বাঙালি মন ও মনন জুড়ে আছে প্রেম, প্রকৃতি ও উৎসব। সেকারণে ষড়ঋতুর বাংলাদেশে ফুল- পাখি -গাণ বড় একটি জায়গা নিয়েই আছে।
প্রকৃতিতে এখন চলছে বর্ষা কাল।আষাঢ়-শ্রাবণ নিয়ে এই বর্ষা ঋতু জুড়ে প্রকৃতি এখন ঝড়-বৃষ্টিময়। চারদিকে ফল-মুলের মৌ- মৌ গন্ধ । সাথে আছে পাখির মুগ্ধকর ডাক।
বর্ষার আগমন যখন চারপাশে, তখন তার সঙ্গী হতে গাছে গাছে দেখা মিলে আবহমান বাংলার চিরচেনা আরেক অতিথির। সে হলো কদম ফুল।
গ্রীষ্মের প্রখরতা কমাতে যখন আম, জামসহ নানা ফলের ঘ্রাণে মুখর চারপাশ, তার পরই আগমন ঘটে বর্ষার সঙ্গী কদম ফুলের।
রবীন্দ্রনাথের গানে, আষাঢ়ের শুরুর দিন থেকেই গুনগুন করে ওঠে বাঙালি মন, ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান। আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান’।কিংবা জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ‘দোলে শিহরে কদম, বিদরে কেয়া, নামিলো দেয়া।’
সাহিত্য ও প্রকৃতি প্রেমীরা বলে থাকেন, বৃষ্টি হচ্ছে আর হাতে কদম নিয়ে ভাবেন না কোন সৃজনশীল বাঙালি তা ভাবা যায় না।
সরু সবুজ পাতার ডালে ডালে গোলাকার মাংসলো পুষ্পাধার আর সরু হলুদ পাপড়ির মুখে সাদা অংশ কদমকে সাজিয়ে রাখে অপরুপভাবে। কদম ফুলের আছে আরও অনেক নাম। ললনাপ্রিয়, সুরভী, কর্ণপূরক, মেঘাগমপ্রিয়, বৃত্তপুষ্প ছাড়াও নীপ মানে পরিচিত এ কদম ফুল।
কদমের একেকটি গাছ ৪০ থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। গাছের পাতা শীতকালে ঝরে যায় । আর কচি সবুজ পাতা নিয়ে আগমন ঘটে বসন্তের।
কদম গাছের ফুল ছাড়া আরও রয়েছে ফল। এ ফলগুলো দেখতে অনেকটা লেবুর মতো। প্রাণ প্রতিবেশ গবেষকরা বলছেন, ভাদ্রমাসে যখন গাছে গাছে ফল থাকে না তখন, পাখিদের খাবারের আকাল চলে। কদম তখন প্রধান খাবার হয়ে ওঠে পাখ-পাখালি, বাদুড় ও কাঠবিড়ালির জন্য। এবং প্রকৃতিতে ওরাই হয় মূলত বীজ ছড়ানোর বাহন।
একটা কদম ফলের ভেতরে প্রায় ৮ হাজার বীজ থাকে। ফুল ছাড়া কদম গাছও বেশ উপকারী। গাছ থেকে যেমন জ্বরের ওষুধ তৈরি করা হয় তেমনি এ গাছ দ্রুত বাড়ে বিধায় একে জ্বালানি কাঠ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।
এটির ফুল ও ফল দিয়ে ইদানিং নানা পদের মুখরোচক খাবারের তালিকা বাড়ছে। অনলাইনে রাধুনী অথবা শেফরাও কদম ফুল- ফলের রেসিপি নিয়ে প্রকাশ করছেন তাদের অনুভূতি।
আর আষাঢ় মাষের শুরু থেকে রমণীর চুলে কদমফুল গুজে অথবা সেজে নিজের আনন্দঅনুভুতির প্রকাশ তো অনেকদিন ধরেই আমাদের বর্ষা ঋতুর ঐতিহ্য বহন করেই আসছে।