খুবই মুগ্ধকর একটি প্রবাদকে আমি খুব যত্নে লালন করতে ভালোবাসি- এ্যা থিংক অব বিউটি ইজ জয়-ফর এ্যাভার। অর্থাৎ সুন্দর চিরকাল-ই সুন্দর ।
আমরা সুন্দরকে ভালোবাসি। সুন্দরের প্রতি ভালোবাসা এমনিতেই এসে যায়। আলো-অন্ধকারের এই পৃথিবীতে সুন্দর্যচর্চা লালন এবং সৌন্দর্যের সাথে লেগে থাকা মানে – নিজেকে সাধারণের মাঝে অসাধারণ করে তোলা।
প্রতিটি মানুষই সুন্দর। এবং প্রত্যেক মানুষই অসম্ভব প্রতিভার অধিকারী। তবে, প্রতিটি মানুষ -জনপ্রিয় নয়।এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার মতো প্রয়োজনীয় সুযোগ- সুবিধা নিয়ে তার বা তাদের জীবন –যাপন করা খুব কষ্টের।
আমি বিশ্বাসে রাখি-মন ও মনন দিয়ে যে, এই সুবিধা-বঞ্চিত, অনুচ্চারিত, অজনপ্রিয় বা যাদের কথা কেউ জানেও না। অথবা যাদের কথা কেউ ভাবেও না। তারাও মন ও মননে অসম্ভব সুন্দর মানুষ।
গায়ের চামড়া ফর্সা নয় বা কুচকুচে কালো কিংবা ঘামগন্ধ লেগে থাকা নোংরা কাপড় পরা মানুষটার সাথে মাত্র ৫মিনিট সম্মানে, প্রমিতভাবে খুব সাধারণ কথাগুলো বলে দেখুন- তার ভিতরে লুকিয়ে রাখা সুন্দর্যগুলো চোখে- মুখে কীভাবে প্রস্ফুটিত হয়!
এই খেটে খাওয়া বা খুব সাধারণ মানুষটির ভেতরটা কী অমলিন, স্নিগ্ধ এবং পরিশীলিত তা জানতে আপনার ইচ্ছে শক্তিই যথেষ্ট। আমার বিশ্বাস, আপনার মধ্যে থাকা মানবিক সুন্দর্যের সাথে এই অচেনা মানুষ বা সম্মান দিয়ে মাত্র পাচ মিনিট ব্যয় করা মানুষটির সাথে একটি বিষয় প্রায় মিলে যাবে, তা হলো, সবার মধ্যে আছে -ভালোবাসা ও আন্তরিকতার অভূদ সৌন্দর্য।
প্রতিটি মৌলিক সাফল্যে সাধনা লাগে। এবং সাধনায় যমজভাই-বোনের মতো জড়িয়ে আছে –প্রত্যয়ের সৌন্দর্য। আমরা সব সময় সাকসেস বা সাফল্য নিয়ে চিন্তা করি। ছোট বেলায় আমাদের মগজে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে- সাফল্য ছাড়া এজগতে প্রতিযোগিতায় ঠিকে থাকা দায়।
এই নিগুঢ় সত্যটি আমরা অনুধাবন না করে, আদর-যত্নে ভালো না বেসে এর বায়বিয় দিক নিয়েই আমরা পড়ে থাকি। ফলত সাকসেক বা সাফল্যের আসল সৌন্দর্যের দিকটি অন্ধকারে থেকে যায়। অনেকের কাছে এর প্রকৃত মর্মার্থ পানসে হয়ে যায়- যখন প্রত্যাশিত সাফল্য আসেনা বা স্বপ্ন বাস্তবিক হয়ে ওঠেনা।
আমার মনে হয়, আমরা চরম ভুল পথে হাটি। এবং সাহস করে নিজের বোধ থেকে বলি- বেশীরভাগই এই ভুল পথের পথিক-ও। নিজের জায়গায় দাড়িয়ে, নিজেকে সক্ষমতা বা নিজের প্রকৃত ভালোলাগা, মন্দলাগা, প্রিয়জিনিস বা বিষয় চিন্তা না করে অন্যের সাফল্য ও সাকসেসকে সবার আগে প্রাধান্য দিয়েই যেন আমাদের জীবনপাঠ শুরু হয়।
বাস্তবতা হলো- চিন্তার সৌন্দর্যটাকে আমরা ভিতরে লালন করিনা। একবার ভেবে দেখুন- সৃষ্টিকর্তার দেয়া অক্সিজেনটাকে প্রতি মুহুর্তে আপনি-ই গ্রহন করে , প্রতি মুহুর্ত বেচে থাকার লড়াইয়ে আপনি থাকেন।
আপনার গায়ের কাপড়টি কিন্ত আপনার-ই। রাত-দিন যে খাবার খান- সেটা আপনার মুখ দিয়েই যায়।
আপনার সুখ, নিদ্রা বা চিন্তার নিদ্রাহীন রাতটি-ও আপনার।
আপনার প্রিয় মানুষ,প্রিয় রঙ, ফুল. পাখি, আকাশ, সমুদ্র, বালুচর- সবই আপনার একান্ত মনজড়তের।
এখানে কেউ এসে কী প্রতিদিন ভাগ দিয়ে যায় ? বা ফ্রি খাইয়ে, পরিয়ে , জাগিয়ে দিয়ে যায়?
বয়স যাই হোক- আমরা যারা নিজেকে মনের দিক দিয়ে তারুণ ভাবি, আমাদের দরকার- নিজের আসল সৌন্দর্যকে ভালোবাসার। নিজের ভেতরের আপন সৌন্দর্যকে আদর- যত্ন করে, মন ও মননে লালন করার। এবং তা প্রকাশ্যে স্ফোরণ করার।
কখনও কী ভেবেছেন আপনার প্রিয় রঙ কি ? অসংখ্য বন্ধুর তালিকা থেকে ক’জন খুবপ্রিয়, কাছের বন্ধু? কোনটা বেশী প্রিয় – আকাশ, নদী না সমুদ্র।
বাবা-মা-ভাই-বোনের মধ্যে কার, কোন দিকটি সবচেয়ে মুগ্ধ করে আপনাকে? আপনার কোন সামাজিক কাজটি আপনার করতে ভালো লাগে?
একটি সুন্দর্যময় সময়কে আপনার মতো করে বেছে নিয়ে সম্পূর্ণ একা , চোখবন্ধ করে , নিজের ভেতরের সৌন্দর্যগুলোর পসরা খুলে দেখুন- জীবন কত সম্ভাবনাময়। জীবন কত সুন্দর।
এবং এই সুন্দর্যময় সময়কে অনিন্দ্য সুন্দর করতে এখন প্রয়োজন আপনার ইচ্ছে শক্তি ও নিরবিচ্ছিন্ন লেগে থাকার প্রত্যয়।
আপনার অভূতপূর্ব আলোর দোয়ার খোলার একটি অনুউদাহরণ শেয়ার করতে ইচ্ছে হচ্ছে – ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার আগে বাবা-মা’র সাথে হাসিমুখে কথা বলে যান। কোথায় যাচ্ছেন এবং কখন ফিরবেন- বলে গেলে বাবা-মা যে কত খুশি হবেন সেটা আপনার চেয়ে বেশী আর কেউ অনুভব করতে পারবে না।
বাইরে যাবার সময়, অহেতুক রাস্তার ধারের গাছের পাতা ছেড়ার অভ্যেসটা থাকলে আজ থেকে চির তরে বাদ দিন, প্লিজ।
মুক্ত আকাশকে ৩০ সেকেন্ড এর জন্য হলেও একান্ত নিজের মতো করে অনুভব করে দেখুন –হোক তা মেঘময় অথবা রোদ্রজ্জ্বল।
আসা –যাওয়ার সময় বিশেষ করে প্রবীন ও শিশুদের সাথে যতদূর সম্ভব শ্রদ্ধাশীল ও আন্তরিকতা নিয়ে কথা বলে দেখুন- মনে কতটা প্রশান্তি আসে!
শীত এসেছে । সম্ভব হলে আপনার পুরোনো অথবা বাড়তি একটি গরম কাপড় সুবিধাবঞ্চিতকে আন্তরিকভাবে, হাসিমুখে উপহার দিন। এবং সচেতনভাবে, তার মুখের হাসিটাকে পাঠ করে দেখুন –
কতটাকা খরচ করলে এই ভালোবাসার সৌন্দর্যটি আপনি কিনতে পারবেন?
জীবনটা আসলেই সুন্দর। মুগ্ধতায় ভরা। যখন আপনি, সুন্দরকে মনের শুদ্ধতা নিয়ে উপভোগ করতে চাইবেন।
আ নো য়া রু ল ই স লা ম অ ভি : কবি, সাংবাদিক
সাত জানুয়ারি দুই হাজার বাইশ, লন্ডন,যুক্তরাজ্য
আরও পড়ুন-