স্পেনের দক্ষিণ -পূর্বে অবস্থিত আলমেরিয়া কৃষি বিপ্লবের অন্যতম বিস্ময়। আলমেরিয়ায় কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত পদ্ধতি কার্যকর এবং টেকসই হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং এটি বর্তমানে বিশ্বব্যাপী একটি রেফারেন্স হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। স্পেনের বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল উইং ও স্পেন বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি ঢাকার যৌথ উদ্যোগে এবং স্পেনের আলমেরিয়া চেম্বার অব কমার্স এর সহযোগিতায় কৃষি ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক বিনিময়ের সম্ভাবনা অন্বেষণের জন্য Introduction to Almeria Agro Innovation বিষয়ে মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) একটি ওয়েবিনার আয়োজন করে।
এ ওয়েবিনারে স্পেনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারোয়ার মাহমুদ এনডিসি, বাংলাদেশে স্পেনের রাষ্ট্রদূত ফ্রান্সিসকো বেনিতেজ সালাস ছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএআরআই) ড নাজিম উদ্দিন, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের এগ্রো কোম্পানিসমূহের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরাও এ ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন।
স্পেন বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও ওয়েবিনারের মডারেটর মিজ নুরিয়া লোপেজ তাঁর সূচনা বক্তব্যে বলেন, ৫০/৬০ বছর আগে আলমেরিয়া একটি অনুর্বর জায়গা ছিল যেখানকার অধিবাসীরাও স্পেনের সবচেয়ে দরিদ্র ছিল। বর্তমানে কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে আলমেরিয়া স্পেনের অর্থনৈতিকভাবে উন্নত স্থানগুলির অন্যতম।
স্পেনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারোয়ার মাহমুদ বাংলাদেশের কৃষি খাতের সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আলোকপাত করেন এবং এই খাতে প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, আলমেরিয়া কৃষি মডেল বাংলাদেশে প্রয়োগ এবং এর সম্ভাব্যতা পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সফরের আবশ্যকতা রয়েছে। বাংলাদেশে স্পেনের রাষ্ট্রদূত ফ্রান্সিসকো বেনিতেজ সালাস তাঁর বক্তব্যে বলেন, আলমেরিয়া একসময় স্পেনের স্বল্পোন্নত অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি ছিল এবং এখন অনেক ইইউ দেশের সবজির যোগান দেয়া হচ্ছে এই আলমেরিয়া থেকে। নীতিনির্ধারক, স্টেক হোল্ডার এবং বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহকে উৎসাহিত করার জন্য স্পেন এই ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তনে কাজ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আলমেরিয়ার চেম্বার অব কমার্সের ডিরেক্টর জেনারেল ভিক্টর ক্রুজ মেদিনা এবং মিস ইনমা খুরাদো আলমেরিয়া এগ্রিকালচারাল মডেলের মৌলিক বিষয় তুলে ধরে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা দেন।
কৃষি উন্নয়নে বর্তমান সরকারের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা উল্লেখ করে স্পেনে বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর রেদোয়ান আহমেদ বলেন, সরকার বর্তমানে কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের দিকে জোর দিচ্ছে যেখানে আলমেরিয়ার কৃষি মডেল বাংলাদেশে কিছু পরিবর্তন সহ অভিযোজিত হতে পারে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার এবং বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ড নাজিম উদ্দিন উভয়েই এ ওয়েবিনার আয়োজনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন যে, জৈব নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যবহার করে নিরাপদ কৃষি উৎপাদন এবং জমির উৎপাদন বৃদ্ধি আলমেরিয়ার মডেলের বৈশিষ্ট, যা বাংলাদেশ সরকারের কৃষি নীতি অগ্রাধিকারগুলির সাথে সংযুক্ত। উভয়ই এ ধরণের প্রকল্প সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর প্রয়োগের ব্যপারে ঐকমত পোষণ করেন।
প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে ওয়েবিনারের সমাপ্তি ঘটে। বাংলাদেশ খাদ্য ও সবজি রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, এফবিসিসিআই প্রতিনিধি নাদিম এবং, ইফাদ, প্যারাগন, প্যারামাউন্ট, ডেকো, সিডিএল, গোল্ডেন হারভেস্ট, প্রাণ-এগ্রো, এসিআই-এর মতো প্রধান কৃষি কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যান, সিইও ও এমডিবৃন্দ এ ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন এবং উৎসাহের সাথে অংশগ্রহণ করেন।
এই ওয়েবিনারটি বাংলাদেশ এবং স্পেনের কৃষি ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের একটি নতুন পথ খুলে দেবে বলে অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি