পক্ষে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। যদিও অতীতে এই গোষ্ঠীগুলো সেনাবাহিনীর বিরোধিতা করেছে, এবার আরাকান আর্মিকে ঠেকাতে তারা ভিন্ন কৌশল নেয়। তবে সামরিক বাহিনীর এই পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত তেমন কোনো সফলতা পায়নি।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। রোহিঙ্গা শিবিরে সহিংসতা কমিয়ে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের আগ্রহ রয়েছে। একইসঙ্গে, কিছু বিশ্লেষকের মতে, রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে আরাকান আর্মির ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল নেওয়া হয়েছে যাতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়া যায়। বিশেষ করে ২০১৭ সালে যেসব এলাকা থেকে রোহিঙ্গারা বিতাড়িত হয়েছিল, বর্তমানে সেসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ আরাকান আর্মির হাতে।
অন্যদিকে, জান্তা সরকারের বিরোধিতার কারণে আরাকান আর্মি মিয়ানমারের সাধারণ জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গারা যদি তাদের বিরোধিতা করে, তাহলে মিয়ানমারের জনগণের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব আরও বাড়তে পারে।
প্রতিবেদনে ক্রাইসিস গ্রুপের মত হলো, বাংলাদেশের উচিত আরাকান আর্মির সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করা, রাখাইন রাজ্যে বাণিজ্য ও সহায়তা সম্প্রসারণ এবং শরণার্থী শিবিরে সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রভাব কমিয়ে আনা। এতে সীমান্ত এলাকায় স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং রোহিঙ্গাদের নাগরিক সমাজ গড়ে উঠবে। একইসঙ্গে, আরাকান আর্মিরও উচিত রোহিঙ্গাদের আস্থা অর্জনে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া এবং দেখানো যে তারা সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে শাসন পরিচালনায় সক্ষম।
যুক্তরাষ্ট্র যখন রোহিঙ্গাদের জন্য বৈদেশিক সহায়তা হ্রাস করছে, তখন আন্তর্জাতিক দাতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরগুলোর জন্য সহায়তা আরও বাড়ানোর জন্য।