বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, রাখাইনের জন্য করিডর বিষয়ে সরকার কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না। তবে, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ত্রাণ সরবরাহের একটি চ্যানেল বা পাথওয়ে তৈরির জাতিসংঘের প্রস্তাব বাংলাদেশ বিবেচনা করছে।
তিনি বলেন, “সংঘাতের কারণে অন্যান্য সব রুট অকার্যকর হয়ে পড়ায়, এখন একমাত্র সম্ভাব্য বিকল্প বাংলাদেশ।”
ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “জাতিসংঘের ত্রাণ নিয়ে বাংলাদেশ করিডর দিচ্ছে—এমন গুজব ছড়ানো হয়েছে। আমি স্পষ্টভাবে জানাচ্ছি, করিডর নিয়ে আমাদের সঙ্গে কেউ কোনো কথা বলেনি, আমরাও বলিনি। এই বিষয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে মতবিরোধের কথাও সত্য নয়।”
তিনি আরও বলেন, “যেসব জাতিসংঘ কার্যক্রম রাখাইনে চলছিল, যুদ্ধাবস্থার কারণে সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আর মানবিক সহায়তা সেখানে পাঠানো যাচ্ছে না। জাতিসংঘ মহাসচিব আমাদের অনুরোধ করেছেন—আমরা ত্রাণ পাঠাতে সহায়তা করতে পারি কি না। আমরা বিষয়টি বিবেচনা করছি।”
উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল ঢাকায় এক ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, রাখাইনের রোহিঙ্গাদের জন্য শর্তসাপেক্ষে মানবিক করিডর দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।
তখন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত। এটি একটি মানবিক করিডর বা পাথওয়ে হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত রয়েছে—সেই শর্ত পূরণ হলে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।”
এরপর থেকেই মানবিক করিডর ইস্যুটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। বিএনপিসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় এবং এর বিরোধিতা করে। একইসঙ্গে প্রশ্ন ওঠে, একটি অন্তর্বর্তী সরকারের কি এ ধরনের সংবেদনশীল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে?
এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর মতবিরোধ, এমনকি জাতিসংঘের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করিডরের জন্য চাপ দিচ্ছে—এমন খবরও বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
বুধবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয়ে পরিষ্কার বক্তব্য দেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। তিনি জানান, “সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমি ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। আমাদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ নেই।”
তিনি আরও বলেন, “জাতিসংঘ, মিয়ানমার সরকার এবং আরাকান আর্মির সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। তবে করিডরসহ এসব বিষয়ে সরকারের ওপর কোনো চাপ নেই।”
সংবাদ সম্মেলনে খলিলুর রহমান বলেন, “আমরা কারো চাপের মুখে নেই—আমেরিকা হোক বা অন্য কেউ। কেউ কোনো চাপ দিচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র, চীন—সবার সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছে। তাহলে যেখানে কোনো চাপ নেই, সেটা আমি কীভাবে অনুভব করব?”