সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়ে দিনব্যাপী উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকা। এদিন ধর্ষকদের প্রকাশ্য শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এসব বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ঢাবি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন। রাতেও মশাল মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য মতে, ঢাবির ৩৬টি বিভাগ থেকে ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদচ্যুতির দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের নেতারা।
রবিবার (৯ মার্চ ২০২৫) বেলা ১১টা থেকে লাগাতার মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ চলতে থাকে ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য, অপরাজেয় বাংলা, বটতলা, সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, কার্জন হল এলাকায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট উই ওয়ান্ট, জাস্টিস জাস্টিস’; ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, হ্যাং দ্য রেপিস্ট’; ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; ‘তুমি কে আমি কে, আসিয়া আসিয়া’; ‘আমার বোন তোমার বোন, আসিয়া আসিয়া’; ‘আমার বোনের কান্না, আর না আর না’; ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধরে ধরে কবর দে’; ‘রশি লাগলে রশি নে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে’; ‘ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’; ‘২৪ এর বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; ‘জাহাঙ্গীর করে কি? খায় দায় ঘুমায় নাকি?’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
সর্বশেষ পাওয়া তথ্যমতে, লোক প্রশাসন, রসায়ন, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান, পদার্থ, পরিসংখ্যান, ভূতত্ত্ব, ইংরেজি, ভাষা বিজ্ঞান, বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ আরও কয়েকটি বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। এ ছাড়া শিক্ষক নেটওয়ার্ক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
জানা গেছে, ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬টি বিভাগ আংশিক অথবা পুরোপুরিভাবে তাদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। বিভাগগুলো হলো– লোক প্রশাসন, রসায়ন, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান, পদার্থ, পরিসংখ্যান, ভূতত্ত্ব, ইংরেজি, ভাষা বিজ্ঞান, বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, তথ্য গ্রন্থাগার ও ব্যবস্থাপনা, পালি অ্যান্ড বুদ্দিস্ট স্টাডিজ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, মার্কেটিং, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, মুদ্রণ ও প্রকাশনা, সংগীত, ম্যানেজমেন্ট, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, স্বাস্থ্য অর্থনীতি, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য, পদার্থ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, উদ্ভিদবিজ্ঞান, দর্শন, ভাষাবিজ্ঞান, প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন, ইএসওএল, গণিত, পরিসংখ্যান বিভাগ।
এর আগে শনিবার (৮ মার্চ) মধ্যরাতে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এদিন রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে একে একে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে যোগ দেন। তারা রাত আড়াইটা পর্যন্ত রাজু ভাস্কর্যের সামনের রাস্তায় বসে অবস্থান নেন এবং ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
রাত ২টার পর সারা দেশে চলমান ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনার দ্রুত বিচার নিশ্চিতের জন্য ধর্ষণবিরোধী মঞ্চের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ তাৎক্ষণিকভাবে দুটি দাবি জানায়। সেগুলো হলো– ধর্ষণবিরোধী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন ও ২. ধর্ষকদের প্রকাশ্যে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি। পরে আসিয়ার ধর্ষকদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে তোলার জন্য আল্টিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে আজ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান। এ ছাড়া তারা দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগের দাবি জানান।
অন্যদিকে, রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সমাবেশ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর পদত্যাগ নয়, বরং পদচ্যুতির দাবি জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনিম সিরাজ মাহবুব।
বিক্ষোভ সমাবেশে বাংলা বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার তামান্না বলেন, আমি জন্মের পর এখন পর্যন্ত কোনো ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে দেখিনি। যার ফলে প্রতিদিন নতুন নতুন ধর্ষকের জন্ম হচ্ছে। তারা ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনায় ভয় পাচ্ছে না। আজকের সমাবেশ থেকে আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বয়কট ঘোষণা করছি। আমরা এ ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করব না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, বিভিন্ন দীর্ঘসূত্রতার মাধ্যমে ধর্ষকদের যথাযথ বিচার হতে আমরা খুব একটা দেখি না। যে কারণে ধর্ষকরা বারবার এ ধরনের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড করার দুঃসাহস দেখিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ধর্ষকদের পার পাইয়ে দেওয়ার মতো বিভিন্ন ঘটনা আমরা অতীতে দেখেছি। আমরা চাই অনতিবিলম্বে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ধর্ষকদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাকে অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। তার ব্যর্থতার জন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। তাকে পদত্যাগ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিপীড়নবিরোধী সেলকে শক্তিশালী করে শিক্ষার্থীদের অভিযোগগুলো যথাযথভাবে উপস্থাপনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
বিক্ষোভ সমাবেশে ঢামেকের অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহাব বলেন, যারা ধর্ষণ করে এবং যারা এদের মদদ দেয় তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এর আগে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় ধর্ষণের সেঞ্চুরি করা হয়েছে। ধর্ষককে রাজনৈতিক দল এবং নির্বাহী ক্ষমতায় যারা ছিল তারা দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। ভোট না দেওয়ার কারণে উলঙ্গ করে ভিডিও বানিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছে। দেশে চলমান এসব ধর্ষণের সুরাহা হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও এ বিষয় সচেতন হতে হবে। তাদের নেতাকর্মীদের সচেতন করতে হবে। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবির বলেন, আমরা কখনো দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি এখন পর্যন্ত দেখতে পাইনি। আমরা যদি ধর্ষকদের উপযুক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে ধর্ষকরা ভয় পেয়ে আর অপরাধ করবে না। আমরা বলতে চাই, এই ধর্ষকরা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। পশুরা অন্তত তাদের বাচ্চাদের সঙ্গে এসব করে না। কিন্তু আমাদের ছোট মেয়ে আসিয়াকেও তারা ছাড় দেয়নি। আমরা যেন এ ঘটনাগুলো ভুলে না যাই। আমরা ভুলে যাই বলেই ধর্ষকরা কদিন পরপর তাদের রূপ দেখায়।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, সারা দেশে নারীদের ওপর ধর্ষণের নামে যে নারকীয় নির্যাতন চলছে তার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী দেশে সহিংসতা হতে পারে কিন্তু নারীদের প্রতি যে সহিংসতা চলছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নারীদের প্রতি এ সহিংসতা প্রতিরোধ না করতে পারলে দেশে গণতন্ত্রের সফলতা আসবে না।
তিনি বলেন, কঠোর কণ্ঠে দৃঢ়ভাবে নারীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব ধর্ষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। এ সহিংসতা প্রতিরোধ করতে রাজনৈতিক দলগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে ধর্ষকদের প্রকাশ্যে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, বিপ্লব পরবর্তী সময়ে নারীদের প্রতি চলমান নিপীড়ন ও ধর্ষণের প্রতিবাদ করা সকলের কর্তব্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের নাগরিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম করছে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে। আবারও সংগ্রাম হবে নারীদের ওপর ঘটে যাওয়া নিপীড়নের বিরুদ্ধে।
বিভাগগুলোর ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণায় শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়বে কি না জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেশনজটের শঙ্কায় পড়েন তাহলে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করি। যেমন অল্প সময়ে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া, অনলাইন ক্লাস, ছুটির দিনেও ক্লাস এবং সেমিস্টার গ্যাপ কমানো। এই পরিস্থিতিতে যদি শিক্ষার্থীরা সেশনজটের শঙ্কায় পড়েন আমরা বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের সেশনজট নিরসনের চেষ্টা করব।
যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের ‘লাঠি মিছিল’
মাগুরার শিশু ধর্ষণের ঘটনাসহ দেশের ‘অব্যাহত’ যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে ‘লাঠি মিছিল’ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রবিবার বিকাল ৩টায় রাজু ভাস্কর্য থেকে এই মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি ভিসি চত্বর, নীলক্ষেত, কাটাবন, শাহবাগ ঘুরে আবার রাজু ভাস্কর্য চত্বরে এসে শেষ হয়।
‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে নয় দফা দাবিতে এই মিছিল হয়। সেখানে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে নানা শ্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা; তাদের হাতে ছিল বাঁশের লাঠি।
শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবিও জানিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে- দায় স্বীকার করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ; ‘অব্যাহত’ ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং অবিলম্বে পাহাড়-সমতলসহ সারা দেশে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও নিপীড়নের সব ঘটনার বিচার নিশ্চিত করা।
ধর্ষণের ঘটনা বিচারে প্রয়োজনে আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন; অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে ধর্ষণ ও নারী নিপীড়ন প্রতিরোধের আইনসমূহে সংযোজন, বিয়োজন ও সংশোধন; যৌন হয়রানি প্রতিরোধে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, ধর্ষণের মামলা নেওয়ার ব্যাপারে থানায় যে জটিলতা, তা দূর করতে হবে। ভুক্তভোগী ও সাক্ষীর সুরক্ষায় সাক্ষী সুরক্ষা আইন পর্যালোচনার কথাও বলছেন তারা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলের দাবিও আছে।
‘তুমি কে আমি কে, আসিয়া আসিয়া’ স্লোগানে ঢাবিতে মশাল মিছিল
সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী লাগাতার ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়ে মশাল মিছিল করেছে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ। রবিবার রাত ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো প্রদক্ষিণ করে ফের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। মিছিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
মশাল মিছিল পরবর্তী সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীরা ধর্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তির আশ্বাস না বরং শাস্তি কার্যকরের দাবি জানান। এমনকি শাস্তি কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার অঙ্গীকার করেন নারী শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা- ‘’উই ওয়ান্ট জাস্টিস, জাস্টিস জাস্টিস’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, হ্যাংক দ্য র্যাপিস্ট’; ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; ‘তুমি কে আমি কে, আসিয়া আসিয়া’; ‘আমার বোন তোমার বোন, আসিয়া আসিয়া’; ‘আমার বোনের কান্না, আর না আর না’; ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধরে ধরে কবর দে’; ‘রশি লাগলে রশি নে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে’; ‘ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’; ‘২৪ এর বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; ‘জাহাঙ্গীর করে কি? খায় দায় ঘুমায় নাকি?’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
সমাবেশ থেকে নারী শিক্ষার্থীরা বলেন, নারীকে নারী হিসেবে না, মানুষ হিসেবে ভাবুন। আমরা ভয়ে থাকি কখন কে আমাদের শরীরে তার কালো হাত দিতে পারে। আমরা আমাদের নিরাপত্তা চাই। আমরা চাই না বাইরে বের হলেই আমাদের উপর কেউ লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকুক। আমরা ধর্ষকদের এমন শাস্তি চাই যা দেখে অন্যদের এই কাজ করতে বারবার ভাবতে হয়। আমরা চাই, তাদের শাস্তি কার্যকর করা হোক। যতদিন এদের বিচার না হবে আমরা রাজপথ ছাড়বো না। দরকার হলে আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসভবনে গিয়ে তার পদত্যাগে বাধ্য করবো।