আঞ্জুমানে খেদমতে কোরআনের উদ্যোগে আয়োজিত এবারের ৩৬তম তাফসির মাহফিল সিলেটের এমসি কলেজ মাঠে আয়োজন করা হয়। এতো দিন এই মাহফিল সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আয়োজন করা হতো। জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারীর আগমনকে মাথায় রেখে কয়েক লাখ মানুষের জনসমাগমের সুবিধার্থে এই স্থানান্তর ঘটে।
সমাপনি দিন শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাতে শেষ বক্তা হিসেবে বয়ান পেশ করতে ওঠেন ড. মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী। প্রায় ৪৫ মিনিট বক্তৃতাকালে মাঠে কিছু ক্ষণ পরপর দর্শক শ্রোতাদের একটি অংশ হট্টগোল করতে থাকেন।
বক্তব্যের শুরুতে আজহারী বিশাল আয়োজনের প্রশংসা করে বলেন, ওয়েল অর্গেনাইজ, শেষ পর্যন্ত সুশৃঙ্খল থাকবে আশা করি। …সিলেটের ছেলেরা ভেরি স্মার্ট। …দেশে সব জায়গায় কমবেশ গিয়েছি, কিন্তু এত বড় ময়দান আমি আর দেখিনি।
বয়ান পেশকালে মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, সম্প্রতি যশোরের একটি মাহফিলের আলোচনার আমি বলেছিলাম, এক দল খেয়ে গিয়েছে, আরেক দল খাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আছে। আমাদের অনেক রাজনীতিবিদ বন্ধুরা এটি নিজেদের গায়ে মেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এখানে তো কোনো দলের নাম নেইনি, এই কথাগুলো ছিল খুবই সাধারণ। যে কথাগুলো আমরা জেনারেললি বলি সেগুলোকে জেনারেললি নেবেন। দায়ীদের বৈশিষ্ট্য এটা, যার যে মেসেজ নেওয়ার এখান থেকে নিয়ে নেয়। কোনো দল এটা নিয়ে কথা বললো না। কিন্তু আপনারা যে এটা নিজেদের গায়ে মাখালেন, এটা ঠিক হয়নি।
রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমরা দেখেছি ক্ষমতার পালা বদলে এক সরকার যায়, আরেক সরকার আসে। তখন আমরা দুনীর্তির ফিরিস্তি জানতে পারি, তার আগে জানতে পারি না। প্রতিটি দলের ভেতরে আমরা এই বাজে স্বভাবটা দেখেছি। আমরা এ দেশে চাঁদাবাজি-দখলবাজি চাই না, কোনো দুর্নীতি ও টেন্ডারবাজিও আমরা চাই না। এখন আমাদের শুধরে নেওয়ার সময় এসেছে।
তিনি বলেন, আমাদের শপথ নেওয়ার সময় এসেছে। নিবন্ধিত প্রতিটি দলের শপথ নেওয়া উচিত। আমরা আর কোনোদিন চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করব না। নতুন ভোরের বাংলাদেশে আমরা যেন কাদা ছোড়াছুড়ি না করি।
বক্তব্য চলাকালে কিছু দর্শক বিশৃঙ্খলা শুরু করলে আজহারী বলেন, ‘আমি জানি এ গুলো ভালোবাসা। কিন্তু এটা ডুবাবে আমাকে। কথা যদি বলতে না পারি এ ভালোবাসা কী কাজে লাগবে? …কাছে থেকে তো সবাই দেখতে পারবে না।’
কিছুক্ষণ পর আবার বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। কিছু দর্শক তার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘দেখেছি মাশাল্লাহ, বসো। আলোচনার মাঝখানে হাত নাড়লে তো হবে না। ১০ মিনিট আলোচনার পরই এরা দাঁড়িয়ে হাত নাড়ে ভালোবাসা প্রকাশ করতে।’
আবারও কিছু দর্শক দাঁড়িয়ে হুড়োহুড়ি, ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে তিনি বলেন, ‘এভাবে করলেও তো পুলিশ লাঠিচার্জ করবে, ব্যাথা পাবে। এ সময় তিনি বলেন, পরিকল্পিত কিছু হতে পারে, ভাবতে হবে। দশ মিনিট সময় দেন।’
এক পর্যায়ে আজহারী বলেন, দুই মিনিট সময় দেন। এই বিভাগে এবার আর আসা হবে না। গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে। এসময় পুলিশ লাঠিচার্জ করতে উদ্বত হলে তিনি থামতে বলেন। সম্প্রচারের জন্য ড্রোন ওড়ানোও বন্ধ করতে বলেন। বসতে সমস্যা হলে দাঁড়িয়ে ওয়াজ শুনতে বলেন।
বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে না আসায় মিজানুর রহমান আজহারী মাহফিলে নিজের বয়ান শেষ না করেই সংক্ষিপ্ত মোনাজাত করে মাহফিলের সমাপ্তি টানেন। তিনি বলেন, ‘সিলেট আজকে কী করছো, এটা মনে থাকবে’।
মাহফিলের শেষ দিনের পৃথক অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন আনজুমানে খেদমতে কুরআন সিলেটের সভাপতি প্রফেসর মাওলানা সৈয়দ একরামুল হক ও আল্লামা ইসহাক আল মাদানী। শেষ দিনে আরও তাফসির পেশ করেন আল্লামা ইসহাক আল মাদানী, অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী, মুফতি মাওলানা আমীর হামজা, শায়খ হাফিজ মাওলানা আবু সাঈদ, অধ্যক্ষ মাওলানা লুৎফুর রহমান হুমায়দী, মাওলানা সৈয়দ ফয়জুল্লাহ বাহার, শায়েখ আজমল মসরুর, মাওলানা মাহমুদুর রহমান দিলাওয়ার, মাওলানা মাহবুবুর রহমান জালালাবাদী ও মাওলানা হাসানুল বান্না বিন শরিফ আব্দুল কাদির।
এ সময় মাহফিল বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক হাফিজ আব্দুল হাই হারুন প্রস্তাবনা পেশ করেন।
এর আগে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি সিলেট কানাইঘাটের মুকিগঞ্জ বাজার জামেয়া মাঠ, দরবস্তের হাজারী সেনাগ্রাম মাঠ ও ওসমানীনগরে তিনটি মাহফিলে মিজানুর রহমান আজহারীর বয়ান রাখার কথা ছিল। কিন্তু তার আগমনের সংবাদে মাহফিলের পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে আলোচিত এ বক্তার সব ওয়াজ মাহফিল নিষিদ্ধ করেছিল সিলেট জেলা প্রশাসন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাহফিল আয়োজনেসর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করা হয় ।