খুলনার ডুমুরিয়া থেকে জাতীয় ফুল শাপলা এখন বিলুপ্ত প্রায়। বর্ষা মৌসুমে এক সময় জেলার আনাচে-কানাচে পড়ে থাকা জলাভূমি, পুকুর-ডোবা, নদী-নালা ও খালবিল এক সময় শাপলায় ভরে থাকত। যা এক সময় গ্রামকে অপরূপ সৌন্দর্যে ভরে রাখত। এই উদ্ভিদ কোন প্রকার পরিচর্যা ছাড়াই গ্রাম গঞ্জের পুকুর, ডোবা, জলাশয়ে জন্মে থাকে।
একাধিক গুণযুক্ত এই শাপলার ডাটা একদিকে যেমন সবজি অন্যদিকে শাপলার মূল ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শাপলা ফুল ফোটার পর কিছুদিনের মধ্যে ফল জন্ম নেয়। আর ওই ফলের ভেতরে থাকে কালো কালো দানা। এটাকে লোকজন বলে ‘চাউলিয়া’। শাপলার চাল রোদে শুকিয়ে মহিলারা ভাজতো ঢ্যাপের খৈ। এরপর বর্ষা চলে গেলে শুকনো মৌসুমে ছেলেমেয়েরা ওই সব ডোবা নালা থেকে কুড়িয়ে আনতো শালুক। আগুনে পুড়ে শালুক খেতে দারুণ স্বাদ।
খুলনা জেলাতেও শাপলা ফুলের ডাটার বেশ চাহিদা রয়েছে। তরকারি হিসেবে সুস্বাদু এই শাপলা। বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন হাট বাজারে এই শাপলা সবজি হিসেবে ব্যাপক বিক্রি হয়। কিন্তু খুলনার ডুমুরিয়া থেকে বিলুপ্ত প্রায় এই শাপলা এখন স্মৃতির আসনে জায়গা নিয়েছে। কারণ হিসেবে দেখা গেছে, আগের সব পুকুর, নদী, খাল ভরাট করে মানুষের নানা মুখী কর্মকান্ড ও কৃষিতে অতিমাত্রায় আগাছা নাশক ওষুধ প্রয়োগের কারণে শাপলার জন্মস্থলগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে।
জেলার একাধিক এলাকা ঘুরে দু/একটি পুকুরে গুটি কয়েক শাপলা ফুটে থাকতে দেখা গেছে। যার মধ্যে এলাকায় একটি পুকুরে কয়কটি শাপলা ফুল রয়েছে। শাপলা মূলত বর্ষার শেষ থেকে বর্ষা গ্রামগঞ্জের পুকুর, ডোবা, জলাশয়গুলোতে জন্মে থাকে। বর্তমানে নিচু জমিগুলোতে বিভিন্ন ধরণের ফসল চাষ হচ্ছে। ফলে শাপলা জন্মানো সুযোগ পাচ্ছে না। আর পুকুর জলাশয়গুলো পরিস্কার করে বাণিজ্যিক ভাবে মাছ চাষ হচ্ছে। সে কারণে পুকুরগুলোতেও শাপলা বংশ বিস্তারের সুযোগ পাচ্ছে না। তাই, আগের মত আর শাপলা দেখা যায় না।
এদিকে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন খুলনা জেলার অনেক এলাকাতেই বাণিজ্যিক ভাবে শাপলা চাষের সুযোগ রয়েছে। এতে করে বেকার সমস্যা সমাধান হতে পারে অনেকাংশেই। রাস্তার ধারের প্রতিত খালগুলো শাপলা উৎপাদনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এতে করে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পাশাপাশি শাপলার সবজি হিসেবে চাহিদা মিটতে পারে।
এব্যাপারে ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন বলেন ডুমুরিয়া উপজেলায় পতিত জমি ও গর্ত জমিতে মাছ চাষ করার কারণে জাতীয় ফুল শাপলা এখন বিলুপ্তির পথে।
খুলনা জেলার অতিরিক্ত উপ পরিচালক উদ্যান মো. নজরুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় মাছের ঘের হওয়ায়, অতিরিক্ত ফসল ও জমি পতিত না থাকার ফলে শাপলা জন্মানো সুযোগ পাচ্ছে না।