বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
আদালত চত্বরে মমতাজের উপর ডিম নিক্ষেপ, প্রশাসন নীরব  » «   রোমে সেন্তসেল্লে ঐক্য পরিষদের বর্ণাঢ্য বৈশাখী উৎসব  » «   তর্ক-বিতর্কে মানুষকে ছাড়িয়ে যেতে পারে এআই: গবেষণার এই ফল উদ্বেগের  » «   অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মৌলিক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করেছে, জানালো হিউম্যান রাইটস ওয়াচ  » «   মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা: সেনাপ্রধান  » «   কক্সবাজারে কেন মার্কিন সেনা?  » «   করিডর নয় এবার `ত্রাণ চ্যানেল’র কথা জানালেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা  » «   বানু মুশতাক পেলেন বুকার পুরস্কার  » «   সুরমা-কুশিয়ারায় বাড়ছে পানি, আপাতত বন্যার আশঙ্কা নেই  » «   স্টারলিংক সংযোগ কীভাবে নেবেন?  » «   রেমিটেন্সে ট্রাম্পের কর প্রস্তাব, বড় ধাক্কার মুখে বাংলাদেশ  » «   ‘শুনানির’ দুই দিন আগেই জামিন পেলেন নুসরাত ফারিয়া  » «   বাংলাদেশে স্টারলিংকের আনুষ্ঠানিক যাত্রা, খরচ কত?  » «   অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া বিমানবন্দর থেকে কারাগারে: ইন্টেরিমের প্রতি শিল্পীদের ক্ষোভ ও তিরস্কার  » «   বিশ্বরেকর্ড গড়ে এভারেস্ট জয় করলেন বাংলাদেশি শাকিল  » «  

সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ভারত ও পাকিস্তান : ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিহত ২৬ জন



দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধাবস্থা ফিরে আসার আশঙ্কা ঘনীভূত। ইসলামাবাদ জানিয়েছে, মঙ্গলবার গভীর রাতে ভারত তাদের ভূখণ্ডের অন্তত ৯টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৬ জন, আহত হয়েছেন আরও ৪৬ জন। নিহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।

পাকিস্তান এই হামলাকে সরাসরি “যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য” বলে অভিহিত করেছে। দেশটির সামরিক বাহিনীর দাবি, ভারতীয় বাহিনীর পাঁচটি যুদ্ধবিমান ও একটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে এবং পাল্টা জবাবও দেওয়া হয়েছে।

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই অভিযানকে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে, যার লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি ধ্বংস করা। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত মাসে কাশ্মীরের বৈসারান উপত্যকায় হিন্দু তীর্থযাত্রীদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছিলেন, তারই প্রতিক্রিয়ায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এক ভারতীয় কর্মকর্তা দ্য গার্ডিয়ান-কে বলেন, “অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার যে অঙ্গীকার ছিল, তা আমরা রেখেছি।”

সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি হয় পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের বাহাওয়ালপুরে, যেখানে একটি মসজিদে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে ১৩ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে দুটি তিন বছরের কন্যাশিশু ছিল। একই দিনে মুরিদকে এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের কোটলি এলাকাতেও হামলা হয়েছে। কোটলির একটি মসজিদে হামলায় ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীসহ আরও কয়েকজন প্রাণ হারান।

বুধবার সকালে ভারতীয় সেনাবাহিনী এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, তারা লস্কর-ই-তৈয়বা ও জইশ-ই-মুহাম্মদের সঙ্গে যুক্ত “সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ শিবির” লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। কর্নেল সুধীর চামোলি বলেন, “গোপন সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছিল যে, ভারতীয় ভূখণ্ডে আরও একটি হামলার প্রস্তুতি চলছিল। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই আমরা এই পদক্ষেপ নিই। এটি ছিল প্রতিরোধমূলক, সীমিত ও দায়িত্বশীল এক অভিযান।”

তবে পাকিস্তানের দাবি ভিন্ন। তাদের মতে, হামলাগুলোর কোনো টার্গেটই সন্ত্রাসবাদ সংশ্লিষ্ট নয়। পাকিস্তানের সামরিক মুখপাত্র জেনারেল আহমেদ চৌধুরি বলেন, “ভারতের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। ভারতীয় বিমানবাহিনীর কোনো বিমান পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করেনি, বরং সীমান্ত ঘেঁষা অঞ্চল থেকেই তারা ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে।”

তিনি আরও জানান, হামলার পরপরই ভারতীয় বিমানগুলো পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে পড়ে পালিয়ে যায়।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “ভারত যদি যুদ্ধ চায়, তাহলে পাকিস্তানও প্রস্তুত। আমাদের জনগণ ও সশস্ত্র বাহিনী শত্রুর মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত।”

হামলার পরপরই পাকিস্তানে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে, ভারত-শাসিত কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলায় সীমান্ত বরাবর গুলিবিনিময় শুরু হয়। এতে ভারতের সাতজন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও পাঁচজন আহত হন বলে দেশটির সেনাবাহিনী দাবি করে। পাকিস্তানও জানায়, তাদের পাঁচজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে একটি শিশুও রয়েছে।

কাশ্মীরের পাম্পোর এলাকার উইয়ান গ্রামে একটি ভারতীয় বিমান বিধ্বস্ত হয়। প্রত্যক্ষদর্শী আদনান আহমদ (২৫) জানান, “রাত ১টা ৪০ মিনিটে একটা বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে। জানালা দিয়ে দেখি, একটি বিমানে আগুন ধরে নেমে আসছে এবং সেটি গাছে ধাক্কা খায়। এরপর এক ঘণ্টা ধরে বিস্ফোরণের শব্দ হচ্ছিল।” জানা গেছে, পাইলট নিরাপদে বেরিয়ে আসেন এবং তাকে সেনা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ভারতে এই অভিযান ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেন, “বিশ্বকে এখন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।” প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লেখেন, “ভারত মাতার জয়।” কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, “সেনাবাহিনীর সাহসিকতা ও অটল মনোবলের জন্য আমরা গর্বিত।”

এ পরিস্থিতিতে পাকিস্তান ও ভারতের উত্তরাঞ্চলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যম জানায়, শ্রীনগরসহ একাধিক বিমানবন্দর বেসামরিক চলাচলের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং সীমান্ত এলাকায় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই সংঘাত বিশ্বকে আরও একবার যুদ্ধের মুখোমুখি করতে পারে না। তিনি উভয় পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান।

ওয়াশিংটনের স্টিমসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক আসফান্দিয়ার মির বলেন, “২০১৬ এবং ২০১৯ সালের তুলনায় এবার ভারতের পদক্ষেপ আরও বিস্তৃত ও আগ্রাসী। একাধিক টার্গেটে হামলা চালিয়ে তারা পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডেও প্রবেশ করেছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি এক নতুন ধাপ।” বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংঘর্ষ বড় পরিসরের যুদ্ধের রূপ নিতে পারে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, নিউ ইয়র্ক টাইমস

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন