মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫ খ্রীষ্টাব্দ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
‘শুনানির’ দুই দিন আগেই জামিন পেলেন নুসরাত ফারিয়া  » «   বাংলাদেশে স্টারলিংকের আনুষ্ঠানিক যাত্রা, খরচ কত?  » «   অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া বিমানবন্দর থেকে কারাগারে: ইন্টেরিমের প্রতি শিল্পীদের ক্ষোভ ও তিরস্কার  » «   বিশ্বরেকর্ড গড়ে এভারেস্ট জয় করলেন বাংলাদেশি শাকিল  » «   বিশ্বের কাছে বার্তা দিতে পাল্টাপাল্টি প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছে ভারত-পাকিস্তান  » «   ভারতের নিষেধাজ্ঞায় বেনাপোলে আটকা শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক, বাংলাদেশ জানেই না স্থগিত সিদ্ধান্তের কথা!  » «   স্থলপথে পণ্য নেবে না ভারত : কেনো এত উদ্বিগ্ন অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকরা  » «   চট্টগ্রামের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের দেওয়া নিয়ে বিতর্ক: কী জানা যাচ্ছে  » «   পাসপোর্ট এনডোর্সমেন্ট ফি সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা  » «   সিলেটে ডা. জোবাইদার ‘বেনামি’ পোস্টার ঘিরে আলোচনার ঝড়  » «   মাত্র ১৪ কর্মদিবসে মাগুরার আছিয়া ধর্ষণ-হত্যার বিচার, ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ড  » «   হামাস নির্মূলে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন তীব্রতর, ফিলিস্তিনিদের লিবিয়ায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ট্রাম্পের  » «   সৌদির সমাজে বড় পরিবর্তন, কীভাবে সম্ভব হলো?  » «   আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়ে এখন আমরা কী নির্মাণ করছি?  » «   ডলার খোলাবাজারে : দাম অস্বাভাবিক বাড়লে কী হবে?  » «  

একাত্তরে পাকিস্তানিদের সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি



জেনেভায় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনা সদস্য ও তাদের দোসরদের সংঘটিত বাংলাদেশে গণহত্যার স্বীকৃতির সময় এসেছে’। তাঁরা আরও বলেন, গণহত্যার শিকার এবং তাদের বংশধরদের স্বীকৃতির মাধ্যমে সম্মানিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়ের দাবি। স্বীকৃতির আরও গুরুত্বপূর্ণ মর্মার্থ হলো, এই গণহত্যার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করা এবং বিচারের আওতায় আনা। দুর্ভাগ্যবশত, বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা আজ ইতিহাসের একটি বিস্মৃত অধ্যায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং আমরা সবাই জানি যে, ‘বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা বিচারহীনতার নামান্তর।’

সুইজারল্যান্ডের জেনেভা প্রেসক্লাবে ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পরিচালিত গণহত্যার স্বীকৃতি’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ বক্তাগণ উক্ত মন্তব্য করেন। ইউরোপ ভিত্তিক প্রবাসী সংগঠন, ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরাম (ইবিএফ) সুইজারল্যান্ড মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় সম্মেলনে ইউরোপীয় সংসদের সদস্য (এমইপি) ব্র্যান্ডো বেনিফি, ব্রিটিশ সাংসদ রুশনারা আলী, ডাচ সংসদের সাবেক সদস্য হ্যারি ভন বোমেল, জার্মান আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলের এশিয়া বিভাগের প্রধান দেবারতি গুহ, আমস্টারডাম উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. অ্যান্থনি হলস্লাগ, ডি ভক্সক্রান্টের ডাচ সাংবাদিক রব ফ্রাইকেন এবং গণহত্যার শিকার পরিবারের সদস্য আসিফ মুনির বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনে ইবিএফ ইউকে’র প্রেসিডেন্ট আনসার আহমেদ উল্লাহ, সুইজারল্যান্ড মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের পরিচালক খলিলুর রহমান এবং ইবিএফ নেদারল্যান্ডসের প্রেসিডেন্ট বিকাশ চৌধুরী বক্তব্য রাখেন এবং ফিনল্যান্ডের লেখক ও সিনিয়র গবেষক ড. মজিবুর দফতরি সভাপতিত্ব করেন।

সম্মেলনের শুরুতে শাহরিয়ার কবির পরিচালিত ‘ওয়ার ক্রাইমস ১৯৭১’ তথ্যচিত্র দেখানো হয়। এর আগে দুপুরে জাতিসংঘ ভবনে ব্রোকেন চেয়ারের সামনে একটি বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়, যেখানে বাংলাদেশি প্রবাসী, ইউরোপীয় রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং মানবাধিকার কর্মীরা অংশ নেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল এবং লন্ডনভিত্তিক ব্রিটিশ বাংলা নিউজ চ্যানেল এই বিক্ষোভ এবং সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচার করে।

ইউরোপীয় সংসদ সদস্য (এমইপি) ব্র্যান্ডো বেনিফি বাঙালি সম্প্রদায়ের প্রতি তাঁর সম্পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, ‘ইবিএফ যে জাতিসংঘের ৪৮তম মানবাধিকার কাউন্সিল অধিবেশনের সময় এই সম্মেলনের আয়োজন করছে তা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ইউরোপীয় নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করবে। তিনি এই বিষয়ে আয়োজকদের তাদের অব্যাহত প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, ‘আমাদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে। অতীতের ভুলগুলি বুঝতে হবে এবং বাংলাদেশ ও ইউরোপ সহ সারা বিশ্বের নতুন প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য একসাথে কাজ করতে হবে। আজ আমরা সারা বিশ্বে সামাজিক অন্যায়ের মুখোমুখি এবং রাজনীতিবিদ এবং মানুষ হিসেবে আমরা চুপ থাকতে পারি না।

ব্রিটিশ সংসদ সদস্য রুশনারা আলী তাঁর বক্তব্যে বলেন, তাঁর পরিবার বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধের সাথে তাঁর আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় নারীদের উপর যে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এর তীব্র সমালোচনা করেন এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান। তিনি যুদ্ধাপরাধীদেরকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য এবং গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

ডাচ পার্লামেন্টের প্রাক্তন সদস্য হ্যারি ভ্যান বোমেল বলেছেন, ‘বাংলাদেশ গণহত্যার বিষয়টি অস্বাভাবিক নয়, এমনকি বিস্ময়করও নয়। গণহত্যা এবং গণ অত্যাচারের আরো অনেক বিশ্বাসযোগ্য উদাহরণ রয়েছে যা জনসাধারণের বিতর্কের বিষয়; ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক এবং আইনগত সকল প্রেক্ষাপটেই। তিনি বলেন, ‘আমার ১৯১৫ সালের আর্মেনীয় গণহত্যা বা ইয়েজিদি এবং উইঘুরদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সংঘটিত অপরাধের উল্লেখ করার দরকার নেই। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ গণহত্যার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হল এই যে, বিভিন্ন কারণে এই গণহত্যা জনসচেতনতা থেকে অনেকাংশে সরে গেছে।’

‘এশিয়ায় গণহত্যাঃ বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক প্রবন্ধে ডয়েচে ভেলের এশীয় প্রধান দেবারতি গুহ বলেছেন, সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত হামলা ও নির্যাতনে বাংলাদেশের প্রায় তিন মিলিয়ন মানুষ নিহত হয়েছিল। এসময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালিদের পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালায়।

এর আগে, একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে অন্যান্যের মধ্যে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সুইজারল্যান্ডের সভাপতি রহমান খলিলুর মামুন, সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা নজরুল ইসলাম জমাদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা উমেশ দাস, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সুইজারল্যান্ডের সাধারণ সম্পাদক পলাশ বড়ুয়া, সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি তাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল খান, সহ-সভাপতি আনিস হোসাইন, নুরুল্লাহ চৌধুরী, আন্তর্জাতিক বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন সুইজারল্যান্ডের সভাপতি গোলাম মোর্শেদ, সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মশিউর রহমান সুমন, জেনেভা বাংলাদেশ ক্লাব এর সভাপতি হারুন-অর-রশিদ, বাংলাদেশ মাইনরিটি কাউন্সিল সুইজারল্যান্ড এর সভাপতি অরুণ বড়ুয়া, জাতীয় শ্রমিক লীগ সুইজারল্যান্ডের সাধারণ সম্পাদক বিপুল তালুকদার, আবু নাইম, সসীম গৌরী চরণ, রূপায়ণ বড়ুয়া, নিপু বড়ুয়া, উজ্জ্বল বড়ুয়া, সমীরণ বড়ুয়া, সুনীল চক্রবর্তী, সাজিয়া রহমান, জুবায়ের লস্কর, ফাতেমা রাশিদ, অলি শেখ, পুর্নিমা খান, পুনম ইসলাম, জলি চৌধুরী, সুমন ভুঁইয়া, লিও মার্টিন গোমেজ, বিশিষ্ট ব্লগার অমি রহমান পিয়াল, সুইস আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকবর আলী, সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ইমরান খান মুরাদ, মোজাম্মেল জুয়েল, সুইজারল্যান্ড নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা হাসান ইমাম খান, সুইজারল্যান্ড শ্রমিক লীগ সভাপতি আব্দুর রব খাদেম, বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ইউনিটি কাউন্সিল এর ইউরোপীয় সভাপতি অমরেন্দ্র রায়, সর্ব ইউরোপীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক মিয়া আবুল কালাম, বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল হক, গ্লোবাল সলিডারিটি ফর পিস বেলজিয়াম এর আহ্বায়ক মুর্শেদ মাহমুদ, বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাকসুদুর রহমান হিমু, বেলজিয়াম আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাশেম রাসেল।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

সাবস্ক্রাইব করুন
পেইজে লাইক দিন