বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
সর্বশেষ সংবাদ
ধর্মীয় উগ্রবাদ ঠেকাতে না পারলে ফের গণতন্ত্রের কবর হবে: তারেক রহমান  » «   জাতীয় পার্টির ইফতারে হামলা: দেশ ধ্বংসের মুখে চলে যাচ্ছে, এই সরকার দ্রুত বিদায় নিলেই মঙ্গল: জি এম কাদের  » «   আবার ‘জিয়া উদ্যান’ হলো ‘চন্দ্রিমা উদ্যান’  » «   বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিসৌধে বাবার নাম ‘চান না’ সিলেটের আতাউর  » «   মহাসড়কে প্রবাসী গাড়ি টার্গেট করে ডাকাতি : নজরদারি বাড়ানের দাবি, অতিরিক্ত ৭০০ পুলিশ মোতায়েন  » «   রাজধানীতেই আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়! অনুমোদন পেল ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’  » «   আরসা প্রধান জুনুনিকে গ্রেপ্তারের দাবি র‌্যাবের  » «   হিন্দুদের ওপর আক্রমণ ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক: মার্কিন সিনেটরকে প্রধান উপদেষ্টা  » «   দেশের দীর্ঘতম যমুনা রেলসেতুর উদ্বোধন  » «   বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন: তুলসী গ্যাবার্ড  » «   রেমিটেন্সের নামে এক ব্যক্তি এনেছেন ৭৩০ কোটি টাকা!  » «   সিলেটে ভালোবাসায় সিক্ত হামজা চৌধুরী, বললেন, ‘ইনশাল্লাহ আমরা উইন খরমু’  » «   এমসি কলেজে ধর্ষণের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালেই  » «   জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরে এক ঢিলে তিন পাখি  » «   অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের আরেকটি দল আসছে, নেতৃত্বে শিবিরের সাবেকরা  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

হাওরে ঘোষণা দিয়ে উৎসব করে একের পর এক জলমহাল লুট



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিগত সরকারের আমলে হাওরে জলমহাল ইজারার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের সমর্থক মৎস্যজীবী সমিতির প্রাধান্য ছিল। ৫ অগাস্ট সরকার পরিবর্তনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সুনামগঞ্জের সেই জলমহালগুলোতে চলছে ‘লুটের মহোৎসব’। শুধু দলীয় বিবেচনায় নয়; কয়েক গ্রামের মানুষ ঘোষণা দিয়ে জবরদস্তিমূলকভাবে অন্যের জলমহালে নেমে মাছ তুলে নিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ, প্রশাসন এমনকি সেনাবাহিনী গিয়েও কিছু রক্ষা করতে পারছেন না। ভুক্তভোগী ইজারাদাররা বিল পারে দাঁড়িয়ে কোটি কোটি টাকার মাছ লুট হতে দেখলেও হাজার হাজার মানুষের সামনে তাদের কিছুই করার থাকছে না, কাকুতি-মিনতি করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। তাদের ভাষ্য, সারাদেশে যেরকম ‘মব’ চলছে, তার প্রভাবেই হাওরে এমন ঘটনা। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’র সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি শামস শামিম। সহযোগিতা করেছেন নেত্রকোণা প্রতিনিধি লাভলু পাল চৌধুরী

গত বুধবারও দিরাই উপজেলার বেথুর নদীর তিনটি জলমহাল এবং জামালগঞ্জ উপজেলার আয়লা বিলের মাছ লুট করা হয়েছে। দিরাইয়ে যে দুটি জলমহাল লুটের ঘটনা ঘটেছে, তার একটির ইজারা ভাগিদার যুব জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নেতা; অপরটির ইজারা ভাগিদার যুবদলের নেতা। আর জামালগঞ্জের আয়লা বিলের ইজারার ভাগিদারদের মধ্যে আওয়ামী লীগের লোকজন রয়েছে।
সেদিন ভোর থেকে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনী নিয়ে গিয়েও জলমহাল রক্ষা করতে পারেননি ইজারাদার। জলমহাল লুটের ঘটনায় একজন ইজারাদার এরই মধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে সুবিচার চেয়ে লিখিত আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, “আমি জলমহাল লুটের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ছাড়া গত কয়েকদিনে কয়েকটি জলমহালে লুটপাট হয়েছে। লুট হওয়া বিলগুলো জেলার ইজারাধীন। এভাবে চললে এগুলো কেউ আগামীতে ইজারা নেবে না। সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে।”

ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো, তারপর লুট
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ছয় জেলা নিয়ে বিস্তৃত বিশাল হাওর এলাকা স্বাদু পানির বড় মৎস্য ভাণ্ডার। হাজার বিলের সমষ্টি এই হাওরে আবার হেমন্তে বোরো ধানের আবাদ হয়। বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তায় হাওর বড় অবদান রাখে।
প্রতি বছর এসব জলমহাল কোটি কোটি টাকায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইজারা দেওয়া হয়। মৎস্য সমিতি ও ব্যক্তির নামে এসব বিল ইজারা হয়।
ইজারার ক্ষেত্রে দলীয় প্রভাব ও নানা অনিয়ম ঘটে। ইজারাদার সারা বছর বিলের মাছ পাহারা দেন। বর্ষার পানি কমে যাওয়ার পর মাঘ মাস থেকেই মৎস্য আহরণ শুরু করেন ইজারাদাররা। বিলের এই মাছ নিয়ে হাওর অঞ্চলে মারামারি, সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
ইজারাদারদের অভিযোগ, জানুয়ারি মাস থেকে জলমহাল এলাকার আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন জলমহালের মাছ লুট করছে। তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ইজারাদারদের খেদিয়ে মাছ ধরার যন্ত্রপাতি দিয়ে উৎসবের মত করে মাছ ধরেছে। অনেকে জলমহালের বাঁশ, কাঁটা ও মাছধরার উপকরণও নিয়ে গেছে। জলমহাল এলাকায় রীতিমত আতঙ্ক বিরাজ করছে। এতে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ইন্ধনও রয়েছে, তারা লোকজনকে উসকে দিচ্ছেন।
মঙ্গলবার দিরাই উপজেলার বেথুর নদীর প্রথম খণ্ড ও দ্বিতীয় খণ্ড জলমহালের মাছ লুটের ঘোষণা দেয় বিল পারের পাঁচ-ছয়টি গ্রামের মানুষ। এই জলমহালের ইজারাদার জেলা যুব জমিয়ত ইসলামের নেতা উবায়দুল হক চৌধুরী। তিনি গ্রামের মানুষ ও পাহারাদারদের কাছ থেকে মাছ লুটের খবর পান। তিনি তৎক্ষণাৎ বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানান। ইউএনও থানার ওসি ও সেনা ক্যাম্পকে অবগত করেন।
তারা ভোরেই বেথুর নদীর তীরে গিয়ে জড়ো হন। কিন্তু তার আগেই বিশাল জলাশয়ের চারদিকে হাজার হাজার জনতা জড়ো হয়েছে মাছ লুট করতে। তাদের হাতে মাছ ধরার সরঞ্জাম ও দেশীয় নানা অস্ত্র।
প্রশাসন মাইকিং করে এলাকাবাসীকে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে বলে। কিন্তু সে কথা কেউ শুনেনি। হাজার হাজার মানুষ বিলে নেমে মাছ লুটে যোগ দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে এটা বুঝতে পেরে সকাল ১০টায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জলমহাল এলাকা ছেড়ে চলে আসে।
উবায়দুল হক চৌধুরী বলেন, “এই বিলটি হোসেন মিয়া মাছরাঙা সমিতির নামে আইছে। বিলের প্রায় ৯০ লাখ টাকার মাছ নিয়ে গেছে। বিলে আমার আটজন পাহারাদার-কর্মচারী। মাসে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ আমার। সামারচার, চননারচর, ধলপুর, সরমঙ্গলের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ আগের দিন রাত থেকে বিলের পারে অবস্থান নিছে। ফজরের পর ইউএনও, এসিল্যান্ডসহ আমরা গেছি। বিলের পার কাইট্যা ৯০ লাখ থেকে এক কোটি টাকার মাছ লুট করে নিয়ে গেছে। আমি রক্ষা করতে পারি নাই।”
এই জলমহালের দ্বিতীয় অংশের ইজারার ভাগিদার উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব কিরণ হাসান চৌধুরী। ছয় বছরের জন্য তিনি জলমহালটি ইজারা নিয়েছেন। এবার চতুর্থ বছর চলছে।
তিনি বলছিলেন, সারা দিরাই উপজেলাতেই জলমহাল লুটপাট চলছে। এর ধারাবাহিকতায় তাদেরটিও লুট হবে- এমনটা জানতে পেরে তিনি প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তারা গিয়েও ছিলেন। আমার বিলটি ঘোষণা দিয়ে লুট করেছে দুষ্কৃতকারীরা। তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মাছ লুট করেছে। প্রশাসন চেষ্টা করছে, পারে নাই। কিছুই করার ছিল না আমাদের।”
সেই অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন দিরাই থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক। “পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ আমরা স্পটে গিয়ে দেখি হাজার হাজার লোক। বিশাল জলাশয়ের একদিকে আমরা; আরেকদিকে হাজার হাজার লোক। আমরা বারণ করলেও কেউ কথা শোনেনি। তারা আমাদের আদেশ অমান্য করে জলাশয়ে মাছ ধরে নিয়ে যায়।”

দলীয় প্রভাবে ইজারা
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, উপজেলা, জেলা ও মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন মেয়াদে জলমহাল ইজারা দেওয়া হয়। নিবন্ধিত মৎস্য সমিতির অনুকূলে অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরতাদাকে ইজারা দেওয়া হয়। দুই বছর থেকে ছয় বছরের জন্য এসব ইজারা থাকে। ইজারা দিয়ে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব আদায় করে। প্রতি বছর মাঘ মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত মৎস্য আহরণ করেন ইজারাদাররা।
অভিযোগ আছে, এসব জলমহাল আওয়ামী লীগ আমলে প্রশাসনিক প্রভাব দেখিয়ে পছন্দের মৎস্যজীবী সমিতির মাধ্যমে ইজারা নিতেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর তাদের ইজারাধীন জলমহাল বেদখল হতে থাকে। এই দখলে রাজনৈতিক ইন্দনসহ ইজারাবঞ্চিত গোষ্ঠীর উসকানি রয়েছে ধারণা করেন স্থানীয়রা।
জলমহাল নিয়ে রাজনৈতিক আন্দোলন, রাজনৈতিক প্রভাব ও বিরোধ নতুন কিছু নয়।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সহসভাপতি অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, “জলমহাল ইজারায় অনেক অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা আছে। এতে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা বঞ্চিত হয়। তবে অতীতে এভাবে ঘোষণা দিয়ে, উৎসব করে কখনো একের পর এক জলমহাল লুটের ঘটনা ঘটেনি। এটা এবার ঘটছে। অনেকটা মব-জাস্টিজ স্টাইলে চলছে। এটা ইজারার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

‘কাকুতি-মিনতি করেও লাভ হয়নি’
২৮ ফেব্রুয়ারি দিরাই উপজেলার চরনারচর ইউনিয়নের কামান বিলের মাছ লুট করে নিয়ে যায় স্থানীয় হাজারো মানুষ। তিনটি গ্রামের মানুষ পলো, জালসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে মাছ লুট করেন প্রকাশ্যে। ইজারাদারের লোকজন বাধা দিতে গেলে তাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে নিবৃত করা হয়।
এই বিলের ইজারাদার চরনারচর এ বি এম মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুধীর বিশ্বাস বলেন, “বিলটি একটি প্রকল্পের। এবার মাছ ধরার মৌসুম ছিল। ২৮ ফেব্রুয়ারি আমাদের বিলটি লুট করা হয়েছে। এতে আমাদের প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি।”
দিরাই থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। হাজার হাজার মানুষ মাছ ধরে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি।”
এদিকে শাল্লা উপজেলার যাত্রাপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে ইজারা নেওয়া জোয়ারিয়া জলমহাল ১ মার্চ লুট হয়ে যায়। তিন বছরের ইজারা ছিল এই জলমহালটির। কয়েকশ মানুষ উৎসবের আমেজে এসে বিলের মাছ লুট করে নিয়ে গেছে।
জোয়ারিয়া জলমহালের ইজারার ভাগিদার বাদল চন্দ্র দাস বলেন, “শত শত লোক শুধু জলমহালের মাছই লুট করেনি। জলমহালের কাঁটা, মাছ ধরার জিনিসপত্রও নিয়ে গেছে। আমি কাকুতি-মিনতি করেও তাদেরকে নিবৃত করতে পারিনি।”
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অর্ধ কোটি টাকার মত ক্ষতি হয়েছে।
একই উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের স্বত্তুয়া বিলের মাছ ৪ মার্চ লুট হয়ে যায়। ইজারাদারের দাবি, প্রায় কোটি টাকার মাছ তুলে নিয়ে গেছে।
এদিন একই উপজেলার বাইল্ল্য বিল ও বড়গাঁও ইয়ারাবাদ গ্রুপ জলমহালের মাছও লুট হয়।
ধর্মপাশা উপজলোর মনাই নদী বা সুনই নদী জলমহালের মাছও ২৫ জানুয়ারি লুট হয়ে যায়।
এই জলমহালের ইজারা ভাগিদাদার শাহজাহান মিয়া বলেন, “বেখইজোড়া গ্রামের একদল সশস্ত্র লোক আমাদের জলমহালটির মাছ লুট করে নিয়ে গেছে। আমরা মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর মধ্যেই তারা আমাদের সর্বনাশ করেছে।”
শাল্লা থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “শাল্লায় গত কয়েকদিনে দুটি বড় জলমহালে অবৈধভাবে কিছু লোক মাছ ধরে নিয়ে গেছে। আমরা খবর পেয়ে পুলিশ নিয়ে যাবার পর তারা চলে গেছে। এ ঘটনায় কেউ থানায় অভিযোগ করেনি।”

প্রতিরোধও হচ্ছে
শুক্রবার শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের সত্তুয়া জলমহাল দ্বিতীয়বারের মত লুট হয়েছে। এ সময় প্রশাসন বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে লুটপাটকারীরা তাদের উপরও চড়াও হয়। তারা ইজারাদারের দুটি খলাঘর ও একটি নৌকা পুড়িয়ে দেয়।
এই জলমহালের ইজারার ভাগিদার জারুলিয়া মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি প্রজেশ লাল দাস বলেন, জলমহালটি প্রকল্পের। সময় নিয়ে, পরিশ্রম করে মাছের অভয়াশ্রম তৈরি করা হয়েছে। তারপর নির্দিষ্ট সময়ে মাছ আহরণ করতে হয়।
“কিন্তু এবার মাছ আহরণের মৌসুমে দুই দফা বিলটি লুটপাট হল। এতে আমাদের কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।“
আগের দিন বৃহস্পতিবার দিরাই উপজেলার বালিয়া বিলের মাছ লুট করতে আসে শত শত মানুষ। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বিল পারের চাঁনপুর গ্রামের মানুষরা প্রতিরোধের চেষ্টা করে। গ্রামের মানুষের প্রতিরোধের মুখে লুটপাটকারীরা ফিরে যেতে বাধ্য হয় বলে ইজারাদার জানান।
পাশের নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুড়ি উপজেলাতেও শনিবার প্রায় একই কায়দায় দুটি জলমহালের মাছ লুটের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক পরিবহনে করে হাজারো মানুষ কাঁঠালজান ও মরাগাঙ্গে মাছ ধরার জন্য ধনু নদীর পাড়ে জড়ো হন। দুটিই সরকারি ইজারার অংশ। তাদের হাতে ছিল মাছ ধরার উপাদান ও দেশীয় নানা অস্ত্র। পরে এলাকাবাসী তাদের প্রতিরোধ করে এবং এক পর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।
এ সময় রসুলপুর ফেরি ঘাটে বিক্ষুব্ধ লোকজন শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। উভয় পক্ষের প্রায় অর্ধশত লোকজন আহত হন। উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
তবে বৃহস্পতিবার দিরাই উপজেলার সাকিতপুর গ্রামের পাশের কাঠুয়া জলমহালের মাছ লুট করে নিয়ে যায় কয়েকটি গ্রামের মানুষ। এ ছাড়া ওইদিন কলকলিয়া বিলের মাছ লুট করেছে শাল্লা উপজেলার সোনাকানি ও মির্জাপুর গ্রামের লোকজন।

মামলা-গ্রেপ্তার
বৃহস্পতিবার দিরাই উপজেলার জলমহাল লুটের ঘটনায় ২২ জনের নাম উল্লেখ করে সরমঙ্গল, ধনপুর, ঘাগটিয়া, বাউশি, চণ্ডিপুর, কল্যাণী, ভাঙ্গাডহরসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় দুই হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন ইজারাদার।
এ ঘটনায় এরই মধ্যে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দিরাই থানা পুলিশ জানিয়েছে।
এদিকে শুক্র ও শনিবার জেলা প্রশাসন ও পুলিশ দিরাই ও শাল্লা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিল লুটপাট প্রতিরোধে স্থানীয়দের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছে।
তারা বৈধ জলমহালে লুটপাট না করার আহ্বান জানান। কেউ সীমা লঙ্ঘন করলে কঠোরভাবে দমন করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
এসব মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ ছাড়াও দিরাই ও শাল্লার পুলিশ প্রশাসন উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন