শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) ভোরে তাকে রাজধানীর পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুপুরের দিকে তাকে এইচডিইউতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগীতশিল্পী দিঠি আনোয়ার। তিনি জানান, “শুক্রবার রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালে কিছুক্ষণ থেকে সুস্থ হয়ে রাতেই বাসায় ফিরেছিলেন উনি। কিন্তু ভোর রাতের দিকে মাথা ঘুরে ওয়াশরুমে পড়ে যান। তারপরে পপুলার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসকের অবজার্ভেশনে আছেন। উনি কথা বলতে পারছেন, সেন্সও আছে।”
দিঠি আনোয়ার বলেন, “যেহেতু পরপর দুইদিন একই সমস্যা হয়েছে, তাই দুপুর থেকে উনাকে এইচডিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। উনার তো ডায়াবেটিস আছে, ব্লাড প্রেমার আছে, ভারটিগো আছে। তাই সমস্ত কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তবে ডাক্তার জানিয়েছেন তিনি সুস্থ আছেন।”
শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার একটি হোটেলে গান গাওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন সাবিনা ইয়াসমিন। তখন তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সুস্থ হয়ে রাতে ফিরলেও ভোর রাতে অসুস্থ হয়ে গেলে আবারও হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
এক বছরের বেশি সময় হল গানের মঞ্চে ছিলেন না সাবিনা ইয়াসমীন। দীর্ঘ সময় গায়িকা বিদেশে থেকেছেন চিকিৎসার জন্য। কারণ তার শরীরে ক্যান্সার ফিরে এসেছিল। চিকিৎসা আর রেডিওথেরাপি শেষে সুস্থ হয়ে আবার গানে ফিরেছেন তিনি।
শুক্রবার বনানীর একটি হোটেলে ‘আমাদের সাবিনা ইয়াসমিন: আমি আছি থাকবো’ অনুষ্ঠানে গাইছিলেন এ শিল্পী। গান গাইতে গাইতেই মঞ্চে পড়ে যান।
শনিবারও একই মঞ্চে গান করার কথা ছিল সাবিনা ইয়াসমিনের। সেই অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়।
সাবিনা ইয়াসমিন প্রথম দফায় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২০০৭ সালে। পরে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে আর গানে ফিরেছিলেন।
মাঝের বছরগুলোয় কেবল দেশে নয়, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে স্টেজ শো করেছেন তিনি।
সাবিনার জন্ম ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, ঢাকায়। পৈতৃক নিবাস সাতক্ষীরায়। বেড়ে উঠেছেন সংস্কৃতিমনা পরিবারে। সাবিনার পাঁচ বোনের মধ্যে ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান, নীলুফার ইয়াসমিনও গানের জগতের মানুষ।
ভারতের প্রখ্যাত সুরকার আর ডি বর্মণ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সত্য সাহা, সুবল দাস, আলম খান, বাপ্পি লাহিড়ী, আলী হোসেন, খন্দকার নুরুল আলম, আলাউদ্দিন আলী, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মত সুরকারদের সুরে অসংখ্য চলচ্চিত্রের গান কণ্ঠে তুলেছেন সাবিনা।
সহশিল্পী হিসেবে শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, কুমার শানু, আশা ভোঁসলের মত শিল্পীকে পেয়েছেন তিনি।
দশ হাজারের বেশি গান কণ্ঠে তুলেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গানের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে সব শ্রেণির শ্রোতাদের মাঝে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
সংগীতে অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার ও ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন।