­
­
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
নির্বাচন নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ কেন?  » «   আওয়ামী লীগ নিয়ে খবর প্রকাশ বা সোশাল মিডিয়ায় লেখাও কি নিষেধ?  » «   জুলাইয়ে বাংলাদেশে গণহত্যা হয়েছে, জেনোসাইড হয়নি: চিফ প্রসিকিউটর  » «   ভুয়া ‘জুলাই যোদ্ধা’র হাতে সরকারি অনুদানের চেক  » «   কে জিতল—ভারত, না পাকিস্তান?  » «   আওয়ামী লীগের ‘কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা’র মানে কী?  » «   বাংলাদেশে মার্কিন পণ্যের আমদানি বাড়বে, কমবে শুল্ক  » «   আওয়ামী লীগ নিষেধাজ্ঞার ফল কী? জামায়াতের বিচার নিয়ে প্রশ্ন  » «   পা দিয়ে লিখেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাতালিকায় মানিক  » «   এখন লড়াই ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে: ফরহাদ মজহার  » «   ইতালিতে ‘জিহাদি উসকানি’র অভিযোগে দুই বাংলাদেশি যুবক আটক  » «   ভারত-পাকিস্তান সংঘাত থামলো কীভাবে, টিকবে কতদিন  » «   আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত, ৭১-এর পর দ্বিতীয়বার নিষিদ্ধ হলো  » «   ট্রাম্পের ঘোষণার পর যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করল ভারত ও পাকিস্তান  » «   সিলেট সীমান্তে ভারতের রাত্রিকালীন কারফিউ  » «  

৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙা আপাতত বন্ধ, চলছে লুটপাট



ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি অর্ধেকের বেশি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সেই কর্মকাণ্ড বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে বাড়িতে থাকা বই, বিভিন্ন আসবাবপত্র, লোহা, ভাঙা গ্রিল, কাঠ- যে যার মতো যা পারছে- নিয়ে যাচ্ছে।
ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির ছয় মাস পূর্তির দিন বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) রাতে ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচি থেকে এই ভাঙচুর শুরু হয়।

গণ-অভ্যুত্থানের ছয় মাস পূর্তি ছিল বুধবার। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছাত্রলীগের উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার কর্মসূচি ছিল বুধবার রাতে। রাত ৯টায় ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচার করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বুধবার বিকেলে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য শরিফ ওসমান হাদি। সন্ধ্যা সাতটার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আজ (বুধবার) রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমিমুক্ত হবে।’

রাত আটটার দিকে একদল লোক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করেন। তাঁরা বাড়ির সামনে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালও ভাঙচুর করেন। রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ভবনের তৃতীয় তলার একটি জায়গায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়। পরে আগুনের মাত্রা আরও বাড়ে। রাত ৯টার দিকে লাঠিসোঁটা ও শাবল দিয়ে বাড়ির সীমানাপ্রাচীর ভাঙা শুরু হয়। কিছুক্ষণ পর সেনাবাহিনীর একটি দল ৩২ নম্বর বাড়িটির সামনে যায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর দলটি সেখান থেকে মিরপুর রোডের দিকে চলে যায়।
রাতে একটি ক্রেন ও দুটি এক্সক্যাভেটর দিয়ে ওই বাড়ি ভাঙা শুরু হলেও সকালে দেখা যায় একটি এক্সক্যাভেটর। যান্ত্রিক ত্রুটির কথা বলে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সেটিও সরিয়ে নেওয়া হয়।
এদিকে ভাঙা দুই ভবন এবং পেছনের বর্ধিত জাদুঘর ভবন থেকে রড কেটে নিতে দেখা গেছে নিন্ম আয়ের মানুষদের। হাঁতুড়ি, শাবল, লোহা কাটার ব্লেড দিয়ে যে যার মতো কেটে সরিয়ে নিচ্ছেন।
বয়ে এনে সড়কে স্তূপ করে সেখান থেকে রিকশা বা ভ্যানে করে সেসব কাটা রড, গ্রিল ও কাঠ সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। হাজারীবাগের বাসিন্দা সিরাজুল নামে একজন ভ্যানে করে এমন নানান জিনিসপত্র বোঝাই করছিলেন।
এগুলো কী করবেন, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ভাঙারির দোকানে নিয়া বেঁচমু, কী করমু আর। সবাই নিতেছে, আমিও নিলাম যা পাইছি আইসা।”
আধভাঙা ভবনের রড কাটছিলেন সুজন নামে একজন। তিনি বলেন, “ভাইঙাইতো ফেলতেছে, আমরা কিছু নিয়া যাই। যা পাই, তাই লাভ।”
দুপুর গড়ালেও পেছনের ওই ছয়তলা বর্ধিত জাদুঘরের ভবনটিতে শত শত মানুষ ঢুকছেন, আর বের হচ্ছেন। ভবনটিতে থাকা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কিত বিভিন্ন বইগুলোও হাতে হাতে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই।
সামনের আধাভাঙা ভবন দুটিতেও উৎসুক জনতার ঢল। কেউ কেউ ছবি তুলছেন-ভিডিও করছেন, আবার ক্ষণে ক্ষণে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
সকাল থেকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে নানান স্লোগান দিলেও বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বাড়িটির সামনে একটি মাইক নিয়ে অবস্থান নেয় একটি দল।
মাইকেও তাদেরকে ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’; ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’; ‘বত্রিশ না ছত্রিশ, ছত্রিশ ছত্রিশ’; ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’; ‘দালালি না আজাদি, আজাদি আজাদি’ ‘খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’; ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’; ‘জনে জনে খবর দে, মুজিববাদের কবর দে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।
বাড়ি ভাঙার মধ্যেই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উৎসুক জনতার ভিড়ে আওয়ামী লীগ সন্দেহে এক নারীসহ দুইজনকে গণপিটুনি দিয়েছে বঙ্গবন্ধু ভবন ভাংচুরে অংশ নেওয়া লোকজন।

প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা জানিয়েছেন, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় এক নারীকে এবং কথা বলার সময় ‘আপার বাড়ি’ বলায় এক পুরুষের ওপর হামলা চালিয়ে তাদেরকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
একপর্যায়ে তাদের মারতে মারতে ধানমন্ডি-৩২ থেকে প্রধান সড়কে নিয়ে যায়। পরে এক ফটোসাংবাদিকসহ কিছু লোকজন তাদেরকে রিকশায় উঠিয়ে দেন। এসময় ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের পেছনের উত্তর দিকের ছয়তলা ভবনটিও ভাঙা হয় বৃহস্পতিবার। সকাল ১০টার দিকে দেখা যায়, পেছনের ছয়তলা ভবনে শত শত মানুষ ঢুকছেন। ভবনটির ভেতর থেকে বই, স্টিল, লোহা, টিন, কাঠসহ বিভিন্ন জিনিস ভেঙে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। তখন ভবনটির ভেতর থেকে হাতুড়ির আঘাতে নানা কিছু ভাঙার শব্দ শোনা যাচ্ছিল।

এর আগে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিজড়িত এই বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল। বুধবার ব্যাপক ভাঙচুরের পর ভেতরে পোড়ার মত যা কিছু আছে, তাতে ফের আগুন দিয়ে শুরু হয় বাড়ি ভাঙা।

সুধা সদনেও লুটপাট
শেখ হাসিনার অনলাইন ভাষণের পাল্টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে দেওয়া ‘বুলডোজার মিছিল’ কর্মসূচি কেবল সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ৩২ নম্বরের বাড়ি গুড়িয়ে দেওয়ার মধ্যেই বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে আগুন দেওয়া হয় ধানমন্ডি ৫ এ শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে।
বুধবার রাতে দেওয়া আগুন বৃহস্পতিবার সকালেও ভবনটির কোথাও কোথাও জ্বলতে দেখা গেছে। দুপুরে বাড়িটির ভেতরে প্রচণ্ড তাপের মধ্যেই সেখান থেকেও যে যার মতো রড, সোফা, চেয়ার, টেবিলসহ আধপোড়া বিভিন্ন আসবাব, এসি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের ভাঙা অংশ, তার সরিয়ে নিতে দেখা গেছে লোকজনকে।
এমন নানা সরঞ্জাম বাড়ির সামনে থেকে রিকশায় তুলছিলেন সালেহা আক্তার।

এসবের গন্তব্যও ভাঙারির দোকান জানিয়ে সালেহা বলেন, “সবতো পুইড়াই গেছে, সকাল সকাল অনেকেই আইসা যা পারছে নিয়া গেছে। আমিও টুকটাক যা পাইছি নিয়া যাই। বেইচা যদি কয়ডা টেহা পাওন যায়।”
শেখ হাসিনার স্বামী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার ডাক নাম ছিল সুধা মিয়া। তার নামেই এ বাড়ির নামকরণ।
সুধাসদনের সামনের ভবনের একটি অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা জানান, গত তত্ত্বাবধায়ক আমলে শেখ হাসিনা এই বাড়িতে কিছুদিন ছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচন এখান থেকেই করেন তিনি। সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি রাষ্ট্রীয় বাসভবনে থেকেছেন।
এই বাড়িতে কিছুদিন আওয়ামী লীগের কিছু অফিস ছিল। পরে সেটি তালা মারাই থাকত। বিভিন্ন দিবসে এই বাড়িতে মাঝেমধ্যে এসেছেন শেখ হাসিনা। তার পুরো আমল জুড়ে এ বাড়ির নিরাপত্তায় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচুর সদস্য মোতায়েন থাকতেন।

সারা দেশে ভাংচুর :
বুধবার সন্ধ্যার পর ঢাকায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বাসভবন ‘সুধাসদনে’ হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পাশাপাশি খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুরসহ দেশের আরো কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি ও শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়।

সরকারের বিবৃতি :
রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই ঘটনাকে অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে সরকারের এই বিবৃতি গণমাধ্যমে দেওয়া হয়। সরকার আশা করে, ভারত যেন তার ভূখণ্ডকে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে এমন কাজে ব্যবহৃত হতে না দেয় এবং শেখ হাসিনাকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দেয়।

‘হাতিয়ার জমা দিয়েছি, ট্রেনিং জমা দেই নাই‘- লন্ডনে বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন