শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি ২০১৫) সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস নামের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পাতায় এ তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ‘‘বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বন্ধ করার বিষয়ে কিছু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘মিথ্যাচার ও অপতথ্যের ক্যাম্পেইন’ চালাচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত ভারত ও বাংলাদেশসহ সব দেশের জন্যই প্রযোজ্য। ভারতীয় সংবাদপত্রগুলো একটা বিষয় জানে না, বা ক্রমাগতভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে, সেটা হল যুক্তরাষ্ট্রের যে সহায়তা, তা বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যয়ের খুবই নগণ্য একটা অংশ।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসেই বিদেশে সহায়তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন। তাতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টসহ (ইউএসএআইডি) বিভিন্ন বৈশ্বিক কর্মসূচির কোটি কোটি ডলারের তহবিল হুমকির মুখে পড়ে।
সিএনএন লিখেছে, বিদেশে বিদ্যমান মার্কিন সহায়তা ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না’ তা পর্যালোচনার জন্য ফেব্রুয়ারিতে মানদণ্ড তৈরি করবে ট্রাম্প প্রশাসন। এই পর্যালোচনার পরে সহায়তা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া, সংশোধন করা বা সমাপ্ত করা হবে কি না- সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ জারির পর ইউএসআইডি বাংলাদেশেও সব ধরনের প্রকল্প সহায়তা ৯০ দিনের জন্য বন্ধের বিষয়টি বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ ও সংস্থাগুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে।
অর্থায়ন বন্ধের ধাক্কা বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লাগতে শুরু করেছে। তবে রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি খাদ্য সহায়তা ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে বলে তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন পরিচালিত প্রকল্পে কাজ করা সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ক্রমান্বয়ে ছাঁটাই করার কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)।
বাংলাদেশে ইউএসএআইডির চিঠির সূত্র ধরে পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকা শিরোনাম করেছে– ‘বাংলাদেশকে অনুদান দেওয়া বন্ধ করে দিল আমেরিকা! নতুন চাপে মুহাম্মদ ইউনূস সরকার’।
ভারতের আরও কিছু সংবাদমাধ্যমও শিরোনামে কেবল বাংলাদেশকে রেখে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
আনন্দবাজারের সংবাদটিকে ‘বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হিসাবে বর্ণনা করে এর আগে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বলেছিল, “সম্প্রতি এক নির্বাহী আদেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রায় সব দেশের জন্য মার্কিন সাহায্য রিভিউ করার লক্ষ্যে তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছে।
“কিন্তু এই সংবাদে শুধু বাংলাদেশের নাম আলাদভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা কেবল বিভ্রান্তিকরই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে চলে আসা কিছু ভারতীয় মিডিয়ার পরিকল্পিত বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারের অংশ।”
শুক্রবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) বরাতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যে হিসাব দিয়েছে, তাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইউএসএআইডি’র অধীনে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের ১৮ কোটি ১৭ লাখ ডলারের বেশি দেওয়ার তথ্য রয়েছে।
এর বিপরীতে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা থেকে এসেছে ১৯১ কোটি ১১ লাখ ডলার। আর বিশ্ব ব্যাংক থেকে প্রায় ২২৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ২১৫ কোটি ১৩ লাখ ডলারের বেশি অর্থ এসেছে।
প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য নুযায়ী, ডলারের হিসাবে ওই সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৬৯৭ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। এই হিসাবের তুলনায় ইউএসএআইডির হিস্যা ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
ইআরডির হিসাবে, ইউএসএআইডির অর্থায়ন জাইকার তুলনায় মাত্র ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ, বিশ্ব ব্যাংকের তুলনায় ৮ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং এডিবির তুলনায় ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
৫ বছরে কত সহায়তা এল যুক্তরাষ্ট্র থেকে?
যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা বিষয়ক ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২০ থেকে ২০২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ সহায়তা পেয়েছে ২২৯ কোটি ২০ লাখ ৯৫ হাজার ডলারের কিছু বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থবছর হিসাব হয় অক্টোবর থেকে সেপ্টেম্বর।
ওই অংকের মধ্যে ইউএসআইডির অধীনে সহায়তা এসেছে ১৭৩ কোটি ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ডলারের বেশি। এর বাইরে সরাসরি পররাষ্ট্র, কৃষিসহ কয়েকটি দপ্তরের সহায়তা রয়েছে মোট হিসাবের মধ্যে।
২০২৪ সালে ইউএসএআইডির অধীনে যে ৩৭ কোটি ১৭ লাখ ৫৬ হাজার ডলার সহায়তা এসেছে, তা জরুরি খাদ্য সহায়তা, মানবিক সাহায্য, ঋণ সহায়তা, স্বাস্থ্য, কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, রোহিঙ্গা সহায়তার মতো বিভিন্ন খাতে ব্যয় হয়েছে।
সব এজেন্সি মিলিয়ে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে সহায়তা পেয়েছে ৩৯ কোটি ৩১ লাখ ৯০ হাজার ডলারের।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০২৩ সালে ৫৫ কোটি ২৩ লাখ ৭১ হাজার ডলার এবং ২০২২ সালে ৫৩ কোটি ৫৮ লাখ ৮২ হাজার ডলার সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ইউএসএআইডির অধীনে ২০২৩ সালে ছিল প্রায় ৪০ কোটি ৫ লাখ ২৪ হাজার ডলার এবং ২০২২ সালে ৩৭ কোটি ৪৩ লাখ ২ হাজারের কিছু বেশি।