শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ২৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
https://blu-ray.world/ download movies
সর্বশেষ সংবাদ
বাংলা একাডেমির ‘আদব-কায়দা’ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন সলিমুল্লাহ খান  » «   সুরভি-র ৪৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন  » «   বরের পিতা আওয়ামী লীগ নেতা, চট্টগ্রামে বিয়ের অনুষ্ঠানে ‘মব’ তাণ্ডব  » «   বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে ৬৩ যুগলের যৌতুকবিহীন গণবিয়ে  » «   মার্কিন অর্থায়ন বন্ধের প্রভাব : আইসিডিডিআর,বি’র সহস্রাধিক কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে  » «   ‘মধুচন্দ্রিমা শেষ’, প্রত্যাশার চাপ বাড়ছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর: আইসিজি  » «   সবচেয়ে দরিদ্র জেলা মাদারীপুর, ধনী নোয়াখালী  » «   হেলিকপ্টারের সঙ্গে বিমানের সংঘর্ষ : ৬৪ জন যাত্রী ও ক্রুর ভাগ্যে কী ঘটেছে  » «   ভারতীয় বিতর্কিত সিনেমা ‘ইমার্জেন্সি’: শেখ মুজিবের মুখে এ কী সংলাপ? : ব্রিটেনে বিক্ষোভ  » «   প্রধান উপদেষ্টাকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানালেন নরেন্দ্র মোদি  » «   চরমোনাই পীরের অফিসে গিয়ে মির্জা ফখরুলের বৈঠক: ফ্যাসিবাদী শক্তি ঠেকাতে ঐক্যমত  » «   স্থগিত হওয়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার, প্রত্যাখান সেলিম মোরশেদের  » «   দেশে সেনাশাসন আসার কোনো প্রেক্ষাপট নেই দাবি মাহফুজ আলমের  » «   সিলেটে রিসোর্টে হামলা-ভাঙচুর: ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ আসামি ৩০৬  » «   হেফাজতের ‘হুমকি’: টাঙ্গাইলে পরীমনির বিক্রয়কেন্দ্র উদ্বোধনের অনুষ্ঠান স্থগিত  » «  
সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন

স্থগিত হওয়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার, প্রত্যাখান সেলিম মোরশেদের



সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

ঘোষণার পর স্থগিত হওয়া ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’ প্রত্যাখ্যান করেছেন কথাসাহিত্যিক সেলিম মোরশেদ। ফেইসবুকে দেওয়া এক পোস্টে সেলিম মোরশেদের স্ত্রী ইশরাত তানিয়া পুরস্কার প্রত্যাখানের তথ্য জানান। তিনি বলেন, “পুরস্কার প্রত্যাখানের বিষয়ে রাতেই ফেইসবুকে পোস্ট করে সেলিম মোরশেদ তার বক্তব্য জানিয়েছেন। আমি পোস্টটি ফেইসবুকে দিয়েছি।”

বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “এখন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। পুরস্কারের বিষয়টি এখন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।”
গত বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা করার পর তালিকায় থাকা কারো কারো সম্পর্কে ‘কিছু অভিযোগ’ আসায় শনিবার পুরস্কার স্থগিত করা হয়।

আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে পুনর্বিবেচনার পর তালিকাটি পুনঃপ্রকাশ করার সিদ্ধান্ত জানায় বাংলা একাডেমি। শনিবার সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানাছে একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ।
সেখানে বলা হয়, “উদ্ভূত সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং পুরস্কার-তালিকাভুক্ত কারও কারও সম্পর্কে কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় পূর্বঘোষিত ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’-এর পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন সম্পর্কে আলোচনা হয়।”

সেসব অভিযোগ সম্পর্কে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা তালিকা স্থগিত করা হয় বলে জানায় বাংলা একাডেমি।
এবার নাট্য গবেষক সৈয়দ জামিল আহমেদ, প্রাবন্ধিক সলিমুল্লাহ খানসহ দশজনকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কবিতায় মাসুদ খান, কথাসাহিত্যে সেলিম মোরশেদ, নাটক ও নাট্যসাহিত্যে শুভাশিস সিনহা, প্রবন্ধ/গদ্যে সলিমুল্লাহ খান, শিশুসাহিত্যে ফারুক নওয়াজ, অনুবাদে জি এইচ হাবীব, গবেষণায় মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া, বিজ্ঞানে রেজাউর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে মোহাম্মদ হাননান এবারের পুরস্কারের তালিকায় ছিলেন।

এরপর সাহিত্য পুরস্কারে লেখকদের তালিকায় কোনো নারী লেখক না থাকার বিষয়টি তুলে ধরে এটিকে ‘বিস্ময়কর’ বলে মন্তব্য করে শুক্রবার ফেইসবুকে পোস্ট দেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এ পুরস্কারের জন্য ‘মনোনয়ন প্রক্রিয়া সংস্কারের সময় এসেছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পরদিন তা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলা একাডেমি। সংস্কৃতি উপদেষ্টা পুরস্কার স্থগিতের খবর ফেইসবুক পোস্টে জানান। পুরস্কার স্থগিতে উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ রয়েছে বলেও ফেইসবুকে লেখেন কেউ কেউ।
পুরস্কারের তালিকায় কোনো নারীর নাম না থাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে সমালোচনা করেন।
পুরস্কার স্থগিতের পর রোববার দুপুরে বাংলা একাডেমির সামনে ‘ঘেরাও কর্মসূচি’ পালন করে ‘বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজ’ ও ‘জাতীয় সাংস্কৃতিক বিপ্লব’ নামের দুটি প্লাটফর্ম। তারা বাংলা একাডেমির আমূল সংস্কার, ‘ফ্যাসিবাদী’দের অপসারণ এবং পুরস্কার ‘কেলেঙ্কারি’তে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান।

রোববার (২৬ জানুয়ারি ২০২৫) মধ্যরাতে ফেইসবুকে দেওয়া পোস্টে সেলিম মোরশেদ লেখেন, “প্রিয় পাঠক ও আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা, এই ২৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার, ঢাকা থেকে যশোরে চলে আসার পর, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জানলাম আমাকে এ বছর কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। আমি যতটা না খুশি হয়েছি তার চেয়ে বিস্মিত হয়েছি বেশি। কারণ বাংলা একাডেমি বা এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানের কাছে আমার গ্রহণযোগ্যতা কেন থাকবে? তারপর দেখলাম কিছু মানুষের আনন্দ। বিশেষ করে যশোর শহরবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত উচ্ছ্বাস। এই আনন্দ আমাকে বিপরীত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দেয়নি।
“পুরস্কারের বিষয়ে আমার ‘না’ বলার সুযোগও ছিল না। কারণ পুরস্কার ঘোষণার আগে একাডেমি যোগাযোগ করেনি। আচমকাই জেনেছি বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্তির কথা।”

সেলিম মোরশেদ লেখেন, “এরপর দেখলাম যৌক্তিক জায়গাগুলো পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে অন্যভাবে। যেমন একবার বলা হচ্ছে— তিনি কি যোগ্য? অনেকেই বলছেন ‘যোগ্য’। দ্বিতীয়বার বলা হচ্ছে— রাজনৈতিকভাবেও তার স্ট্যান্ড পয়েন্ট কী? সেক্ষেত্রেও আমি জানি, জুলাই ‘২৪ এ ফ্যাসিস্ট সরকারের গণহত্যার বিরুদ্ধে এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পক্ষে আমার অবস্থান স্পষ্ট। কিন্তু তৃতীয় যে বিষয়টি এসেছে সেটা মানতে পারছি না। বিগত চৌদ্দ বছরে একজন বন্ধুর সঙ্গে শুধুমাত্র একটি দিন ফোনে কথা বলেছিলাম— সেটাও একজন কবিবন্ধু’র মেয়ের চাকরির ব্যাপারে দ্বিধাণ্বিত হয়ে। চৌদ্দ বছরে যার সঙ্গে একবার ফোনে কথা বলেছি সেই বন্ধু আমার জন্য হঠাৎ করে এই লবিং করলেন এমন কথা যখন বিশ্বাসযোগ্যরূপে প্রতীয়মান হলো, আমি অবাক হলাম। ভালোও লাগলো।
“এরপর যখন পুরস্কারের তালিকা স্থগিত করা হল, তখন আমার কাছে এটা আর সম্মানজনক থাকলো না। না, ছোটোকাগজ আন্দোলন কিংবা প্রতিষ্ঠান-অপ্রতিষ্ঠানের জন্য না। এর কারণ, আমি দেখে ফেললাম কিছু অ-লেখক এবং লোভী-লেখকের ইন্ধন এবং তৎপরতা। যারা আমার সম্মান নিয়ে খেলা করার ক্ষমতা রাখে না। জীবিত লেখকদের মধ্যে আমি বোধ হয় সেই লেখক যে নিজের বিচার-বুদ্ধি অনুসারে চলি। আমি বাংলা একাডেমির এই পুরস্কার বিনীতভাবে প্রত্যাখান করছি।”

সেলিম মোরশেদ বলছেন, “আমাকে যে আগে থেকে না জানিয়ে এই পুরস্কার দেওয়া হল, আমি সেই লবিস্টদের প্রশংসা করছি। আগে জানালে হয়তো আমি পুরস্কারটি এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করতাম। কোনো রাজনৈতিক চাপ কিংবা পাঠক-সন্তুষ্টির জায়গা থেকে এখন এই পুরস্কার থেকে সরে আসছি না। প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে আমার নিজের জন্য। আমার পক্ষে লবিংয়ের জন্য যাদের দায়ী করা হচ্ছে এবং বাংলা একাডেমির ডিজি মহোদয় মোহাম্মদ আজমকে অসম্মান করা হচ্ছে— আমি তাদের হারানো সম্মান কিছুটা হলেও ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলাম। এই কারনে যে, তাদের সাংস্কৃতিক উচ্চতার প্রমাণ এরই মধ্যে তারা আমার কাছে দিয়েছেন। ফলে আমার এই প্রত্যাখান তাদের পক্ষেই যাবে। তারা জানেন আমি কখনোই মিডিয়ার খোরাক দেয়ার মতো লিখি না, লিখবোও না। তারপরও যে ঝুঁকিটা তারা নিলেন সেটা আমার কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। অন্যান্য কারণ যতোই উত্থাপিত হোক না কেন, এটা তো সত্য, আমাকে পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করার কারণে তাদের ছোটো হতে হয়েছে, ছোটোদের কাছে। সেটা আমি চাই না।”

তিনি লিখেছেন, “যাদের হাতে এখনো লেখা আসেনি তাদের আলটিমেটামের ওপর অন্তত আমার সাহিত্য দাঁড়িয়ে নেই। বাংলা একাডেমির এই বিব্রতকর পরিস্থিতি উদ্ভবের কারণ— প্রস্তাবক বা নির্বাচক মণ্ডলী তাদের সাহিত্যরুচির শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে চেয়েছিলেন। তাদের এই প্রয়াস তারিফযোগ্য। এ কথাও সত্য যে, ছাত্র-সমন্বয়কদের কথা ভেবে আমি বার বার সম্মত হতে চেয়েছি— হয়েও ছিলাম কিন্তু বিষয়টা সেদিকে গেল না। নানান রাজনৈতিক দলের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির কর্মীদের অভিলাষটুকু দেখে চিন্তিত হলাম। এমনটা তো চাইনি।”

সেলিম মোরশেদ লিখেছেন, “আমি ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’ প্রত্যাখ্যান করলাম। অন্যরা নিশ্চয় কথাসাহিত্যে আমার চেয়ে গুণী লেখক খুঁজে পাবেন। যারা আমার সত্যিকারের পাঠক, শুভাকাঙ্ক্ষী তাদের জন্য ভালোবাসা। জুলাই ‘২৪ এর গণঅভ্যুত্থান দীর্ঘজীবী হোক।”
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার দেওয়ার কথা রয়েছে।

সরকারের হস্তক্ষেপে স্থগিত হলো বাংলা একাডেমি পুরস্কার

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন