নর্থ ইংল্যান্ডের রসেনডেল শহরে বাস করা এম এ মিয়া মৃত্যুবরণ করেছেন । সোমবার (৫ জুলাই) রাত ১১ টার দিকে ব্লাকপুলের একটা হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন । এই শহরে তিনি প্রায় ৫ দশকেরও অধিক সময় থেকে বসবাস করে আসছিলেন। এই শহরে বাংলাদেশী কমিউনিটিকে একটা দৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে তিনি কাজ করে গেছেন বিগত দিনগুলোতে । জনগণের কল্যানে নিবেদিত প্রাণ এই প্রবীণ ব্যক্তিত্ব হাজী লাল মিয়া নামে পরিচিত।
১৯৭১ সনে প্রতিষ্ঠিত রসেনডেল বাংলাদেশ এসোসেয়শেনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়ীত্ব নেয়ার পর থেকে লাল মিয়া আমৃত্যু এই এসোসিয়েশনের মাধ্যমে কমিউনিটির সেবা করে গেছেন । উল্লেখ্য যে, এই সংগঠনটি ১৯৬৩ সনে বাংলাদেশী মানুষের দ্বারা পকিস্থানী ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। তখনও তিনি এ সংগঠনের সাধারন সম্পাদক ছিলেন । নিভৃতচারী, পরোপকারী এই ব্যক্তিত্ব নর্থওয়েষ্টের অনেক মানুষকে ইমিগ্রেশন সহায়তা দিয়ে এদেশে স্থায়ী হতে সহায়তা করেছেন। তিনি ছিলেন রসেনডেল মেলা কমিটির সদস্য, ছিলেন রসেনডেল ফেইথ পার্টনারশীপের সদস্য।
১৯৫৪ সনে মেট্রিক পাশ করার পর তিনি বিশ্বনাথ হাইস্কুলের সার্ভেয়ারের চাকুরী করতেন । সেই থেকেই তিনি মাষ্টার হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেন এবং ১৯৬৩ সানে ব্রিটেনে আসার পর থেকে এই মাষ্টার হিসেবেই তাঁকে মানুষ সম্বোধন করতো।
এম এ মিয়া তাঁর দীর্ঘ যুক্তরাজ্যের জীবন ফ্যক্টরীর কাজ দিয়ে শুরু, বাসের চালক হিসেবেও কাজ করেছেন । পরবর্তীতে রসেনডেলে ভিকটিম সাপোর্ট অফিসার হিসেবে চাকুরী শুরু করেন। ১৯৬৫ সাল থেকে ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস ও হোম অফিসের দোভাষী হিসেব কর্মরত ছিলেন । পাশাপাশি ক্যাটারিং ব্যবসায়ও তিনি খ্যাতি লাভ করেন। অসুস্থতা জনিত কারনে গত দু’বছর থেকে কাজ থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন ।
কমিউনিটি সেবায় অবদানের জন্য তিনি চ্যানেল এস সম্মাননা পেয়েছেন ২০০৫ সালে । ব্রিটেনে বাংলাদেশী কমিউনিটির সংগ্রাম আর সাফল্য নিয়ে তাঁর লেখা ‘মৈশাসী থেকে ল্যাঙ্কাশায়ার’ বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য এক তথ্যবহুল গ্রন্থ । এছাড়াও এম এ মিয়ার বই বেরিয়েছে আরও ৩ টি । এর মাঝে একটা ইংরেজী গ্রন্থও আছে । স্থানীয় ইংরেজী গণমাধ্যম তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন রিপোর্ট-প্রতিবেদন করেছে বিভিন্ন সময় ।
প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে তিনি কাজ করেছেন । প্রবীন ব্যক্তিত্ব হিসেবে গ্রেটার ম্যানচেস্টারের এশিয়ান কমিউনিটিতেও ছিলেন তিনি প্রিয়মুখ ।শিক্ষানুরাগী হিসেবে শিক্ষার মানোন্নয়নে নিজ এলাকায় তাঁর অবদান চোখে পড়ার মত। এলাকায় মসজিদ,মাদ্রাসা,স্কুল ও সড়ক সহ বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কার্যক্রমের সাথে লাল মিয়ার সম্পৃক্ততা এলাকাবাসীর কাছে উচ্চারিত।
সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার মৈশাসী গ্রামে হাজী লাল মিয়া জন্মগ্রহণ করেন । মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর । স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে গছেন তিনি । ‘হাজী লাল মিয়া ফাউন্ডেশন’ এর প্রতিষ্ঠাতা লাল মিয়া।