শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি ২০২৫) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার মিলনায়তনে ‘ফ্যাসিবাদের জমানায় শিকারি সাংবাদিকতা’ শীর্ষক এক সভায় কথা বলছিলেন সলিমুল্লাহ খান। প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) আয়োজিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান।
পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফের সভাপতিত্বে এ সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলমও বক্তব্য দেন।
সলিমুল্লাহ খান বলেন, “শিকারি সাংবাদিকতায় যারা টার্গেটেড হন, তারা প্রত্যক্ষ শিকার। কিন্তু পরোক্ষ শিকার হচ্ছে সবাই। আসলে এদেরকে মেরে অন্যদের শিক্ষা দেওয়া হয় যে ‘তোমরা সীমানার বাইরে যাবে না’।”
তিনি বলেন, “সাংবাদিকতার পেছনে আছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বিশ্ববিদ্যালয়, রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র সবগুলো হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে জনমত আদায় করার প্রচেষ্টা। বিগত সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কী ভূমিকা পালন করেছে এটারও সমালোচনা দরকার, বিচারের মুখোমুখি করা দরকার।”
১৯৫৭ সালে সিপাহী বিপ্লবের একশ বছর উপলক্ষে সব পত্রিকা বিশেষ ক্রোড়পত্র বের করলেও ২০০৭ সালে ১৫০ বছরে পত্রিকাগুলো ‘তেমন কিছু লেখেনি’ বলে মন্তব্য করেন সলিমুল্লাহ খান।
তিনি বলেন, “গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ফকির মজনু শাহের নামে সেতুর নাম মুছে দেওয়া হয়েছে। কাজেই ফ্যাসিবাদ প্রতিদিনের আদলে দেখতে না পেলে এটাকে সরানো যাবে না।”
এ আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন।
তিনি বলেন, “বিগত সময়ে হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের ব্যক্তিজীবন ঘিরে হেনস্তা, গুলশানে মুনিয়া হত্যাকাণ্ডে সায়েম সোবহান আনভীরের সম্পৃক্ততা, পরিমনির বাসায় মধ্যরাতে র্যাবের অভিযান এবং সেটি টেলিভিশনে লাইভ সম্প্রচার কিংবা স্বাধীনতা দিবসে মাছ মাংসের স্বাধীনতা শীর্ষক প্রথম আলোর ফটোকার্ড– প্রভৃতি ঘটনা শিকারি সাংবাদিকতার অন্যতম উদাহরণ।”
অধ্যাপক মামুন বলেন, “ভারত বিরোধিতার কারণে এবং শেখ হাসিনার কথা না শোনায় মামুনুল হকের ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁস করে তাকে যেভাবে সেদিন হেনস্তা করে মিডিয়ায় চরিত্রহনন করা হয়েছিল, মুনিয়া এবং তার বোনকে অর্থলোভী সাব্যস্ত করা, পরিমনিকে কুৎসিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
“প্রতিটা কেইসে কোনো না কোনোভাবে মিডিয়ার একটি অংশ শিকারি ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। যাতে মুহূর্তে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ডিলেজিটিমাইট করা সম্ভব এবং তাকে অপরাধী করে ক্রিমিনালাইজ করে শাস্তি দেওয়া সম্ভব। এ ধরনের সাংবাদিকতায় মিডিয়া, গোয়েন্দা সংস্থা এবং সরকারের একটা অংশ একসঙ্গে কাজ করে।”
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) মামুন আহমেদ বলেন, “২০১৮ সালে কোটা আন্দোলনে তারেক রহমানের সঙ্গে আমার একটি সাদামাটা ফোনালাপ ফাঁস করে প্রায় প্রত্যেকটা টেলিভিশনে দেখানো হয়েছে, টকশো করা হয়েছে যেন আমি বড় কোনো অপরাধ করে ফেলেছি। কারো ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁস করে সেটি প্রচার করা আইনসিদ্ধ কিনা আমার জানা নেই। তবে এখন আশাকরি অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, “এ ধরনের সাংবাদিকতা সাংবাদিকতায় দুর্বৃত্তায়নের রাজনৈতিক অর্থনীতি বলা যায়। এর ভয়াবহতা সবাই বুঝি। ফলে যার যার অবস্থান থেকে সতর্ক থাকতে হবে।”