প্রথমে প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনা হয়, এরপর ইউনূস ও তারেক রহমান একান্তে দীর্ঘ সময় কথা বলেন। তবে একান্ত আলোচনায় কী বিষয় উঠে এসেছে, সে সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে কিছু জানানো হয়নি।
লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা) বৈঠক শুরু হয়ে শেষ হয় সকাল সাড়ে ১০টায় (বাংলাদেশ সময় সাড়ে ৩টা)। এরপর বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটার দিকে একই হোটেলে যৌথ সংবাদ সম্মেলন হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান একটি যৌথ বিবৃতি পড়ে শোনান। এতে বলা হয়, অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠকটি অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারেক রহমান নির্বাচন আগামী বছরের রমজানের আগে আয়োজনের প্রস্তাব দেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও মনে করেন, সে সময় নির্বাচন হলে ভালো হয়। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা জানান, তিনি ২০২৬ সালের রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে রমজানের ঠিক আগের সপ্তাহেও নির্বাচন সম্ভব। তবে সে সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচার–বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি প্রয়োজন হবে। এই অবস্থানকে স্বাগত জানান তারেক রহমান এবং দলীয় পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান প্রধান উপদেষ্টাকে। ইউনূসও তাঁকে ধন্যবাদ জানান গঠনমূলক আলোচনার জন্য।
বিবৃতি পাঠ শেষে প্রেস সচিব জানান, সাতটি প্রশ্ন নেওয়া হবে এবং তা করা যাবে খলিলুর রহমান ও আমীর খসরুকে উদ্দেশ্য করে। এরপর প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়।
সংস্কার প্রসঙ্গ
এক সাংবাদিক জানতে চান, জুলাই সনদ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না। জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা চলছে দেশে। আমাদের সিদ্ধান্ত হলো, ঐকমত্যের ভিত্তিতেই জুলাই সনদ হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কার নিয়েও একই কথা প্রযোজ্য। ঐকমত্য হলে সংস্কার ও জুলাই সনদ—দুটোই হবে। আমি নিশ্চিত, খুব অল্প সময়েই আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারব।’
সম্পূরক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যেখানে ঐকমত্য হবে, সেখানে স্বাক্ষর তো হবেই, না হওয়ার কোনো কারণ নেই।’ তবে আরেকটি প্রশ্ন করতে গেলে প্রেস সচিব ‘প্লিজ, প্লিজ’ বলে সাংবাদিককে থামিয়ে অন্য একজনকে প্রশ্নের সুযোগ দেন।
নির্বাচনের তারিখ ও তারেকের দেশে ফেরা
নির্বাচনের তারিখ প্রসঙ্গে এক সাংবাদিক জানতে চাইলে খলিলুর রহমান বলেন, ‘এই বিষয়ে কোনো সমস্যাই নেই। কেউ যদি কোনো সমস্যা দেখেন, সেটি ভুল দেখছেন। যৌথ বিবৃতিতেই আমরা বলেছি, এবং আশা করি নির্বাচন কমিশন শিগগিরই তারিখ ঘোষণা করবে।’
বৈঠকে কেবল নির্বাচন নয়, দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে আমীর খসরু বলেন, ‘সব বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে এগোচ্ছি। শুধু নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের পরেও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
সংস্কার প্রসঙ্গে আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে আমীর খসরু বলেন, ‘এটা পরিষ্কার যে সংস্কার হবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচনের আগে কিছু সংস্কার হবে, আবার নির্বাচনের পরেও তা অব্যাহত থাকবে।’
তারেক রহমান দেশে কবে ফিরবেন—এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ‘এ বিষয়ে আলোচনা প্রাসঙ্গিক মনে হয়নি। তিনি যখন ইচ্ছা দেশে ফিরতে পারবেন। সিদ্ধান্ত তাঁর নিজের।’
‘নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট’
এক সাংবাদিক জানতে চান, শেখ হাসিনার হত্যাযজ্ঞের বিচারপ্রক্রিয়া ও নির্বাচনের রূপরেখার সঙ্গে তার কোনো সংযোগ আছে কি না। উত্তরে খলিলুর রহমান বলেন, ‘যৌথ বিবৃতিতেই বলা হয়েছে, সংস্কার ও বিচার–বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি হবে বলে আমরা আত্মবিশ্বাসী।’ আমীর খসরু সংযোজন করেন, ‘সম্পন্ন করা যাবে।’
নতুন দল এনসিপি নির্বাচন কমিশনের সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না—এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ‘এখানে এ বিষয়ে আলোচনার সুযোগ নেই।’ খলিলুর রহমান বলেন, ‘এটা এনসিপিকে জিজ্ঞেস করুন। প্রতিটি দলের নিজস্ব মতামত আছে। আমরা সবাইকে নিয়েই নির্বাচন করতে চাই।’
এপ্রিলের ঘোষিত রূপরেখা থেকে সরকার কি সরে আসছে—এমন প্রশ্নে খলিলুর রহমান বলেন, ‘যৌথ ঘোষণায় এ বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। সব কিছু সময়মতো হলে এবং পর্যাপ্ত অগ্রগতি নিশ্চিত হলে, অবশ্যই তা করা যেতে পারে।’ আমীর খসরু যোগ করেন, ‘প্রথমে প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনা হয়, পরে ইউনূস ও তারেক রহমান একান্তে দীর্ঘ সময় আলোচনা করেন।’
সংবাদ সম্মেলনের শেষ প্রশ্ন ছিল, ‘আপনারা কি সন্তুষ্ট?’ খলিলুর রহমান ও আমীর খসরু একসঙ্গে উত্তর দেন, ‘নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট।’ খসরু বলেন, ‘নির্বাচনের আগেই নয়, নির্বাচনের পরেও নতুন বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ খলিলুর রহমান বলেন, ‘সন্তুষ্ট না হলে যৌথ ঘোষণা আসত না।’