স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এক ফেসবুক পোস্টে জানান, ২০ মে ২০২৫, মঙ্গলবার থেকে বাংলাদেশি গ্রাহকরা স্টারলিংকের ইন্টারনেট সংযোগের অর্ডার করতে পারবেন।
প্রাথমিকভাবে স্টারলিংক দুটি প্যাকেজ নিয়ে সেবা শুরু করেছে: ‘স্টারলিংক রেসিডেন্স’ এবং ‘রেসিডেন্স লাইট’। এদের মধ্যে একটির মাসিক খরচ ৬,০০০ টাকা এবং অন্যটির ৪,২০০ টাকা। তবে সেটআপ কিটের জন্য এককালীন ৪৭,০০০ টাকা ব্যয় করতে হবে।
স্যাটেলাইট-নির্ভর এই ইন্টারনেট সেবায় কোনো ডেটা বা গতির সীমা নেই। গ্রাহকরা সর্বোচ্চ ৩০০ এমবিপিএস গতিতে আনলিমিটেড ডেটা ব্যবহার করতে পারবেন।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের মধ্যে ফোনালাপের মাধ্যমে এ উদ্যোগের সূচনা হয়।
পরবর্তীতে ৯ মার্চ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, বাংলাদেশে ‘গ্রাউন্ড আর্থ স্টেশন’ স্থাপনে স্টারলিংকের পক্ষ হয়ে কয়েকটি স্থানীয় কোম্পানি কাজ শুরু করেছে। ভূমি বরাদ্দ, নির্মাণ সহায়তা ও অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে স্টারলিংকের সঙ্গে সরকারের সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে।
৯ এপ্রিল, ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সম্মেলনের তৃতীয় দিনে পরীক্ষামূলকভাবে স্টারলিংকের সেবা প্রদর্শন করা হয়। এরপর ২৮ এপ্রিল, প্রধান উপদেষ্টা স্টারলিংকের লাইসেন্স অনুমোদন দেন, যার মাধ্যমে কোম্পানিটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করতে সক্ষম হয়।
বাংলাদেশে স্টারলিংককে ১০ বছর মেয়াদী দুটি লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে— একটি ‘নন-জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট অরবিট অপারেটর লাইসেন্স’, এবং অপরটি ‘রেডিও কমিউনিকেশন অ্যাপারেটার্স লাইসেন্স’। লাইসেন্স পাওয়ার এক মাসের মধ্যেই তারা কার্যক্রম শুরু করল।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, সোমবার বিকেলে স্টারলিংক তাকে ফোন করে বাংলাদেশে অফিসিয়ালি যাত্রা শুরুর বিষয়টি জানায়। মঙ্গলবার সকালে, স্টারলিংকের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলেও এটি নিশ্চিত করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা ২৯ মার্চ ৯০ দিনের মধ্যে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে ফয়েজ লিখেছেন, “৯০ দিনের মধ্যে যাত্রা শুরুতে স্যারের প্রত্যাশাটি বাস্তবায়িত হল।”
জুলাই মাসের গণআন্দোলনের সময়, শেখ হাসিনার সরকার দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিলে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। এ প্রেক্ষাপটে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালুর মাধ্যমে ভবিষ্যতে ইন্টারনেট বন্ধের পথ পুরোপুরি বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইউনূস সরকার।
বাংলাদেশের দুর্গম এলাকায় মানসম্পন্ন ও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে প্রধান উপদেষ্টা বারবার স্যাটেলাইট ইন্টারনেট চালুর প্রয়োজনীয়তার কথা বলে আসছেন।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আরও বলেন, স্টারলিংকের আগমনে দেশের মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট খাতে প্রতিযোগিতা বাড়বে। এতে ভয়েস কল ও ডেটা বান্ডেল-নির্ভর প্রচলিত সেবা থেকে ডিজিটাল সার্ভিসকেন্দ্রিক নতুন কাঠামোর দিকে অগ্রসর হবে ইন্টারনেট সেবা।
ফেসবুক পোস্টে তিনি আরও লেখেন, “খরচ কিছুটা বেশি হলেও এর মাধ্যমে প্রিমিয়াম গ্রাহকদের জন্য উচ্চমানের ও উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবার একটি টেকসই বিকল্প তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে যেসব এলাকায় এখনো ফাইবার অপটিক বা দ্রুতগতির ইন্টারনেট পৌঁছেনি, সেখানে ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি হবে। এনজিও, ফ্রিল্যান্সার ও উদ্যোক্তারা সারাবছর নিরবিচ্ছিন্ন উচ্চগতির সংযোগের নিশ্চয়তা পাবেন।”