ধর্ষকের শাস্তি জনসম্মুখে করাসহ ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন রাজধানীর শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (১১ মার্চ ২০২৫) দুপুর দেড়টার দিকে শাহবাগে অবস্থান নিয়ে এই দাবি জানান তারা। পরে পুলিশের অনুরোধে আন্দোলনকারীরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন।
মাগুরায় শিশু ধর্ষণহ সারা দেশে নারী নিপীড়নের প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় একে একে রাজধানীর কমপক্ষে ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এতে যোগ দেন। আস্তে আস্তে মিছিল ভারী হতে থাকে। তারা পুলিশকে কথা দিয়েছিলেন— শাহবাগ মোড়ে যাবেন না। জাদুঘরের সামনেই থাকবেন। সে অনুযায়ী জাদুঘরের আশপাশেসহ শাহবাগ এলাকায় সতর্ক অবস্থানে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়েই আচমকা শাহাবাগ মোড়ে গিয়ে বসে পড়েন একদল শিক্ষার্থী। আর বাকিরা যানবাহন আটকিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।
২৪ এর বাংলাদেশে ধর্ষকের ঠাই নেই, আমার বোনের কান্না আর না আর না, সারা বাংলায় খবর দে ধর্ষকদের কবর দে, তুমি কে আমি কে আছিয়া আছিয়া, একটা একটা ধর্ষক ধর ধইরা ধইরা জবাই কর। ইন্টেরিম জবাব দে নইলে হাতে চুড়ি দে। এমন না না স্লোগান দিতে থাকেন।
এ সময় পুলিশ সদস্যরা নানাভাবে বুঝিয়ে তাদেরকে শাহবাগ মোড় ত্যাগে রাজি করাতে সক্ষম হন। ১৫ মিনিট পর তারা জাদুঘরের সামনে ফিরে যান। তবে এর আগে ৬ দফা দাবি পেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ কলেজের শিক্ষার্থী মো. নকীব সাদাত মাইকে শিক্ষার্থীদের নিবৃত করে বলেন— দেশে ধর্ষণের পরিমাণ অনেকটাই বেড়েছে। এ সরকারের কাছে আমাদের অনেক বড় প্রত্যাশা ছিল।কিন্ত আমরা দিন দিন আশাহত হচ্ছি। এ কারণে আমরা আজ অবরোধ কর্মসূচি পালন করছি। সরকারের কাছে আমরা ছয়টি দাবি পেশ করছি। এগুলো অবিলম্বে মেনে নিতে হবে। আমাদের দাবিগুলো হচ্ছে —
১. ধর্ষকের শাস্তি জনসম্মুখে নিশ্চিত করতে হবে। যা সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
২. ধর্ষকদের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করতে হবে।
৩. যেকোনও ধর্ষণের ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষককে গ্রেফতার, মেডিক্যাল রিপোর্ট তৈরি করা এবং ভিকটিম ও সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। পরবর্তী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে যথাযথ প্রমাণের ভিত্তিতে ধর্ষকের ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। এতে কোনও অসামঞ্জস্য থাকলে, সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। ধর্ষণ মামলার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে ধর্ষিত নারী এবং পুরুষের স্পার্ম পরীক্ষা করার জন্য ল্যাবরেটরির সংখ্যা বাড়াতে হবে।
৪. ধর্ষণের বিচার সালিশের মাধ্যমে করা যাবে না। এর বিচার নিশ্চিত করবে শুধুমাত্র রাষ্ট্র। সালিশি বিচার আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
৫. অপ্রাপ্ত বা বয়স্ক পুরুষ দ্বারা ধর্ষণের শিকার হলে সর্বোচ্চ ফাঁসি এবং অন্তত আমৃত্যু কারাদণ্ড কার্যকর করতে হবে।
৬. চলমান সব ধর্ষণ মামলার বিচার আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। এ বিষয়ে আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম বলেন, ঘোষণা অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি জাতীয় জাদুঘরের সামনে হওয়ার কথা। তবে তারা একপর্যায়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছিলেন। তখন জনদুর্ভোগ বিষয়টি বিবেচনা করার কথা বললে বিষয়টি বুঝতে পেরে তারা আগের অবস্থানে ফিরে গেছেন। এখন তারা জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান করছেন।
সর্বশেষ বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা জাতীয় জাদঘরের সামনে অবস্থান করছেন। সন্ধা পর্যন্ত থাকবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’র পদযাত্রায় পুলিশের লাঠিপেটা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ ও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণের বিচারের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে একটি গণপদযাত্রা ঠেকিয়ে দিয়েছে পুলিশ। ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’র ব্যানারে পদযাত্রাটি মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শাহবাগ মোড় হয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে পৌঁছায়। সেখান থেকে যমুনার দিকে যেতে ডানে মোড় নিতেই ব্যারিকেড দিয়ে তাদেরকে আটকে দেয় পুলিশ।
একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেডে ধাক্কাধাক্কি করলে পুলিশ কয়েকদফা লাঠিপেটা করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পরে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করেন।
ব্যারিকেডের পাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন এবং জলকামান প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
পদযাত্রায় অংশ নেওয়া আদৃতা রায় নামের একজন বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে আসছিলাম। পুলিশ আগে থেকেই অবগত ছিল। এখানে আসার পর পুলিশ বিনা উসকানিতে আমাদের উপর হামলা করেছে, লাঠিপেটা করেছে। যে পুলিশ নিপীড়কদের ধরতে পারে না, চোর-ছিনতাইকারীদের ধরতে পারে না, তারা আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে লাঠিপেটা করেছে।”