সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ যুক্তরাজ্য (সাহিত্য) পদক ২০২৪’পেলেন কবি, সাহিত্যিক ও সংগঠক ফারুক আহমেদ রনি ।
সাহিত্য ক্ষেত্রে নিরলস অবদান, বহুভাষা ও সংস্কৃতির বৃটেনে বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি , ঐতিহ্য নিয়ে নিরবিচ্ছিন্ন কাজ ও সাংগঠনিক দক্ষতাসহ সার্বিক কাজের স্বীকৃতি হিসাবে সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ যুক্তরাজ্য তাকে মনোনীত করে।
১৪ সেপ্টেম্বর শনিবার পূর্ব লণ্ডনের দ্যা আর্ট প্যাভিলিয়নে দ্বাদশ বাংলাদেশ বই মেলা ও সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসবে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সম্মাননা পদক, নগদ অর্থ ও সম্মাননা পত্র তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্ত বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও টাওয়ার হ্যামলেটস রারার স্পিকার ব্যারিস্টার সাইফুদ্দিন খালেদ ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশেষ অতিথি লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়ের , বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন,স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মুক্তিযোদ্ধা হিমাংশু গুস্বামী,সংগঠনের সভাপতি কবি ও লেখক ময়নূর রহমান বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক কবি কে এম আব্দুল্লাহ ।
কবি ফারুক আহমেদ রনি তার অনুভূতি কথায় বলেন, মানুষকে সম্মান দেয়া সবচেয়ে বড় গুণ। অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রাবস্থায় আমার গাণ বিটিভিতে প্রচার হয়। সৃজনশীল চর্চার হাতে খড়ি বলতে গেলে সেইসময় থেকে। আঠারো বছর বয়সে বাবা-মার সাথে লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছি। সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ বছর থেকে চেষ্টা করেছি সাহিত্যের একনিষ্ট কর্মী হিসাবে কাজ করতে।
সংহতির সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে আমরাই প্রথম বিলেতের বাংলাভাষি কবি, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের অবদানের জন্য পদক প্রদান শুরু করি। উদ্দেশ্য ছিল তাদের মেধা ও কাজের সম্মান দেয়া। আজ প্রকৃতির আপন নিয়মে সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের বন্ধু- স্বজনরা আমাকে সম্মানীত করলেন।
তিনি সম্মিলিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ যুক্তরাজ্যের ধারাবাহিক বই মেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবের প্রসংশা করে বলেন, এটি নি:সন্দেহে খুব ভালো উদ্যোগ। বিলেতে বাংলা সাহিত্যের জন্য যারা কাজ করছেন তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ ।
যুক্তরাজ্যবাসী ফারুক আহমেদ রনি সুপরিচিত কবি, সাহিত্যিক ও সংগঠক। আশির দশক থেকে তিনি কবিতা, গল্প, গান ও নাটক লিখে আসছেন।
ফারুক আহমদ রনি’র সম্পাদনায় ১৯৯৮ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত হয় মাসিক সাহিত্যের কাগজ ‘শিকড়’। বিলাত থেকে প্রকাশিত ‘ শিকড়’ প্রথম বাংলা সাহিত্য পত্রিকা , যা পরবর্তীকালে অনলাইনে প্রকাশিত হয়। প্রিন্ট ভার্সন হিসাবে এটি বাংলাদেশেও প্রকাশিত হয় ।
১৯৮৯ সালে ফারুক আহমেদ রনি ও আবু তাহের এর যৌথ সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়- সংহতি সাহিত্য পরিষদের ছোট কাগজ – সংহতি।
নব্বই দশকের পাঠক প্রিয় বাইল্যাঙ্গুয়াল- মাসিক ইষ্টান আই এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন ফারুক আহমেদ রনি। তিনি ২০১৩ সালে আত্নপ্রকাশ করা বিলেতের প্রথম বাংলা ব্লগ ‘আমাদের বাংলা‘র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।
ফারুক আহমেদ রনি অনেকগুলো মঞ্চনাটক ও টিভি নাটকে অভিনয় ও নির্দেশনা দিয়েছেন ,নাটক গুলোর মধ্যে সাহারা, দ্বিপকন্যা উল্লেখযোগ্য।
১৯৮৯ সালে লন্ডনে সমমনাদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন সংহতি সাহিত্য পরিষদ। বিলেতের একমাত্র দীর্ঘস্থায়ী সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনটি বাংলাদেশেও এক যোগে তাদের মৌলিক ও সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সংহতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রনির মূখ্য ভূমিকায় সংহতি সহ সমমনা প্রবাসীদের উদ্যোগে একুশে বই মেলায় ‘প্রবাসী’ শিরোনামে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে প্রথম কোন বই এর স্টল দেয়া হয়। ২০০৮ সালে তার নেতৃত্বে শুরু হয় সংহতি বাংলা কবিতা উৎসব । যা ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
তার প্রকাশিত গ্রন্থ হলো- আমি এক নষ্ট যুবক, জ্বলছি অলিক অনলে, বিস্মিত ফ্ল্যাশব্যাক, প্রজন্ম চত্বরে বীরাঙ্গনা মিথিলা ও নিষিদ্ধ আগুনে পুড়ে বিশুদ্ধ শরীর। তার লেখা ও শব্দকল্পে মানুষ ও মানবিকতা তুমুলভাবে উচ্চারিত ও পাঠক নন্দিত।
ব্যক্তিগত প্রকাশনার বাইরে, রনি একজন সম্পাদক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার সর্বশেষ সম্পাদকীয় কাজ হলো- “শান্তির জন্য কবিতা”, যা ৪৬টি দেশের ১৭৬ জন কবি অংশগ্রহণ করেন।
ফারুক আহমেদ রনি অনেক মৌলিক গাণ লিখেছেন। তার লেখা গাণের প্রথম একক এ্যালবাম বের হয় শিল্পী নওশিন বৃষ্টি‘র কন্ঠে ‘খাচার পাখি‘ শিরোনামে।
দেশের গুণীশিল্পী পাপিয়া সারওয়ার, সুবির নন্দি, কলকাতার শ্রীকান্ত আচার্য’র কন্ঠে গাণগুলো স্রোতা নন্দিত।
তিনি লন্ডন, ঢাকা ও কলকাতা কেন্দ্রিক প্রকাশনা সংস্থা শিকড় পাবলিশারের প্রতিষ্ঠাতা। শিকড় প্রকাশনা মূলত সাহিত্যিক প্রতিভা লালন ও প্রচারের জন্য নিবেদিত, বিশেষ করে কবিতা এবং অন্যান্য সৃজনশীল শাখায় তাদের রয়েছে উজ্জ্বল কর্মপরিধি।
ফারুক আহমেদ রনি হেলথ সেক্টরে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছেন। তিনি সাফোক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে বিএ অনার্স সম্পন্ন করেন। এবং হেলথ ও সোস্যাল কেয়ার- এ ডিপ্লোমা করেন।
নিভৃতচারী এই কবি ও সংগঠক আঠারো বছর বয়সে ১৯৮৬ সাল থেকে লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস বারায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। জন্ম ১৯৬৮ সালে, সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার দেবারাই গ্রামে। বাবা মরহুম মুমিন উদ্দিন আহমেদ, মা মরহুম সালমা খানুম। তিনি এক মেয়ের জনক। স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন জেসি, একজন লেখক, গল্পকার ও সমাজকর্মী। দুজনেই যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত চ্যারিটি সংগঠন আর্ন এন্ড লিভের প্রতিষ্ঠাতা।