বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
ইরানে আগেও সরকার হটিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, তার কী ফল হয়েছিল?  » «   ইরানে হামলার পরিকল্পনা অনুমোদন ট্রাম্পের  » «   আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি কে, কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?  » «   ‘ইরান আত্মসমর্পণ করবে না’ : জাতির উদ্দেশে খামেনির ভাষণ  » «   ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে হট্টগোল, সংলাপে ফিরে জামায়াত বললো-ইউনূস ‘নিরপেক্ষতা’ হারিয়েছেন  » «   ইরান-ইসরায়েল সংঘাত : রাশিয়া কোন পক্ষে?  » «   নির্বাচন হলেই তাদের বিপদ: জামায়াতকে ফখরুলের কটাক্ষ  » «   দশ মাস পরও ভাঙ্গা হচ্ছে ভাস্কর্য, ‘অঞ্জলি লহ মোর’ নিয়ে সমালোচনার ঝড়  » «   আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা  » «   লন্ডনের স্বাস্থ্যকর স্কুল অ্যাওয়ার্ড অর্জনে শীর্ষে টাওয়ার হ্যামলেটস  » «   “মেয়র’স ডিসঅ্যাবিলিটি রোড শো” অনুষ্ঠিত  » «   আমিরাতে হিজরি নববর্ষ উপলক্ষে ছুটি : পাবেন প্রবাসীরাও  » «   আমিরাতের ভিসা অনিয়মকারীদের মধ্যে ২৫ শতাংশের বেশি বাংলাদেশি  » «   মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে সৎ বাবার ফাঁসি  » «   তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় গুঁড়িয়ে গেল বাংলাদেশি কূটনীতিকের বাসভবন  » «  

তর্ক-বিতর্কে মানুষকে ছাড়িয়ে যেতে পারে এআই: গবেষণার এই ফল উদ্বেগের



এআইকে ব্যক্তিগত তথ্য দিলে এটি আরও বেশি সক্ষম হয়ে ওঠে। অথচ মানুষের বেলায় এমনটা হয়নি

তর্ক-বিতর্কে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মানুষের চেয়ে ভালো পারফর্ম করতে পারে এবং কখনও কখনও মানুষকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে—এমনটাই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। গবেষকরা বলছেন, শুধু এ কারণে যে এআই চিৎকার করে কথা বলে না, তা মানে এই নয় যে এটি বিতর্কে অংশ নিতে পারে না। বরং কাউকে যুক্তির মাধ্যমে রাজি করাতে এআই অনেক সময় মানুষের সমতুল্য কিংবা আরও দক্ষ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গবেষণার এই ফল উদ্বেগের বিষয়, কারণ এর ফলে নির্বাচনসহ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

গবেষণাটির প্রধান লেখক এবং সুইজারল্যান্ডের লোজানের ‘সুইস ফেডারেল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি’র গবেষক ফ্রানচেস্কো সালভি বলেন, “যদি এআইকে এমনভাবে ব্যবহার করা যায় যাতে এটি অনেক মানুষের ‘মন গলাতে’ পারে, তাহলে কল্পনা করুন—অসংখ্য বট সিদ্ধান্তহীন ভোটারদের লক্ষ্য করে তাদের জন্য আলাদা আলাদা রাজনৈতিক বার্তা পাঠাবে, যা বাস্তব বলে মনে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের প্রভাব শনাক্ত করা কঠিন, নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন এবং তাৎক্ষণিকভাবে ভুল প্রমাণ করাও প্রায় অসম্ভব। আমি বিস্মিত হব যদি ইতিমধ্যে কেউ এ ধরনের টুল খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণা ছড়ানো শুরু না করে থাকে।”

তবে সালভি মনে করেন, এআইয়ের কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। যেমন—ষড়যন্ত্রমূলক বিশ্বাস কমানো, রাজনৈতিক বিভাজন হ্রাস এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারার প্রতি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা।

গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে বৈজ্ঞানিক সাময়িকী নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার-এ। এতে সালভি ও তার সহকর্মীরা তিনশ জন অংশগ্রহণকারীকে তিনশ জন মানব প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে এবং আরও তিনশ জনকে চ্যাটজিপিটি-৪-এর সঙ্গে যুক্ত করে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন। চ্যাটজিপিটি-৪ একটি লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম)।

প্রতিটি অংশগ্রহণকারী জুটিকে একটি নির্দিষ্ট বিতর্কের বিষয় দেওয়া হয়। বিষয়গুলো ছিল সহজ থেকে শুরু করে বিতর্কিত পর্যন্ত—যেমন, “শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল ইউনিফর্ম বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত কি না” অথবা “গর্ভপাত কি বৈধ হওয়া উচিত?”। প্রতিটি অংশগ্রহণকারীকে যেকোনো একটি পক্ষে বা বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য এলোমেলোভাবে নির্বাচন করা হয়।

জুটির অর্ধেকের ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী (মানুষ বা এআই) সম্পর্কে অতিরিক্ত কিছু ব্যক্তিগত তথ্য যেমন বয়স, লিঙ্গ, জাতিগোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ সরবরাহ করা হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০০ বিতর্কের ফলাফলে, ব্যক্তিগত তথ্য না থাকলেও, চ্যাটজিপিটি-৪ মানুষকে রাজি করাতে মানুষের মতোই দক্ষ ছিল।

গবেষকরা জানান, এআইকে যখন ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহ করা হয়, তখন এটি আরও কার্যকর হয়ে ওঠে। তবে মানুষের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায়নি। যেসব ক্ষেত্রে এআই ও মানুষের মধ্যে পার্থক্য পাওয়া গেছে, তার মধ্যে ৬৪ শতাংশ সময়েই মানুষকে নিজেদের মত পরিবর্তনে সফল হয়েছে এআই।

গবেষণায় আরও উঠে আসে, যেসব বিতর্কে অংশগ্রহণকারীদের মতামত খুব দৃঢ় ছিল না, সেসব ক্ষেত্রে এআই সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পেরেছে। গবেষকরা বলেন, প্রায় ৭৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বুঝে ফেলেছিল যে তাদের প্রতিপক্ষ একজন এআই।

গবেষণা বলছে, এআই মানুষের তুলনায় যুক্তিগুলো আরও বিশ্লেষণভিত্তিক ও গুছিয়ে উপস্থাপন করতে পারে। তবে এটিও সত্য যে, অংশগ্রহণকারীরা সবাই নিজের বিশ্বাস অনুযায়ী যুক্তি দেননি, অনেক সময় এলোমেলোভাবে দেওয়া মতের পক্ষে বা বিপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন তারা।

গবেষকরা সতর্ক করে বলেন, এআইয়ের প্রভাবশালী হওয়ার কারণ শুধু এর যুক্তি প্রদানের দক্ষতা নয়, বরং এটি যে কোনও ব্যক্তির মতানুসারে নিজের যুক্তি মানিয়ে নিতে পারে—এটাই এর সবচেয়ে বড় সক্ষমতা।

সালভি বলেন, “এটা এমন যেন আপনি এমন কারও সঙ্গে বিতর্ক করছেন, যে কেবল ভালো যুক্তি দিচ্ছে না, বরং আপনার পছন্দমতো যুক্তিই দিচ্ছে—কারণ সে জানে, কীভাবে আপনাকে প্রভাবিত করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, যদি এআই কারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কার্যকলাপসহ আরও বিস্তারিত ব্যক্তিগত তথ্য পেত, তাহলে এর প্রভাব আরও ব্যাপক হতে পারত।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন