সরকারি প্রতিবন্ধী সুবিধা বা ডিজেবিলিটি বেনিফিট কাটছাঁটের প্রভাব টাওয়ার হ্যামলেটসের ১৬ হাজার ৩৮৮টি পরিবারে পড়তে পারে—নতুন এক বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এই কাটছাঁট মূলত পার্সোনাল ইনডিপেনডেন্ট পেমেন্ট (পিআইপি) এবং লিমিটেড ক্যাপাবিলিটি ফর ওয়ার্ক–রিলেটেড অ্যাক্টিভিটি (এলসিডব্লিউআরএ) সুবিধাকে লক্ষ্য করে করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল বারার প্রতিবন্ধী বাসিন্দাদের সহায়তায় ৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ড অতিরিক্ত বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। শুক্রবার, ১৩ জুন কাউন্সিলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ‘মেয়র’স ডিসঅ্যাবিলিটি রোডশো’তে এই ঘোষণা দেন নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান।
এই বিনিয়োগের আওতায় ফ্রি হোমকেয়ার সেবার জন্য বরাদ্দ থাকবে অতিরিক্ত ৫ মিলিয়ন পাউন্ড, যার ফলে টাওয়ার হ্যামলেটস দেশের মধ্যে হ্যামারস্মিথ অ্যান্ড ফুলহামের পর দ্বিতীয় কাউন্সিল হিসেবে এই সেবা চালু করতে যাচ্ছে। এছাড়াও, প্রযুক্তিনির্ভর সহায়ক সেবার উন্নয়নে ব্যয় হবে ১ দশমিক ১০৮ মিলিয়ন পাউন্ড, যা বাসিন্দাদের জন্য জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক সরঞ্জাম সরবরাহে কাজে লাগবে।
বিশেষ শিক্ষা ও প্রয়োজনবিশিষ্ট তরুণদের (সেন্ড) প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে প্রবেশে সহায়তা করতে একটি বিশেষ কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ মিলিয়ন পাউন্ড। পাশাপাশি মেয়রের কমিউনিটি গ্রান্ট ফান্ডের আওতায় ডিজেবল ব্যক্তিদের সহায়তায় নিয়োজিত বিভিন্ন সংগঠন পাবে আরও ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন পাউন্ড।
হোয়াইটচ্যাপেলের টাওয়ার হ্যামলেটস টাউন হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন বারার ডিজেবল বাসিন্দা, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও কেয়ার সংশ্লিষ্ট কমিউনিটি সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা। আলোচনা পর্বটি সঞ্চালনা করেন কাউন্সিলের প্রিন্সিপাল সোশ্যাল ওয়ার্কার সারা মারফি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান, ডেফপ্লাস-এর নির্বাহী পরিচালক রেজ কোব, ভ্যালান্স কমিউনিটি স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের কমিউনিটি ম্যানেজার ইকবাল হোসেন এবং হেলথ, ওয়েলবিয়িং অ্যান্ড সোশ্যাল কেয়ার বিষয়ক কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর সাবিনা আক্তার।
নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, “বারার ডিজেবল কমিউনিটির প্রতি আমাদের অঙ্গীকার অপরিবর্তিত। এই রোডশোর মাধ্যমে আমরা স্থানীয় সেবাগুলো আরও সহজলভ্য করে তুলতে চাইছি। সরকারের ডিজেবল বেনিফিট কাটছাঁট ইতিমধ্যে সারাদেশের দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা হাজারো পরিবারকে চাপের মুখে ফেলেছে। আমরা স্থানীয়ভাবে যা সম্ভব করছি, তা করছি; কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে এই কাটছাঁট বন্ধ হওয়া জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “টাওয়ার হ্যামলেটস সবসময় সংকটে থাকা বাসিন্দাদের পাশে থেকেছে—হোক তা শীতকালীন জ্বালানির ভাতা পুনর্বহাল করা কিংবা সার্বজনীন বিনামূল্যে স্কুল মিল চালু করা। শেষ পর্যন্ত সরকার আমাদের পদক্ষেপই অনুসরণ করে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এখনও তারা দেশের সব শিশুর জন্য বিনামূল্যে স্কুল মিল নিশ্চিত করতে পারেনি, যার ফলে আজও অনেক শিশু ক্ষুধার্ত অবস্থায় স্কুলে যায়।”
মেয়র লুৎফুর রহমান আরও বলেন, “জাতীয় সরকারের দায়িত্ব স্থানীয় কর্তৃপক্ষের পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, যেন তারা এই কাটছাঁট প্রত্যাহার করে এবং সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত করে।”
হেলথ, ওয়েলবিয়িং অ্যান্ড সোশ্যাল কেয়ার বিষয়ক কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর সাবিনা আক্তার বলেন, “এ ধরনের রোড শো আয়োজন কমিউনিটির মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিজেবল বাসিন্দাদের জন্য আরও সমন্বিত সেবা নিশ্চিত করতেই আমরা কাজ করছি। তাদের জন্য আমাদের এই অতিরিক্ত বিনিয়োগ তাদের মৌলিক মানবাধিকার এবং উন্নত জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।”
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন তথ্যকেন্দ্র বা স্টল ঘুরে দেখেন, যেখানে তারা সহায়ক প্রযুক্তি, চাকরির সুযোগ এবং সামাজিক সেবাসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন।