প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিলেতে বসবাসকারী গ্রাজুয়েটদের সংগঠন ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকে’র দ্বিতীয় দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও নির্বাচন আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে । গত শনিবার পূর্ব লন্ডনের অট্রিয়াম হলে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে আগামী দুই বছরের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতানকে সভাপতি, বিশিষ্ট কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ইসমাইল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক এবং একাউন্টেন্ট সৈয়দ হামিদুল হককে কোষাধ্যক্ষ করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি নির্বাচন করা হয়। কমিটির জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন প্রশান্ত দত্ত পুরকায়স্হ বিইএম। অপর সহ সভাপতি হলেন নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, সলিসিটর সহুল আহমেদ মকু ও আ ফ মেসবাহ উদ্দিন ইকো। সৈয়দ আবু আকবর আহমেদ ইকবাল, বারিস্টার ইনামুল হক ও বারিস্টার মাহারুন আহাম্মেদ মালা যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন ফখরুল ইসলাম মিসবাহ ও ফয়জুল হক রিপন এফসিসিএ।
দপ্তর সম্পাদক হয়েছেন ব্যারিস্টার মিজানুর রহমান। সাংগঠনিক সম্পাদক হলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কামরুল হাসান, ব্যারিস্টার আব্দুস শহীদ এবং সামিনা দেওয়ান। রীপা সুলতানা রাকীব সাংস্কৃতিক সম্পাদক, সৈয়দ এনামুল ইসলাম প্রেস অ্যান্ড পাবলিসিটি সম্পাদক এবং এ্যারিনা সিদ্দিকী সুপ্রভা শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন রাজিয়া বেগম, এস এম মোস্তাফিজুর রহমান, শওকত খান, মোহাম্মদ শাব্বির হোসেইন, মীর্জা আসহাব বেগ, ব্যারিস্টার এম কিউ হাসান, শাহ আকবর আলী, সৈয়দ জাফর, ডঃ আশরাফ মাহমুদ, সাবিতা সামসাদ, কাজী কল্পনা ও বেলাল রশিদ চৌধুরী।
সভার প্রারম্ভে সভাপতি দেওয়ান গৌস সুলতানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুর রাকীবের সঞ্চালনায় সংগঠনের দুইজন প্রয়াত সদস্য এনামুল হক ও সৈয়দ নাজমুল, করোনায় প্রয়াত জাতির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষার্থী এবং সদ্য প্রয়াত ডাঃ ফয়জুল ইসলামসহ বৃটেনে বিশিষ্ট বাংলাদেশীদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এ ছাড়াও সংগঠনের সংবিধানের বিভিন্ন সংশোধনী অনুমোদন করা হয়। সাধারণ সম্পাদক বিগত দিনের কার্যক্রমে সমৃদ্ধ বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করেন। জানানো হয় যে সংগঠনের উদ্যোগে ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭ লক্ষ টাকার একটি ট্রাষ্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে যার লভ্যাংশ থেকে প্রত্যেক বছর ছয়জন অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেয়া হবে । আর এটা চলবে অনাদিকাল। রিপোর্টের উপর আলোচনায় অংশ নেন আবু মুসা হাসান, মেসবাহ উদ্দিন ইকো, নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, সৈয়দ এনাম, ব্যারিস্টার এমকিউ হাসান, সলিসিটর সৈয়দ ইকবাল, সলিসিটর মোহাম্মদ কালাম, কামাল উদ্দিন মিলন, মারুফ চৌধুরী, এরিনা সিদ্দিকী সুপ্রভা, মাহারুন আহাম্মেদ মালা, কুমকুম আখতার, ফখরুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
সম্মেলন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও দেশে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয় এবং এর সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা ও ছাত্রছাত্রীদেরকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ ছাড়াও সদস্যদের অনুদানে এবং কমিউনিটির সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্থায়ী তহবিল চালু করতে পারায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে এই তহবিলকে আরো বর্ধীত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সুনাম বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাবার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
দ্বিতীয় পর্বের মিলনমেলা, মধ্যাহ্ন ভোজ ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সদস্যদের পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং বিলেতের বাংলাদেশী কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ যোগদান করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল এর স্পিকার আসবাব হোসেন ও ক্রয়োডনের মেয়র শেরওয়ান চৌধুরী।
সিরাজুল বাসিত চৌধুরী কামরানের সার্বিক তত্বাবধানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্ব যৌথভাবে পরিচালনা করেন মাহারুন আহম্মেদ মালা, এ্যারিনা সিদ্দিকী সুপ্রভা, এমকিউ হাসান ও মোস্তফা কামাল মিলন। এতে নাচ পরিবেশন করেন প্রতিভাবান নৃত্যশিল্পী প্রেরণা মন্ডল। গান পরিবেশন করেন খ্যাতিমান শিল্পীদম্পতি রুবায়েত জাহান ও রাজা কাসেফ, বৃটেনের বাংলা সংগীত জগতে পরিচিত মুখ নাজমুন তন্নী। এছাড়াও অ্যালামনাই সদস্যদের মধ্যে গান পরিবেশন করেন আশির দশকে বাংলাদেশের পপ তারকা সৈয়দ জুবায়ের, সামুয়েল চৌধুরী, রীপা রাকীব, কে জে বি কনক, মোস্তফা কামাল মিলন, কাজী কল্পনা, তামান্না ইকবাল এবং সাইদা চৌধুরী। শ্রুতি নাটক পরিবেশন করেন এমকিউ হাসান ও সাদিয়া গাজী অন্তরা। আবৃত্তি করেন তারিকুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান ।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিলো সদস্যদের অংশগ্রহণে আইলারে নয়া দামান্দ গান ও সে সাথে সদস্যদের নাচ যা ইতোমধ্যেই ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়া দামান্দ এক্ট’ হিসেবে সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এ ছাড়াও ফ্যাশন ডিজাইনার ও সংগীতশিল্পী সাইদা চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত কেট ওয়াকে অংশ নেন শাহগীর বখত ফারুক, মোহাম্মদ আব্দুর রাকীব, মারুফ চৌধুরী, সলিসিটর সহুল আহমেদ মকু, রীপা রাকীব এবং ইসমাইল হোসেন। র্যাপিড ফায়ার প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন দেওয়ান গৌস সুলতান, আবু মুসা হাসান, নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক এবং মারুফ চৌধুরী। এ ছাড়াও বাপ্পী চৌধুরীর সৌজন্যে জমজমাট র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠান উপলক্ষে মাহারুন আহাম্মেদ মালা, প্রশান্ত পু্রকায়স্থ ও মোস্তফা কামাল মিলনের সম্পাদনায় একটি স্মরনিকা প্রকাশ করা হয়।
সবশেষে নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন সম্মেলন ও মিলনমেলা সফল করার জন্য সকল সদস্য, শুভানুধ্যায়ী, মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের কর্মী, অট্রিয়াম হলের কর্মী, আগত অতিথিবৃন্ধ ও শিল্পীবৃন্ধকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি আগামী দুই বছর সুষ্ঠুভাবে সংগঠন পরিচালনার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন এবং বৃটেনে বসবাসরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল গ্রাজুয়েটদেরকে অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের সদস্য হয়ে প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়ন ও ভাবমূর্তি বাড়াতে একযোগে কাজ করার আহবান জানান।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।